ভূমিই জীবন, ভূমিই পরিচয়, ভূমিই অস্তিত্বের প্রতীক- সঞ্জীব দ্রং (১ম খন্ড)

ভূমিকা
৯ আগস্ট বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ ঘোষিত ২৫তম আদিবাসী দিবস উদযাপিত হলো। এই বছর আদিবাসী দিবস উদযাপনের রজত জয়ন্তী ছিল। কিন্তু আমরা অত ভালোভাবে দিবসটি উদযাপন করতে পারিনি। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৯৪ সালে রেজুলেশন ৪৯/২১৪ গ্রহণ করে ৯ আগস্টকে আদিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং তা পালনের জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে আহ্বান জানায়। তারপর থেকে গত ২৫ বছরে বৈশ্বিক পর্যায়ে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তম্মধ্যে ২০০০ সালে জাতিসংঘে আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরাম গঠন, ২০০১ সাল থেকে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোটিয়ার নিয়োগ, ২০০৫-২০১৪ সালের সময়কালকে দ্বিতীয় আদিবাসী দশক হিসেবে পালন, ২০০৭ সালে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র গ্রহণ, ২০০৭ সালে আদিবাসী অধিকার সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কর্মব্যবস্থা প্রবর্তন, ২০১৪ সালে সাধারণ পরিষদের বিশ্ব আদিবাসী সম্মেলন আয়োজন এবং এ সম্মেলনে ঐতিহাসিক ‘আউটকাম ডকুমেন্ট’ গ্রহণ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘কাউকে পেছনে ফেলে রাখা নয়’ বা ‘Leave No One Behind’ শ্লোগান নিয়ে যে এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২০৩০ এজেন্ডা জাতিসংঘ গ্রহণ করেছে, সেখানে আদিবাসীদের কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। তাই এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আদিবাসী জনগণ এবং আদিবাসী সংগঠনসমূহের অর্থপূর্ণ অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা জরুরি।
আমরা জানি, আদিবাসীদের জীবনধারা, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার, আদিবাসী জাতিসমূহের ভাষা ও সংস্কৃতি তথা আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকার সম্পর্কে সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, সংখ্যাগরিষ্ঠ অ-আদিবাসী জনগণ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন করে তোলা এবং আদিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করাই হলো আদিবাসী দিবস উদযাপনের মূল লক্ষ্য। আমাদের দেশে এই কাজগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সরকারের আন্তরিকতা অন্যতম ভূমিকার পালন করতে পারে।
জাতিসংঘের মতে, বিশ্বের ৯০টি দেশে প্রায় ৪০ কোটির অধিক আদিবাসী মানুষ বাস করে। এই বছর জাতিসংঘ আদিবাসী দিবসের মূল সুর “Indigenous Languages” ” বা আদিবাসীদের ভাষা। আদিবাসীদের বর্তমান বাস্তবতায় এই মূলসুর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা আদিবাসীদের ব নার মাত্রা মাতৃভাষার বিপন্নতা থেকে শুরু করে ভূমি অধিকার, এমনকি বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরোলেও দেশের ৩০ লক্ষাধিক আদিবাসী জনগণ মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বি ত রয়েছে। সম্পূর্ণ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আদিবাসী ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনধারা ধাবিত হচ্ছে। ক্রমাগতভাবে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এক সময় যেসব অঞ্চলে আদিবাসীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, সেখানে ‘পপুলেশন ট্রান্সফারের’ ফলে আদিবাসী জনগণ নিজভূমিতে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়, উত্তরবঙ্গ, গাজীপুর, মধুপুর বনাঞ্চল, পটুয়াখালী-বরগুনা, খাসিয়া অঞ্চল সর্বত্র আদিবাসীরা তাদের ঐতিহ্যগত ভূমি (Ancestral land) হারিয়েছে। আদিবাসীদের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা তো দূরের কথা, এখন আত্ম-পরিচয়, মাতৃভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও আদিবাসী জনগণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।
এই বছর জাতিসংঘ আদিবাসীদের মাতৃভাষার সংরক্ষণ ও চর্চার উপর গুরুত্বারোপ করেছে। ২০১৯ খ্রীষ্টাব্দকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ‘আদিবাসীদের মাতৃভাষার আন্তর্জাতিক বর্ষ’, International Year of Indigenous Langauges ঘোষণা করেছে এবং সদস্যরাষ্ট্রসমূহকে আদিবাসী ভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। পৃথিবীতে আনুমানিক ৬,৭০০ ভাষার মধ্যে ৪০% ভাষা বিলুপ্ত হওয়ার আশংকার মধ্যে রয়েছে। এই বিপন্ন ভাষাগুলোই আদিবাসীদের ভাষা। ইউনেস্কোর মতে, আরও অনেক আদিবাসী ভাষা হারিয়ে যাওয়ার বা বিপন্নতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের বিপন্ন ভাষাগুলোর তালিকা প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, পৃথিবীতে প্রায় ৫,০০০ থেকে ৬,০০০ জীবিত ভাষা রয়েছে। ২০১৫ সালের এথনোলগ প্রতিবেদনে ৭,১০২ টি জীবিত ভাষার উল্লেখ আছে। মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নৃভাষা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশে ৪১ টি ভাষার সন্ধান পেয়েছে। তারা বলেছে, সমীক্ষায় পাওয়া ভাষাগুলোর মধ্যে ১৪ টি ভাষা বিপন্ন। ভাষাগুলো হলোঃ খাড়িয়া, কোড়া, সৌরা, মুন্ডারি, কোল, মালতো, খুমি, পাংখোয়া, রেংমিটচা, চাক, খিয়াং, লুসাই ও পাত্র। তবে আমরা মনে করি, বাংলাদেশে আদিবাসীদের বিপন্ন ভাষার সংখ্যা আরও বেশি। জাতিসংঘ বলছে, আদিবাসী জনগণকে কখনও কখনও নিজ দেশে ভৌগোলিক কারণে, ভিন্ন ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতির কারণে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ব না ও বিচ্ছিন্নতার মধ্যে বসবাস করতে হয়। অন্যদিকে, এই আদিবাসী মানুষেরাই বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘ আরও বলছে, আদিবাসী ভাষাসমূহ হাজার বছর ধরে মৌলিক স্থানীয় সংস্কৃতি, প্রথা ও মূল্যবোধকে সমৃদ্ধ করেছে। আদিবাসীদের মাতৃভাষা বিশ্ব সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যেকে আরও সমৃদ্ধশালী করেছে। আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি ছাড়া পৃথিবী হতো সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে অতি দরিদ্র স্থান। আদিবাসীদের মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশের মধ্য দিয়ে আদিবাসীদের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে হবে। আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ ও আদিবাসী দিবস উদযাপন জাতিসংঘের আদিবাসী অধিকার ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন ও সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি।
আমাদের জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ আদিবাসীদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। শিক্ষা নীতির ৭ নং ‘উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “জাতি, ধর্ম, গোত্র-নির্বিশেষে আর্থ-সামাজিক শ্রেণী-বৈষম্য ও নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করা, অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও মানুষে মানুষে সহমর্মিতাবোধ গড়ে তোলা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা।” ২৩ নং লক্ষ্যে বলা আছে, “দেশের আদিবাসীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সংস্কৃতি ও ভাষার বিকাশ ঘটানো।” জাতীয় শিক্ষা নীতির “আদিবাসী শিশু” অনুচ্ছেদে লেখা আছে, “আদিবাসী শিশুরা যাতে নিজেদের ভাষায় শিখতে পারে সেই লক্ষ্যে তাদের জন্য আদিবাসী শিক্ষক ও পাঠ্য পুস্তকের ব্যবস্থা করা হবে। এই কাজে, বিশেষ করে পাঠ্য পুস্তক প্রণয়নে, আদিবাসী সমাজকে সম্পৃক্ত করা হবে। আদিবাসী প্রান্তিক শিশুদের জন্য বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।” আদিবাসীদের শিক্ষা বিস্তারে শিক্ষা নীতির যথাযথ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। আদিবাসী অঞ্চলের স্কুলগুলোতে অবিলম্বে বিশেষ ব্যবস্থায় আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ করা দরকার।
এক.
বাংলাদেশের সংবিধানে এখনো আদিবাসী জাতিসমূহের জাতিসত্তা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভূমি অধিকারসহ মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি নেই। আদিবাসী সংগঠনসমূহ বার বার বলার চেষ্টা করেছে, আদিবাসী জনগণের আত্ম-পরিচয়ের অধিকার রয়েছে। এটি আদিবাসীদের মানবাধিকার। আন্তর্জাতিকভাবেও আদিবাসীদের আত্ম-পরিচয়ের অধিকার স্বীকৃত। তাই সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসী জাতিসমূহের আশা-আকাংখা ও দাবির ভিত্তিতে আদিবাসীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভূমি অধিকারসহ মৌলিক অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দুই.
এই কবিতায় বোঝা যাবে কী হওয়ার কথা ছিল আর কোথায় কী হয়ে গেছে আমাদের জীবনে, বিশেষ করে সাধারণ আদিবাসী প্রান্তিক মানুষের জীবনে। হুমায়ূন আজাদের “কথা দিয়েছিলাম তোমাকে” কবিতা থেকে কয়েকটি লাইন পড়ছি,
“কথা দিয়েছিলাম তোমাকে
রেখে যাব পুষ্ট ধান, মাখনের মত পলিমাটি
পূর্ণ চাঁদ, ভাটিয়ালী গান
উড্ডীন উজ্জ্বল মেঘ, দুধের ওলান
মধুর চাকের মত গ্রাম
জলের অনন্ত বেগ, রুই মাছ
পথ পাশে সাদা ফুল, অবনত গান
আমের হলদে বন, জলপদ্ম, দোয়েল মৌমাছি।
তোমার জন্য রেখে যাচ্ছি নষ্ট ধানের ভেতরে পোঁজ
টায়ারের পোড়া গন্ধ, পংকিল তরমুজ
দুঃস্বপ্ন আক্রান্ত রাত,.. বিবস্ত্র ভিখারী, শুকনো নদী, ..বিষ, আবর্জনা..
নোংরা বস্তি, ..বর্বর চিৎকার, ভোট, রাষ্ট্রধর্ম, ..মধ্য যুগ,.. মৌলবাদ
আততায়ীর উল্লাস, … তোমার জন্য রেখে যাচ্ছি কালরাত্রি, … অসংখ্য জল্লাদ।” ——
খুব বুঝতে পারি, এই রাষ্ট্র, রাষ্ট্রযন্ত্র স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছরের কাছাকাছি সময়ে এসেও আদিবাসী মানুষের, প্রান্তিক দরিদ্র বাঙালির, চা বাগানের অগণিত মানুষের, দলিত ও গ্রামীন কৃষকের, হাওর ও চরাঞ্চলের মানুষের ‘আপনভূমিতে’ এই রাষ্ট্র পরিণত হয়নি। এখানে আকাশছুঁয়া উন্নয়নের আস্ফালনের পাশাপাশি রয়েছেপ্রবল বৈষম্যের করুণ ও নীরব হাহাকার আর আর্তনাদ। যা হবার কথা ছিল সবার জীবনে, তা হয়নি। তবে কারও কারও জীবনে হয়েছে। বাকীদের জীবনে এমন হওয়ার লক্ষণ বা চিহ্ন দেখা যায় না। যে প্রবণতা চলছে, তাতে গত বছর এই আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে যে প্রবন্ধ আমি পড়েছিলাম, তার খুব একটা রকমফের হয়নি। তখন প্রশ্ন রেখেছিলাম,
“স্বাধীনতার ৪৭ বছরে আমরা আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আদিবাসীসহ প্রান্তিক মানুষের ভূমি অধিকার ও মানবাধিকারের প্রশ্ন নিয়ে? সাধারণ মানুষের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আজ কী অবস্থা? ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জীবনের অনিশ্চয়তা আজ কেমন? নাগরিক হিসেবে তাদের মানবাধিকার, মর্যাদা ও সম্মান কোন্ স্তরে? কবি শামসুর রাহমান তাঁর ‘কথা ছিল’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘কথা ছিল, আমার আনন্দ-গানে ভরিয়ে তুলবো অলিগলি, জনপথ, অবাধ প্রান্তর/আমার ভরাট গলা ছোঁবে দিগন্তকে/ কথা ছিল, পায়রা উড়িয়ে দেবো ভোরবেলা মেঘের কিনারে/কথা ছিল উৎসবের কবিতা নিরুদ্বেগ লিখে মুছে ফেলবো সকল দুঃখ শোক/ কথা ছিল প্রত্যেককে দেখাবো অনিন্দ্য সূর্যোদয় মুক্ত মনে/ অথচ এখন, এ মুহুর্তে সূর্যাস্তের ছোপলাগা কবরের দিকে অসহায় চেয়ে থাকি/বন্দীদশা এল বুঝি পুনরায়।’ কেন আজও আদিবাসী মানুষ নিজবাসভূমে পরবাসীর জীবনযাপনে বাধ্য হয়? কেন পাহাড়ের মানুষ বলে, লাইফ ইজ স্টিল নট আওয়ার্স। আদিবাসী পরিচয়ের অস্বীকৃতি, অপপ্রচার, ভুল ব্যাখ্যা, নৃ-গোষ্ঠী আখ্যা ও অপমান দেখে আজ দুঃখের সঙ্গে মনে হয় আদিবাসী জীবনে ঘোর বন্দী দশা চলছে এখনও।
তিন.
বৈশ্বিক পর্যায়ে আদিবাসীদের একটি ঘোষণাপত্র আছে। সেই লেটিসিয়া ঘোষণাপত্রের কয়েকটি লাইনের উদ্ধৃতি দিচ্ছি,
All peoples are descendants of the forest. When the forest dies, we die. We are given responsibility to maintain balance within the natural world. When any part is destroyed, all balance is cast into chaos. When the last tree is gone, and the last river is dead, then people will learn that we cannot eat gold and silver. To nurture the land is our obligation to our ancestors, who passed this to us for future generations.
আমি এই কথাগুলোর বাংলা রূপান্তরের চেষ্টা করেছি এভাবে, ‘সকল মানুষের আগমন ঘটেছে বন থেকে, ভূমি থেকে। বন মরে গেলে মানুষ মরে যায়। আমাদের উপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে বিশ্বের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার, একে মমতা-ভালোবাসা দিয়ে যতœ করার। যখন এ প্রকৃতির কোনো একটি অংশকে ধ্বংস করা হয়, তখন সকল ভারসাম্য লন্ডভন্ড হয়ে যায়। যখন বনের শেষ বৃক্ষ কেটে ফেলা হবে, যখন শেষ নদীটি শুকিয়ে যাবে, তখন মানুষ শিখবে যে সোনা ও রূপা খেয়ে জীবন বাঁচে না। সঠিক ও নির্লোভভাবে প্রকৃতিকে, বন ও ভূমিকে ব্যবহার করার ভার আমরা পেয়েছি পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে, যারা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একে রক্ষার ভার আমাদের দিয়ে গেছেন।’ অস্থির পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মানুষের অপরিণামদর্শী ও সীমাহীন লোভ-নিষ্ঠুরতার কাছে আদিবাসী সমাজ আজ বিপন্ন, অসহায়। প্রকৃত বিচারে ধরিত্রীর সকল প্রাণীই আজ বিপন্ন।
চলবে……………।।
সঞ্জীব দ্রং
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
এএলআরডিসহ ১৫টি সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত আলোচনাসভায়
সিরডাপ, ঢাকা, ২৭ আগস্ট ২০১৯
মূল প্রবন্ধ