ঢাকায় বাম জোটের বিক্ষোভে পুলিশের বাধা

ব্যাংক ও আর্থিক খাতে খেলাপীঋণের রিসিডিউলিং-অবলোপন এর সরকারি নীতি ঋণখেলাপী ব্যাংক ডাকাতদের আরোও বেপরোয়া করবে এবং আরোও উৎসাহিত করবে, এটা ব্যাংক ডাকাতদের শাস্তির পরিবর্তে পুরষ্কার দেয়া হবে। আজ ১২ মে সকাল ১১.৩০ অর্থ মন্ত্রণালয় অভিমুখে মিছিলের পূর্বে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতৃবৃন্দ এ কথা বলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের পূর্বে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোট এর সমন্বয়ক, বাসদ নেতা কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ। সমবাশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাম জোট নেতা সিপিবি সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোঃশাহ আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশারফ হোসেন নান্নু, বাসদ (মার্কসাবাী) নেতা কমরেড মানস নন্দী, গণ সংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভূইয়া, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক কমরেড হামিদুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির নেতা লিয়াকত আলী। সভা পরিচালনা করেন বাম গণতান্ত্রিক জোট ঢাকা মহানগর শাখার সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান লিপন।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, বর্তমান সরকার আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে নজির বিহীন ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে একের পর এক যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার পথে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে গত ১০ বৎসরে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যার মধ্যে গত বছরে অবলোপিত টাকার পরিমাণ ৪২ হাজার কোটি টাকা। ঋণখেলাপী’র সংজ্ঞায় পরিবর্তন করে ‘যৌক্তিক ঋণখেলাপী’ এর তথাকথিত যুক্তি দাঁড় করিয়ে সরকার রিসিডিউলিং ও অবলোপনের মাধ্যমে ব্যাংক ডাকাতদের রক্ষার চেষ্টা করছে। যা ঋণখেলাপীদেরকে আরোও বেপরোয়া করেছে তা ব্যাংক খাতের দিকে তাকালেই স্পষ্ট বোঝা যায়। ফারমার্স ব্যাংকের মহিউদ্দিন খান আলমগীর, বাবুল চিশতী, বেসিক ব্যাংকের আব্দুল হাই বাচ্ছু, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, ক্রিসেন্ট গ্রুপ, হলমার্ক গ্রুপসহ দায়িদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়নি বলে এখাতে নৈরাজ্য বাড়ছে।
সরকার ঋণখেলাপীদের কাছ থেকে জনগণের আমানতের টাকা উদ্ধারে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের পুরষ্কার করা হচ্ছে। সরকার ১/২ হাজার টাকার জন্য কৃষককে সার্টিফিকেট মামলা দিয়ে গলায় গামছা বাধছে, জেল খানায় পাঠাচ্ছে। কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা না নিয়ে উল্টো প্রনোদোনা দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকার ঋণখেলাপী ও ব্যাংক ডাকাতদের পাহাড়াদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ খেলাপীঋণ অবলোপন ও রিসিডিউলিং এর মাধ্যমে ঋণখেলাপীদের ঋণ মওকুফের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ খেলাপীঋণ উদ্ধার করে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কৃষি খাতে বরাদ্দ করা এবং ঋণখেলাপী ব্যাংক ডাকাতদের গ্রেপ্তার, বিচার ও সম্পদ বাজেয়াপ্তের দাবি করেন। একই সাথে আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা-অনিয়ম দূর করতে ব্যর্থ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, আগামী বাজেটে ব্যাংক ও আর্থিস খাত রক্ষার দিকনির্দেশনা না থাকলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও প্রদান করেন।
বক্তাগণ দেশবাসীকে বর্তমান সরকার ও তার আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সমাবেশ শেষে অর্থ মন্ত্রণালয় অভিমুখে বাম গণতান্ত্রিক জোটের এক বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাব-তোপখানা রোড-পল্টন মোড়-ম্ক্তুাঙ্গন হয়ে নূর হোসেন স্কয়ার দিয়ে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ মিছিলে বাঁধা প্রদান করে। পুলিশি বাঁধা উপেক্ষা করেই সচিবালয়ের মুখে পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যেই বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করেন।