অন্যান্য

ফিরে দেখা ইতিহাস: লোগাং গণহত্যা

ঘটনা: ১৯৯২ সালের ১০ এপ্রিল। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলাধীন লোগাং ইউনিয়ন। উল্লেখ থাকে যে তৎকালীন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা লোগাং হত্যার ঘটনাস্থল পরির্শনে যান।

ঘটনার সূত্রপাত: ঘটনার প্রত্যক্ষ শিকার একজন জুম্ম নারী জানান, “ সেইদিন আমরা তিনজন মহিলা পার্শ্ববর্তী মাঠে গরু চড়াচ্ছিলাম। এসময়ে দুইজন সেটেলার বাঙালি এসে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমার চিৎকার শুনে আমার স্বামী জঙ্গলে থেকে কাজ ফেলে ছুটে আসে এবং আমাকে রক্ষার চেষ্টা করে। এ নিয়ে আমার স্বামীর সাথে সেটেলার বাঙালিদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে সেটেলার বাঙালিরা আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করে এবং তারাও (রক্তাক্ত অবস্থায় বিডিআর বর্তমানে বিজিবি) ক্যাম্পে ছুটে যায়। পরে জুম্মদের গুচ্ছ গ্রামে আক্রমণ করে ও হত্যাকাণ্ড চালায়। তিন ঘন্টার তাণ্ডবতায় পুড়ে ছাই হয় পাঁচশতাধিক জুম্মদের ঘরবাড়ি। বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু, নরনারীর আধাপোড়া মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় পোড়া বসতভিটায়।

গণহত্যা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী: ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রুপসেন কার্বারীর মেয়ে জ্যোৎস্না দেবী চাকমা জানান, “ ঘটনার সময় আমরা অনেকে জঙ্গলে আশ্রয় গ্রহণ করি। ঘটনার শেষ পর্যায়ে একজন সশস্ত্র ভিডিপি ও একজন সেটেলার বাঙালি আমাদেরকে খুঁজে বের করে। ভিডিপিটি আমার বাবাকে গুলি করে আর সেটেলার বাঙালিটি দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। এরপর সেটেলার বাঙালিটি আমাকে ধর্ষণ করতে উদ্ধত্য হলে আমার মা তাকে বাধা দেয়। এতে সে আমার মাকেও দা দিয়ে কোপ মারতে থাকে, সেই সুযোগে আমি পালিয়ে আসি।”

গণহত্যার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী প্রকাশ চাকমা বলেন, “ সশস্ত্র ভিডিপি ও সেটেলার বাঙালিরা আক্রমণ করলে আমি পালাতে সক্ষম হই। কিন্তু আমার বৃদ্ধা মাকে মুগল্যা ভিডিপি প্রথমে ডান হাতের বাহুতে দা দিয়ে কোপ মারে। এরপর জনৈক বিডিআর মাকে পিঠে গুলি করে হত্যা করে। পরদিন আমি আমার মা’র লাশটি ফেরত পাওয়ার জন্য আবেদন করি কিন্তু সনাক্তকৃত কোন লাশ আত্মীয় স্বজনকে ফেরত দেয়া হয়নি। আমি আমার মায়ের লাশ ফেরত পাইনি।”

লোগাং গণহত্যার পর জুম্মদের ভারতে আশ্রয় গ্রহণ: লোগাং গণহত্যার পর জুম্মরা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে ভারত ত্রিপুরা রাজ্যের তাকুমবাড়ী, লেবাছড়া, করবুক, শিলাছড়ি, পঞ্চরাম এলাকায় ৫৭০ পরিবারের ১৮৪১ জন জুম্ম নর-নারী আশ্রয় নেয়।

তথ্যসূত্র: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অনিয়মিত মুখপত্র, জুম্ম সংবাদ বুলেটিন, ৩১ মে ১৯৯২

আরও কিছু তথ্য ভিডিও ঃsurvival international

Back to top button