জুম্ম তরুণদের ভালোবাসা পৌঁছে যাচ্ছে পাহাড়ের অভাবী জনপদের বনফুলদের দ্বারে দ্বারে

সতেজ চাকমা: গত ২৭ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীরা এবং সেই সাথে কিছু উদ্যমী জুম্ম তরুণদের মাধ্যমে করোনায় খাদ্য সংকটে থাকা পাহাড়ের আদিবাসীদের জন্য একটি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই কার্যক্রমটির ফান্ড সংগ্রহের কার্যক্রম যেমন চলমান রয়েছে তেমনি অভাবী মানুষের কাছে এ সহায়তা পৌঁছানোর কার্যক্রমও চলছে সমান তালে। এই জুম্ম তরুণদের পরিচালিত ফেসবুক পেইজ ‘বনফুলের জন্য জুম্ম তারুণ্যের ভালোবাসা”তে আপডেট দেয়া তাঁদের কার্যক্রমে দেখা মিলছে পাহাড়ের বিভিন্ন প্রত্যন্ত্যে সহায়তা পৌঁছানোর ছবি।
এই কার্যক্রমের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জশোয়া দেওয়ান আইপিনিউজকে জানিয়েছেন, এযাবৎ তারা ২০৬ টি পরিবারের কাছে তাঁদের এ সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। এ সহাযতা পেয়ে এই প্রত্যন্তের পাহাড়ী মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্থির হাসি দিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন ঢাবির এই শিক্ষার্থী।
এক প্রশ্নের জবাবে আইপিনিউজকে তিনি আরো বলেন, আমরা এমন পরিবারগুলোকে বেছে নিচ্ছি যারা একেবারেই অসহায় এবং নিতান্তই প্রয়োজনীয়তার তাগিদ অনুভব করছেন তাঁদেরকেই আমরা বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। তাছাড়া এ অপ্রতুল সহায়তা যাতে ‘ডাবল’ না হয় সেজন্য আমরা অন্যান্য সংগঠনসমূহের সাথেও সমন্বয় করছি ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন জায়গায়। এ কার্যক্রমের অন্যতম উদ্যোক্তা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী সঞ্চারী চাকমা আইপিনিউজ এর এই প্রতিবেদককে জানান, আমরা এ যাবৎ যে ২০৬ টি পরিবারকে সহায়তা দিয়েছি তার মধ্যে রাঙ্গামাটির ভেদভেদী এবং রাঙ্গাপানিতে ১৫ টি পরিবার, খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার বাইল্যছড়িতে ১৫ টি, বিলাইছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়ন এবং ফারুয়াতে ২৫ পরিবার, দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নে ৩০ পরিবার, খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপজেলার মৌনতলা গ্রামে ৩০ পরিবার, বান্দরবানের কেওক্রডং এর পাসিং পাড়ায় ২৫ পরিবার, আলীকদমে ২০ পরিবার, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া’তে ১১ পরিবার, আলীকদমের আমতলীতে ২০ পরিবার এবং রাঙ্গামাটির বরকলের রকবিঅ ছড়া’তে ১৫ পরিবারের কাছে এ সহায়তা পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা এ সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে ‘কমিউনিটি ব্যালেন্স’ যেমন করার চেষ্টা করছি তেমনি চেষ্টা করছি ‘মোস্ট ভালনারেবল’ পরিবারগুলোর কাছে এ সহায়তা পৌঁছানোর।
এই কার্যক্রমের অন্যতম উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের শিক্ষার্থী রাতুল তঞ্চঙ্গ্যা আইপিনিউজকে জানান, আমাদের ফান্ডে দেশ বিদেশের বহু মানবতাবাদী মানুষের সহায়তায় ইতিমধ্যেই জমা হয়েছে ৪৬৫৭৪০.১৮ টাকা( চার লক্ষ ছয় শত পয়ষট্টি হাজার সাত শত চল্লিশ দশমিক এক আট টাকা)। ইতিমধ্যে আমরা ২০৬ টি পরিবারের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি এবং বাকী রয়েছে ২৫৭৫৪১.১৮ টাকা (দুই লক্ষ সাতান্ন হাজার পাঁচশত একচল্লিশ দশমিক এক আট টাকা)।ফান্ডে যেটুকু জমা রয়েছে তা দিয়ে আরো ২৫০ এর অধিক পরিবারকে সহায়তা করতে পারবো বলে আশাবাদী আমরা।
এছাড়া শুরু থেকেই এ কার্যক্রমের সাথে সংহতি জানিয়ে ফান্ড সংগ্রহে সহায়তা করছেন ওলোনসাল স্টুডিও, পাহাড়ের বিভিন্ন কন্ঠশিল্পী এবং চিত্র শিল্পীরা। তাছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান আদিবাসী শিক্ষার্থীরাও বিভিন্নভাবে এ কার্যক্রমে সহায়তা দিয়ে আসছেন। চবির সাবেক ও বর্তমান আদিবাসী শিক্ষার্থীরা তাঁদের গ্রুপে বিভিন্ন প্রতিযোগীতার আয়োজন করে এযাবৎ ৮১,১২০ টাকা এবং ওলোনশাল স্টুডিও তাঁদের স্টুডিওতে বিভিন্ন শিল্পীদের গানের মাধ্যমে উক্ত কার্যক্রমে ১৮৯৬৬ টাকা সহযোগীতা পাঠিয়েছেন বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।