জাতীয়

আশি ছুঁয়ে যাওয়া বরেণ্য রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য সংবর্ধিত হলেন বর্ণাঢ্য নাগরিক আয়োজনে

সতেজ চাকমা: পঙ্কজদা এবং আমরা এই বাংলাদেশের প্রান্তিক মেহনতী মানুষ সহ নিপীড়িত আদিবাসী মানুষের হাহাকার কষ্টকে প্রত্যক্ষ করে তাঁদের জীবনকে পরিবর্তনের স্বপ্নে বিভিন্ন জনপদে একসাথে ছুটে চলেছিলাম।কত খাসিয়া জনপদ, লংগদু, লোগাং থেকে শুরু করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বনের গারো জনপদে ছুটে বেড়িয়েছি একসাথে কেবলমাত্র এই দু:খী বাংলাদেশকে সবার জন্য বাসযোগ্য একটি রাষ্ট্র গড়বার স্বপ্নকে পুঁজি করে। পাহাড়ী তথা আদিবাসী মানুষ তাদের স্বকীয় জীবন ও সংস্কৃতি নিয়ে বিকশিত হবে এই স্বপ্ন দেখেন পঙ্কজদা। এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করছিলেন আদিবাসী ফোরামের সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের আশিতম জন্মদিন উৎযাপন উপলক্ষ্যে রাজধানীর পাবলিক লাইব্রেরীতে শওকত ওসমান মিলনায়তনে নাগরিক সংবর্ধনা কমিটি আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা সভায় আদিবাসী মানুষদের প্রিয় এই প্রবীণ রাজনীতিবিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এসব অনুভূতি ব্যক্ত করেন আদিবাসীদের এই নেতা ।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য এর ৮০ তম জন্মদিন উৎযাপন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বরেণ্য শিক্ষাবিদ এবং জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সংবর্ধনা সভায় প্রথমে এই বরেণ্য রাজনীতিবিদকে উৎসর্গ করে এবং তার জন্য শুভকামনা জানিয়ে প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়।তারপর তাঁকে উৎসর্গ করে নৃত্য ও গান পরিবেশন করেন যথাক্রমে স্পন্দনের নৃত্যশিল্পীরা এবং সমবেত গানের দল – সংস্কৃতি মঞ্চ।

নাগরিক সংবর্ধনার শুরুতেই পঙ্কজ ভট্টাচার্যের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের উপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদশিত হয় এবং মানপত্র পাঠ করেন বরেণ্য নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।এছাড়া বক্তব্য রাখেন বরেণ্য বুদ্ধিজীবি ড. অজয় রায়। তিনি বলেন, পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে আমি চিনতাম ষাট দশকের প্রতিবাদি তুখোর ছাত্রনেতা হিসাবে। সাম্প্রদায়িকতার সীমারেখা অতিক্রম করে যারা রাজনীতিটাকে অসাম্প্রদায়িক আদর্শে পরিচালিত করেছেন তাদের মধ্যে পঙ্কজ ভট্টাচার্য একজন বলেও উল্লেখ করেন এই শিক্ষাবিদ।

ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের পক্ষে পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে দূর থেকে যাদেরকে দেখে আমাদের মনে শ্রদ্ধা জন্মায় তাঁদের মধ্যে পঙ্কজ ভট্টাচার্য অন্যতম। তাঁর জীবন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে বলে উল্লেখ করে এই প্রবীন রাজনীতিবিদের সুস্বাস্থ, নিরোগ ও দীর্ঘ জীবন কামনা করেন সরকারের এই প্রতিমন্ত্রী।

এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়েশা খানম, বাংলাদেশ জাসদ এর সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া, পঙ্কজ ভট্টাচার্যের দীর্ঘদিনের সহধর্মিনী নারী নেত্রী রাখী দাশ পুরকায়স্থ, সাম্যবাদী দলের সাধারন সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া, ওয়াকার্স পার্টির বিমল বিশ্বাস সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া উপরোক্ত সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও তাঁকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান গণফোরাম, আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ পথ নাটক পরিষদ, বাংলাদেশ একাডেমী, সাংস্কৃতিক সংগঠন বহ্নিশিখা ও উদীচি শিল্পীগোষ্ঠী, ছাত্র ইউনিয়ন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ সহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সভাপতির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান পঙ্কজ ভট্টাচার্যের নিরোগ ও সুস্বাস্থ কামনা করেন। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার পথে তিনি এই বরেণ্য রাজনীতিবিদের নির্মোহ ও নির্লোভ জীবন যাপনের দিকটি সবার অনুকরণীয় বলে তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য পঙ্কজ ভট্টাচার্য চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া গ্রামে ১৯৩৯ সালের ৬ আগষ্ট শিক্ষক প্রফুল্ল কুমার ভট্টাচার্য ও তাঁর সহধর্মিনী মনি কুন্তলা দেবীর পুত্র হিসাবে জন্ম নেন। গত ৬ আগষ্ট ২০১৯ ইং তাঁর আশি বছর পূর্ণ হয়। ’৬০ এর দশকের আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহন এবং ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে থেকে অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়ে অবদান রেখে যাওয়া নির্মোহ রাজনীতিবিদদের মধ্যে পঙ্কজ ভট্টাচার্য এ যুগের অনুকরণীয় আদর্শ।

Back to top button