জাতীয়

দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় গৌতম বুদ্ধকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক; ২৬ এপ্রিল;বুধবারঃ গত ২৪ এপ্রিল ২০১৭ দৈনিক জনকন্ঠে ফিরোজ মান্না নামের এক সাংবাদিকের এক রিপোর্টের প্রতিবাদে আজ ২৬ এপ্রিল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
দৈনিক জনকণ্ঠের ফিরোজ মান্না-এর ২৪ এপ্রিল ২০১৭ তারিখের “পার্বত্য এলাকায় নতুন অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টায় ‘ভাবনা কেন্দ্র” নামক ফিচার ভান্তেদের নামে মিথ্যা-বানোয়াট ও মুখরোচক তথ্য প্রকাশ করে ধর্মাবলম্বীদের একদিকে নেতিবাচক ভাবে উপস্থাপন আর অন্যদিকে সকল ভান্তে ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মানহানিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা ছাড়াও রিপোর্টে বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক মহামানব গৌতম বুদ্ধকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করার প্রতিবাদে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ছাত্র সংসদের সভাপতি শোভন বড়ুয়ার সভাপতিত্বে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পালি এন্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রকট চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি এন্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড:সুকোমল বড়ুয়া, প্রভাষক উচিন লয়েন রাখাইন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুলভ চাকমা, পিজি হাসপাতালের চিকিৎসক স্নেহাশীষ বড়ুয়া, বৌদ্ধ ছাত্র সংসদের অরুপ বড়ুয়া, ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ভিক্ষু সুনন্দাপ্রিয় প্রমুখ।
অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া তার বক্তব্যে বলেন, এদেশের শান্তিকামী বৌদ্ধ সমাজ অহিংসায় বিশ্বাসী। দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত ফিরোজ মান্নার করা সংবাদটি ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক একটি সংবাদ। এই সংবাদ দেশের আপামর বৌদ্ধ সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।”
প্রভাষক উচিন লয়েন বলেন, “দেশের বৌদ্ধ সমাজকে জড়িয়ে এধরনের উস্কানিমূলক সংবাদ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হবে তা আমরা কখনোই মেনে নিতে পারি না।”
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার সম্পাদক সুলভ চাকমা মানবন্ধনে সংহতি জানিয়ে বলেন- “প্রকাশিত সংবাদটির পরতে পরতে দেশের বৌদ্ধ সমাজকে জড়িয়ে এধরনের ভিত্তিহীন নানান অপপ্রচার চালানো হয়েছে যা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্টের অসাম্প্রদায়িক চরিত্রকে খুব সহজেই ক্ষুন্ন করতে পারে। এ ধরনের ভিত্তিহীন, ধর্মীয় উস্কানিমূলক সংবাদ পরিবেশন দেশের আপামর বৌদ্ধ সমাজকে যারপরণাই ক্ষুব্ধ করেছে এবং তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। আমরা অনতিবিলম্বে এই সংবাদ প্রত্যাহার এবং দেশের শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রদানের জন্য দোষী ব্যক্তিদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনার জন্য জোর দাবী জানাই।”
ঢাকা আর্ন্তজাতিক বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ সুনন্দাপ্রিয় ভিক্ষু বলেন,- গত ২৪শে এপ্রিল,২০১৭ ইং বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় সাংবাদিক ফিরোজ মান্না-র করা একটি ফিচার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত সংবাদের এক জায়গায় উল্লেখ করা হয় যে, “৯ দ্বারা তাদের দেবতা সন্ত্রাসী গৌতম বুদ্ধের গুণ, ৬ দ্বারা সন্ত্রাসী গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা, ৯ দ্বারা বুদ্ধিষ্ট সংঘ এর গুণ বুঝিয়েছে । ইহা নাকি বুদ্ধের ত্রিরত্ন। ইহা বুদ্ধ ধর্মের চাকার থিম ও বটে”। এতে করে বিশ্বব্যাপী অহিংস বাণী ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারক গৌতম বুদ্ধকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে যা পুরোদস্তুর ধর্মীয় অবমাননার একটি দৃষ্টান্ত এবং দেশের আপামর শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার সামিল। তাছাড়াও নিরীহ ছাত্র রোমেল চাকমা হত্যাকে ভিন্ন হাতে প্রভাবিত করতে এ জাতীয় সংবাদ প্রচারের অবতারণা।’
ডা: স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, – “বস্তুত রাঙ্গামাটির রাজবনবিহার এবং বান্দরবানের স্বর্ণমন্দির দেশের সুপ্রসিদ্ধ বৌদ্ধ তীর্থ যেখানে ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধরা ধর্মীয় পূজা-অর্চনা-মানস অনুষ্ঠান সহ প্রভৃতি পালনীয় ধর্মীয় কৃষ্টি ও আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে থাকে। কিন্তু আজ দেশের বৌদ্ধ তীর্থগুলিকে নিয়ে এধরনের ভিত্তিহীন সংবাদ দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে একেবারেই অনভিপ্রেত।”
মানবন্ধনে বলা হয় বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারক গৌতম বুদ্ধ। গৌতম বুদ্ধের অহিংসার বাণী সারাবিশ্বে সুবিদিত। ৭১এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম এই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশেও লাখ লাখ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ঐতিহাসিককাল থেকেই বসবাস করছেন। দেশের বিভিন্নপ্রান্তে অাজো সাক্ষ্য হয়ে আছে মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর প্রভৃতি বৌদ্ধ নিদর্শন। এদেশের বৌদ্ধরা দেশের অপরাপর নাগরিকদের মতোনই দেশগঠনে সর্বত্র ভূমিকা রেখে চলেছেন। কিন্তু গৌতম বুদ্ধকে “সন্ত্রাসী” হিসেবে আখ্যায়িত করা এবং দেশের বৌদ্ধ সমাজকে জড়িয়ে ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যমূলক ও বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে বলে বৌদ্ধ সমাজ মনে করে। এধরণের কাল্পনিক, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ দেশের সার্বিক পরিস্থিতিকে যে কোন সময় অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
এমতাবস্থায় দেশের আপামর বৌদ্ধ সমাজের পক্ষ থেকে মানবন্ধনে দাবী জানানো হয়-
১. গৌতম বুদ্ধ ও দেশের বৌদ্ধ সমাজকে জড়িয়ে জনকন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত ভিত্তিহীন ও ধর্মীয় অবমাননামূলক সংবাদ অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং দোষীদের যথাযথ শাস্তি প্রদান করতে হবে।
২. ধর্মীয় অবমাননামূলক সংবাদ পরিবেশন করা দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদককে দেশের আপামর বৌদ্ধসমাজ তথা দেশবাসীর নিকট নি:শর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
৩. দেশের বৌদ্ধ স্থাপনা ও বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুদের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

Back to top button