আঞ্চলিক সংবাদ

শিশু ও যুব’দের সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়ন বিষয়ক জবাবদিহিতা অধিবেশন অনুষ্ঠিত

দহেন বিকাশ ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি: খাপড়াছড়িতে দাতা সংস্থা সিডা’র অর্থায়নে এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর কারিগরি সহযোগিতায় “শিশু ও যুবদের সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়ন বিষয়ক জবাবদিহিতা অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (৮জুন) সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে খাগড়াছড়ি জেলার বাস্তবায়নকারী সংস্থা জাবারাং কল্যাণ সমিতি ও এনসিটিএফ কর্তৃক এটি অনুষ্ঠিত হয়।

পেরাছড়া এনসিটিএফ-এর সভাপতি জবা ত্রিপুরার সভাপতিত্বে এবং জাবারাং সংস্থার প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর বিনোদন ত্রিপুরার স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সূচিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার জেসমিন আক্তার।

সভায় পেরাছড়া এনসিটিএফ-এর সহ-সভাপতি রৌদ্র ত্রিপুরা ও জেলা এনসিটিএফ-এর সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল মাওয়া’র সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মহিউদ্দিন আহমেদ, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা উষানু চৌধুরী, পেরাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা ও জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা প্রমুখ।

অধিবেশন অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি জেলা এনসিটিএফ এর সভাপতি শচিন দাশ। শিশু ও যুবদের সুরক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন ইস্যুর উপর বক্তব্য রাখেন পেরাছড়া এনসিটিএফ এর সাধারণ সম্পাদক জেকি ত্রিপুরা, এনসিটিএফ চাইল্ড পার্লামেন্ট সদস্য ললেন্দু ত্রিপুরা, সাধারণ সদস্য ঝর্না ত্রিপুরা, মেরিনা ত্রিপুরা, রাংচাকতি ত্রিপুরা, ও সুমনা ত্রিপুরা।

বক্তারা তাদের এলাকার শতাধিক শিক্ষার্থীদের বর্ষা মৌসুমে স্কুলে যাতায়াত সমস্যা, কাপতলাবাসীর নিরাপদ পানির সংকট, গ্রামের পাশ দিয়ে যাতায়াতকারী পর্যটকদের টয়লেট সমস্যা, কিশোর-কিশোরীদের মোবাইল আসক্তি, মাদকাসক্তি ও বাল্যবিবাহের সমস্যা তুলে ধরেন। একই সাথে চেঙ্গী নদীর উপর সেতু নির্মাণসহ লাইব্রেরী স্থাপন, গভীর নলকূপ স্থাপন, পাবলিক টয়লেট স্থাপন, বাল্য বিবাহ ও মাদকদ্রব্য প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রধান অতিথিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান।

শিশু দলের সদস্যদের সমস্যা শোনার পর উম্মুক্ত আলোচনায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষে পেরাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিম্বীসার খীসা নিজের স্কুলের শিক্ষার্থী একজন বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে এমন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন এবং বক্তাদের সমস্যাগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাদের দাবী পূরণে কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, শিশু ও যুবরা আগেকার চেয়ে এখন অনেক এগিয়েছে তা আজকের এই অধিবেশন থেকে বুঝা যায়। তিনি বলেন, শিশুদের সাবলীল সমস্যা উত্থাপন এবং দাবী জানানোর বক্তব্য শুনে আমি খুবই অভিভূত। পেশাগত দায়িত্বে থাকার সুবাদে সমতল অঞ্চলে অনেক কাজ করেছি। পাহাড়ের কথা শুনেছি। এখন পাহাড়ে আপনাদের সাথে করছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থানগত প্রাকৃতিক পরিবেশের কারনে ইচ্ছে করে চাইলেও উন্নয়ন বিপ্লব ঘটানো সম্ভব নয়। তারপরও সরকার ধীরে ধীরে উন্নয়ন কর্মসুচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। হাতি মাথা, আলুটিলা, মাতাই পুখিরির মতো সুউচ্চ পর্যটন স্পট যে খাগড়াছড়িতে আছে তা আগে কেউ জানতো না। এখন সরকারের সুনজরে এসেছে। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের কারণে এখন সবাই জানে। পর্যটন শিল্পের বিকাশ হয়েছে। পর্যটকেরা আসছে, স্থানীয়দের কর্মসংস্থান বেড়েছে। চেঙ্গীর ঐ পারে একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা হচ্ছে এভাবে ধীরে আস্তে আস্তে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে। তবে, এই উন্নয়ন ইস্যূতে শিশু ও যুবরাই আজকে কথা বলেছে, দাবী জানাচ্ছে এটি একটি নাগরিকদের সচেতনতার জায়গা। এই সূচনা ইতিবাচক।

বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে তিনি বলেন, আমাদের অভিভাবকদেরকে আরো সচেতন হতে হবে। আঠারো’র আগে বিয়ে নয়, বিশের আগে সন্তান নয়। নিজেদের ইচ্ছে মতো নোটারি পাবলিক করে যারা বাল্য বিবাহকে প্রশ্রয় দেয়, তাদের সকলকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে বলে তিনি সর্তক করে দেন।

“শিশু ও যুব’দের সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়ন বিষয়ক জবাবদিহিতা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথিরা বলেন, আজকের যুবরাই বর্তমানকে তুলে ধরেছেন। আমাদের জানা থাকলেও তাদের দাবিতে নতুনভাবে জাগ্রত হয়েছে। এনসিটিএফ সদস্যদের দাবীগুলো ফেলনা নয়। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। লাইব্রেরী স্থাপন স্থানীয়ভাবে করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে স্থানীয়দেরকে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানান। জাবারাং সংস্থার নির্বাহী পরিচালক তাঁর বক্তব্যে শিশুরা যদি নিজেদের উদ্যোগে লাইব্রেরি স্থাপন করতে পারেন তিনি পাঁচ হাজার টাকা মূল্যমানের কিশোর-কিশোরী ও শিশুতোষ বই উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

Back to top button