‘অক্টোবর বিপ্লবের চেতনা ছাড়া মানুষের মুক্তি সম্ভব না’
‘অক্টোবর বিপ্লবের চেতনা ছাড়া পৃথিবীর কোথাও মানুষের মুক্তি সম্ভব না’, বলে মনে করে দেশের বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো। এসব দলের নেতাদের ভাষ্য, মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির যে সম্পর্ক, সেটিকে সামনে এনেছে অক্টোবর বিপ্লব।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে রাশিয়ায় লেনিনের নেতৃত্বে অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী সমাবেশে বাম নেতারা এসব মন্তব্য করেন। ১২টি বাম রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
বিকাল চারটায় বিভিন্ন সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বলা হয়ে থাকে জাতীয়তাবাদীরাই মুক্তিযুদ্ধ করেছে। কিন্তু বামপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের ভেতরে থেকে কোনও বিদেশি সাহায্য ছাড়াই অবহেলিত জনপদে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছে।’
সারাবিশ্বে অক্টোবর বিপ্লবের তুলনীয় কোনও বিপ্লব ঘটেনি উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ‘অক্টোবর বিপ্লব সামাজিক সম্পর্ক ও সম্পদের মালিকানাকে মীমাংসা করেছে। সম্পদের মালিক কে হবে, পাঁচ শতাংশ মানুষ- নাকি পঁচানব্বই ভাগ মানুষ, সেটিকে মীমাংসা করেছে।’
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব এখনও প্রাসঙ্গিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ। সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছে বলা হলেও আসলে অনেক রাষ্ট্র সমাজতন্ত্র থেকে সরে গেছে। ফলে ওইসব দেশে নারীকে পণ্যায়িত করা হয়েছে। সমাজতন্ত্রের পতনের পর অধ্যাপকরা ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছেন।’
উদ্বোধনী বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী চীন-রাশিয়া-ভারত ও মিয়ানমারের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘তারা এখনও মিয়ানমারের গণহত্যায় সমর্থন দিচ্ছে।’
বিশেষ বক্তা হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘দেশের সব মানুষের আন্দোলনে, ছাত্র আন্দোলনে, সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনে, সব আন্দোলনে অক্টোবর বিপ্লবের চেতনা আছে। এটা বার্মার নির্যাতিত মুসলমান বা ভারতের নিপীড়িত মানুষের আন্দোলনে, সর্বত্র অক্টোবর বিপ্লবের চেতনা আছে।’
আনু মুহাম্মদ বামপন্থী দলগুলোকে অক্টোবর বিপ্লবের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সারাদেশে এই চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে। সবাইকে অক্টোবর বিপ্লবের চেতনায় কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সবার মধ্যে যোগসূত্র থাকতে হবে। সমন্বয় করতে হবে।’
সমাবেশে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নয়, দেশকে বাঁচাতে হবে।’ সমাবেশে তিনি অক্টোবর বিপ্লবের নানা প্রসঙ্গ তুলে এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
অক্টোবর বিপ্লবের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিল বাংলাদেশের জনগণ, এ মন্তব্য করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘৪৬ বছরে বাংলাদেশের শাসকরা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে দেশ পরিচালনা করেছেন। এ কারণেই সরকার প্রধান বিচারপতিকে বাধ্য করে ছুটিতে পাঠিয়েছে।’
এসময় তিনি শাসকদলের দেশ পরিচালনার সমালোচনা করে বামপন্থী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, এখন নতুন করে রাজনীতি দরকার। নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আর ঐক্যবদ্ধ হতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরতে হবে। ফিরতে হবে রুশ বিপ্লবে, যে রুশ বিপ্লবের চেতনা মুক্তিযুদ্ধে আমাদের স্লোগান তোলার প্রেরণা দিয়েছে।
অক্টোবর বিপ্লবের চেতনা ছাড়া বাম রাজনীতির স্বার্থ প্রতিফলিত হবে না বলেও মন্তব্য করেন জোনায়েদ সাকি।এছাড়া, সমাবেশে বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান,শুভ্রাংসু চক্রবর্তী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির মোশরেফা মিশু, গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, বাম নেতা হামিদুল হক, মোশাররফ হোসেন নান্নু, শামসুজ্জামান মিলন, নাসির উদ্দিন আহমেদসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্যদিয়ে সারাদেশে রুশ বিপ্লবের অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে দেওয়ার ওপর জোর দেন।
সমাবেশ শুরুর আগে ১২টি বামপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা রুশ বিপ্লবের ওপর ফেস্টুন, ব্যানার, প্রতিকৃতিসহ মিছিল করে। সমাবেশে মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিন, মাও
সেতুংয়ের প্রতিকৃতি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা করা হয়। রাত সাড়ে সাতটার দিকে সমাবেশ শেষ হলেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে।
অক্টোবর বিপ্লব পালন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, পুরো অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসজুড়ে রুশ বিপ্লবের ওপর অনুষ্ঠান হবে। আগামী ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে উদযাপন আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে।