পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে নৈরাজ্য বন্ধের আহ্বান বিশিষ্টজনদের
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): সাম্প্রতিক সময়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে নৈরাজ্য বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ২৪ বিশিষ্টজন। আজ এক যৌথ বিবৃতিতে নাগরিকরা এই আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে বলা হয় যে, সম্প্রতি মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও কারিগরী স্তরের পাবলিক পরীক্ষার সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক, নারীর প্রতি অবমাননাকর এবং একজন লেখকের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত ও অবমাননাকর প্রশ্ন সংযোজনের যে ঘটনা ঘটেছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনভিপ্রেত; কোনো অবস্থাতেই এসব মেনে নেওয়া যায়না। এসব বিষয় আমাদেরকে ক্ষুব্ধ করেছে।
বিবৃতিদাতাদের অন্যতম সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ স্বাক্ষরিত উক্ত বিবৃতিতে বলা হয় যে, মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পরও ৩০ লক্ষ জীবনের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে একটি সার্বজনীন, অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। হেফাজতের ১৩ টি দাবি মেনে নিয়ে এই শিক্ষাকে আরও পশ্চাৎপদ ও প্রতিক্রিয়াাশীল করা হয়েছে। দেশের শিশুদের একটি বিরাট অংশ শিক্ষা গ্রহণ করছে সরকার নিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসা ও সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা কওমি মাদ্রাসায়।
অনেক বিতর্কের মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তনের পরও শিক্ষকরা নিজেদেরকে এই পদ্ধতি উপযোগী গড়ে তুলতে পেরেছেন কিনা- তা নিয়ে এখনো প্রশ্ন আছে দাবী করে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষক- শিক্ষার্থী সকলকে সৃজনশীল হয়ে উঠতে হবে। অতি সম্প্রতি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, নারীর প্রতি অবমাননাকর, ব্যক্তির প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রশ্নপত্র শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্প্রদাায়ক ও আধুনিকতাবিরোধী প্রবণতার চিত্র উঠে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুধু প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ও মডারেশন বোর্ডের সদস্যদের যোগ্যতা ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করার পাশাপাশি সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবার সময়ও এসেছে। পাশাপাশি মৌলবাদী একটি গোষ্ঠী বিজ্ঞান শিক্ষার পঠন-পাঠন থেকে চার্লস ডারউনের যুগান্তকারী বিবর্তনবাদ তত্ত¦ বাদ দেওয়ার যে দাবি তুলেছেন, তাও আমাদের বিচলিত করছে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষা ও মুক্ত চিন্তার প্রসারকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্র ও সমাজকে অন্ধকার, সাম্প্রদায়িকতা আর কূপমন্ডুকতায় ঠেলে দেবে।
বিবৃতি প্রদানকারীরা হলেন ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট সুলতানা কামাল, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য রামেন্দু মজুমদার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী, ঢাবি’র প্রাক্তন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী,
বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস.এম.এ সবুর, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, ঢাবি অধ্যাপক এম. এম. আকাশ, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি পারভেজ হাসেম, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ, সমাজকর্মী এম এ সামাদ, গবেষক ও সংস্কৃতি কর্মী ড. সেলু বাসিত, ঢাবি সিনেট সদস্য রনজিৎ কুমার সাহা, সংস্কৃতি কর্মী এ কে আজাদ, সংস্কৃতি কর্মী অলক দাস গুপ্ত, শ্রমিক সংগঠকআব্দুর রাজ্জাক, মানবাধিকার কর্মী আবদুল আলীম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) সভাপতি গৌতম শীল প্রমুখ।