বাহা উৎসবে মেতে উঠলো গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল জনগোষ্ঠী
সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, রাজশাহী: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ নিজস্ব ঐতিহ্যে নাচ-গানে বরণ করলেন ঋতুরাজ বসন্তকে। করোনার বাঁধা পেরিয়ে আবারও বাহা পরবে মাতলো গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লী। বুধবার ২৩ মার্চ ২০২২ তারিখ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ও অবলম্বন এর আয়োজনে উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের তল্লাপাড়া গ্রামে সেভেন্থ ডে এ্যাডভেন্টিস্ট প্রি সেমিনারী স্কুল প্রাঙ্গণে বাহা পরব বা বসন্ত উৎসব উদ্্যাপন করলো সাঁওতালরা।
নাচে-গানে আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে আদিবাসী সাঁওতালরা তাদের নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতিতে বাহা পরবের মাধ্যমে বরণ করেন ঋতুরাজ বসন্তকে। দিনভর ধর্মীয় পুজা-অর্চনা ও সাঁওতাল সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক সাঁওতাল নারী-পুরুষ-কিশোরী অংশ নেন। এ দিন সাঁওতাল-বাঙালিদের আগমনে মিলন মেলায় পরিণত হয় গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লী। পরে স্থানীয় আদিবাসী শিল্পীদের পাশাপাশি আমন্ত্রিত সাঁওতাল সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে। এতে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর ৬টি ইউনিয়নের ৬টি সংস্কৃতিক দল অংশগ্রহণ করে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহবায়ক এ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাস্কে, নারী ইউপি সদস্য মজিদা বেগম, মাইকেল হেমব্রম, গোলাম রব্বানী মুসা, জাহাঙ্গীর কবীর তনু প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন বাহা পরব উদ্্যাপন কমিটি আহবায়ক শামলী কিস্কু।
সাঁওতালরা আমাদের এ’দেশেরই নাগরিক, তাদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য এ’দেশের সংস্কৃতিরই অংশ উল্লেখ করে আলোচকরা বলেন, সাঁওতালদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় রাষ্ট্রীয় ও সামজিক উদ্যোগ গ্রহণ, সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষাদান ও কালচারাল একাডেমি স্থাপন করার দাবি জানান।
বাহা পরব উদযাপন কমিটি আহবায়ক শামলী কিস্কু বলেন, প্রাণ-প্রকৃতিকে ভালোবেসে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী বাহা উৎসব পালন করে। এই বাহা উৎসবের পুজা পার্বন করলে আমাদের সমাজ ও পরিবারের উন্নয়ন হবে। বাহা পুজা না করা পর্যন্ত সাঁওতাল নারীরা বাহা ফুল অর্থাৎ শাল ফুল ছিড়েও না মাথায়ও পরে না। ভবিষ্যতে যাতে এই ঐতিহ্যবাহী বাহা পরব হারিয়ে না যায়, সেজন্য নতুন প্রজন্মকে জানাতেই এই উৎসব আয়োজন।
উল্লেখ্য, আদিবাসী সাঁওতালদের অন্যতম একটি প্রধান পার্বণ হচ্ছে ‘বাহা উৎসব’ বা বাহা পরব। বাহা অর্থ ফুল। তাই বাংলায় বাহা পরবকে ‘ফুল উৎসব’ বলা হয়। মূলত: নববর্ষ হিসেবে ফাল্গুণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করে সমতলে বসবাসকারী আদিবাসী-সাঁওতালরা। উত্তরাঞ্চলে সমতলে বসবাসকারী আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ওঁড়াও, মুন্ডা, মালো, মাহাতো, মালপাহাড়ী, রাজওয়ারসীসহ মোট ৩৮ টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এই বাহা উৎসব পালন করে থাকে।