শাহবাগে ঐক্য পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার সমাবেশঃ প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): নির্বাচনী প্রতিশ্রতি বাস্তবায়নের দাবী জানিয়ে আজ (২৪ মার্চ) বিকেলে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আয়োজনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ শেষে পদযাত্রা সহকারে একটি মিছিল দু’লক্ষাধিক জনগণের স্বাক্ষর সম্বলিত এক স্মারকলিপি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার পথে বাংলামটরের আগে পুলিশ বাধা দেয়। এ বাধার মুখে মিছিল আর এগুতে পারে নি। তখন ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে উক্ত স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে অর্পণ করেন। অনুরূপ স্মারকলিপি স্থানীয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে প্রেরণ করা হয়।
স্মারকলিপিতে বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারী দল প্রতিশ্রুত নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইন দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে- (ক) অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় কোন বাধা ও বিলম্ব ছাড়াই আইনে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়নে জরুরী নির্দেশনা জারি, (খ) ভুক্তভোগীদের পক্ষে অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্তে প্রদত্ত রায় ও ডিক্রি আইনে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে যথাযথ নির্দেশনা প্রদান, (গ) ২০১৩ সালে বাতিলকৃত ‘খ’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তির খাজনা নেয়ার ক্ষেত্রে তহসিল অফিসের অস্বীকৃতি এবং এসি (ল্যান্ড) অফিসের অহেতুক গড়িমসি ও দুর্নীতি বন্ধেরও নির্দেশনা প্রদান, (ঘ) জাতীয় পর্যায়ে এবং প্রতিটি জেলায় ভূমি প্রশাসন, সরকারি আইনজীবী, ভূক্তভোগী জনপ্রতিনিধি এবং ভূক্তভোগী আইনজীবী প্রতিনিধির সমন্বয়ে মনিটরিং সেল গঠন করে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়নের নিয়মিত পরিবীক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানানো হয়। এছাড়াও পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের যথাযথ বাস্তবায়ন করা এবং সমতলের সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বা সমূহের ভূমি রক্ষায় স্বতন্ত্র ভূমি কমিশন এবং রাষ্ট্রীয় প্রজাসত্ত্ব আইনের ৯৭ ধারা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ জারি করার দাবীও জানানো হয়। এতদ্ব্যতীত সংখ্যালঘু-আদিবাসী মন্ত্রণালয় গঠনেরও দাবি স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, দেশের স্বাভাবিক সময়ে ত’ বটেই, করোনা অতিমারী দুর্যোগময় পরবর্তী পরিস্থিতিতেও ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের বাড়িঘরে হামলা ও জখম, তাদের জমিজমা এমনকি দেবোত্তর সম্পত্তিও জবরদখল ও জবরদখলের অপচেষ্টা, ধর্ম অবমাননার মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে নিরীহ জনগণকে নানাভাবে হয়রানি ও তাদের উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা নানা স্থানে ঘটে চলেছে। বিগত দেড়-দুই বছরে সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, মৌলভীবাজার, মাগুরা, জামালপুর, জয়পুরহাট, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, দিনাজপুর, আগৈলঝরা, যশোর, বরিশাল, ভোলা, সুনামগঞ্জের শাল্লা এমনকি বিগত বছরের
এদিকে গত অক্টোবর মাসের শারদীয় দুর্গোৎসবের অষ্টমীর দিন ও তৎপরবর্তীতে নানা স্থানে কুচক্রী সাম্প্রদায়িক মহলের এ ধরণের হামলা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটে চলেছে। কুচক্রী মহলের এ ধরণের হীন প্রয়াস প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ আন্তরিক সদিচ্ছা ও আইনের পরিপন্থী। এছাড়া ঘটনাবলির সাথে জড়িত দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিও জানানো হয় স্মারকলিপিতে।
সমাবেশে সরকারী দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে ধর্মীয় বৈষম্য বিরোধী মানবাধিকারের জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়া হয়। ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চাভুক্ত বিভিন্ন সংগঠন নিজ নিজ ব্যানার সহকারে এ সমাবেশে যোগ দেন।
ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে স্মারকলিপি পাঠ করে শোনান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার প্রধান সমন্বয়ক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত। মোর্চাভুক্ত সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার ও নির্মল রোজারিও, অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য- এ্যাড.সুব্রত চৌধুরী, জে এল ভৌমিক (সভাপতি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ) ও লায়ন চিত্ত রঞ্জন দাশ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- মনীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, এ্যাড.তাপস কুমার পাল, নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, এ্যাড. শ্যামল কুমার রায়, কিশোর রঞ্জন মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক-পদ্মবতী দেবী, মধুমিতা বড়–য়া (সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদ), হেমন্ত আই কোড়াইয়া (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশন) ও বাপ্পাদিত্য বসু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।