মহান নেতা এম এন লারমার ৮৩তম জন্মদিবস: ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি
সুমেধ চাকমা: আগামীকাল (১৫ সেপ্টেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত মহান নেতা, জুম্ম জাতীয় জাগরণের অগ্রদূত, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক সংসদ সদস্য, নিপীড়িত মানুষের বন্ধু বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (যিনি এম এন লারমা নামে সমধিক পরিচিত) ৮৩তম জন্মদিবস।
দিবসটি উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটিসহ ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা, পুরস্কারবিতরণীসহ নানা অনুষ্ঠান।
ঢাকায় তিন সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও পিসিপি’র স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৩:০০ টায় ঢাকার বাংলামটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে ‘বর্তমান প্রজন্মেও ভাবনায় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আন্তনী রেমা। আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাইদ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হরেন্দ্রনাথ সিং, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মানবেন্দ্র দেব, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা।
এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে দিনটি নিজস্ব আয়োজনে পালিত হবে। সকাল ৬:০০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের শহীদ বেদীতে অনুষ্ঠিত হবে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও স্মরণ অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে এমএন লারমার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পমাল্য অর্পণ করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদের নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রাঙ্গামাটি শহরের আশিকা কনফারেন্স হলে বিকাল ৪:০০ টায় এম এন লারমা স্মৃতি গণপাঠাগার, এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম’এর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল শাখার উদ্যোগে এক আলোচনা সভা ও স্মারকগ্রন্থ বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সৌখিন চাকমা এবং বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম’র পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন, জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী লেখক ফোরামের সভাপতি, বিশিষ্ট কবি ও নাট্যকার মৃত্তিকা চাকমা, রাঙ্গামাটি চারুকলা একাডেমির অধ্যক্ষ রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান রীতা চাকমা ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি দীপন কুমার ঘোষ।
পরদিন ১৬ সেপ্টেম্বর, বিকাল ৪:০০ টায় রাঙ্গামাটি শহরের দেবাশীষনগরে এম এন লারমা স্মৃতি গণপাঠাগারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন এম এন লারমা স্মৃতি গণপাঠাগারের অন্যতম সংগঠক সাগর ত্রিপুরা এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম’র পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা ও প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সচেতন নাগরিক কমিটি’র রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সভাপতি অমলেন্দু হাওলাদার, জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের সহকারী লাইব্রেরিয়ান সুনীল ময় চাকমা, বরকল উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শকুন্তলা চাকমা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার সমিতি’র রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন রানা ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী ও আর্য্যদেব লয়াল ক্লাবের উপদেষ্টা ইন্দ্রদত্ত তালুকদার।
তাছাড়া চট্টগ্রামে সকাল ১০:০০ টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যোগে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে অনুষ্ঠিত হবে ‘তারুণ্যের চোখে এম এন লারমা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা।
উল্লেখ্য যে, এম এন লারমার জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট মৌজার স্বনামখ্যাত মহাপুরম বা মাওরুম গ্রামে। ১৯৬০ দশকে কাপ্তাই বাঁধের ফলে সৃষ্ট কাপ্তাই হ্রদের নীচে অন্যান্য বহু গ্রামের সাথে এই গ্রামটিও ডুবে যায়। তাঁর পিতা চিত্ত কিশোর চাকমা ছিলেন একজন গুণী শিক্ষক, সমাজহিতৈষী ও দেশপ্রেমী এবং মাতা সুভাষিণী দেওয়ান ছিলেন ধৈর্য্যশীলা ও ধর্মপ্রাণা এক নারী। তাঁর আপন জ্যেঠা কৃষ্ণ কিশোর চাকমা ছিলেন একজন অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা প্রসারের আন্দোলনে সর্বজনশ্রদ্ধেয় এক ব্যক্তিত্ব। বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রামে আধুনিক শিক্ষার প্রসার, জুম্ম জাতীয় চেতনা বিকাশ ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এম এন লারমাদের পরিবারটির বৈপ্লবিক ও নেতৃত্বের ভূমিকা ছিল অবিসংবাদিত। তিনি ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর ভোর রাতে বিভেদপন্থী গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ চক্রের বিশ্বাসঘাতকতামূলক অতর্কিত এক আক্রমণে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাধীন পানছড়ি উপজেলার খেদারছড়া থুমে আট সহযোদ্ধাসহ নির্মমভাবে নিহত হন।