জাতীয়

‘যারা মানবাধিকার কর্মীদের দেশদ্রোহী বলে তবে তারা মানবাধিকার বিরোধী’- সুলতানা কামাল

শ্যাম সাগর মানকিন:”যারা মানবাধিকার কর্মীদের দেশদ্রোহী বলে তবে তারা মানবাধিকার বিরোধী’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। আদিবাসী মানবাধিকার কর্মীদের নিয়ে এক সন্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কাপেং ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে দিনব্যাপী সন্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, আমরা যখন মানবাধিকার নিয়ে কথা বলি, তখন এই রাষ্ট্র, সরকার আমাদের দেশদ্রোহী রাষ্ট্রবিরোধী বলে কোনঠাসা করার চেষ্টা করেন। যদি মানবাধিকার কর্মীরা দেশদ্রোহী হয়, তবে যুক্তি অনুযায়ী এই রাষ্ট্র ও সরকারও মানবাধিকার বিরোধী। যেটা সংবিধান বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী কথা।

‘মানবাধিকার কর্মীরা বর্তমানে সব থেকে বিপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। মানবাধিকার কর্মীদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে, চুপ করিয়ে দেয়া হচ্ছে মামলা দেয়া হচ্ছে। ভয়ের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু গণতন্ত্রে ভয়ের সংস্কৃতি থাকতে পারেনা। দুটো পাশাপাশি চলতে পারেনা। গণতন্ত্র মানেই নির্ভয়, মুক্তভাবে কথা বলতে পারা’ বলেও সুলতানা কামাল মন্তব্য করেন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ডঃ মিজানুর রহমান তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, ‘মানবাধিকার কর্মীদের জন্য বর্তমান সময় ও আগামীর দিনগুলি কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মানবাধিকারের কাজ করতে গেলে রাষ্ট্রের সাথে সংঘাত অনিবার্য, সে কারনে যারা মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে তাদের পাগল ছাড়া আর কিইবা বলা যায়!

‘রাষ্ট্র আদিবাসীদের দূরে ঠেলে দিচ্ছে, প্রান্তিকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও যারা মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করেন তাদের আমি সাধুবাদ জানাই।’

‘ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হতে চলেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে আদিবাসী ও অন্যান্য সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার না হন তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের পরম দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। এ ব্যাপারে অতীত আমাদের কোন সুখকর বার্তা দেয়নি’ বলেও জানান ডঃ মিজানুর রহমান।
‘অস্ট্রেলিয়ার সরকার বাংলাদেশে যারা ও যে সংগঠনগুলো মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে চলেছেন তাদের পাশে সবসময় থাকবে এবং সহযোগিতা করে যাবে’ বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের ডেপুটি হাই কমিশনার মিস পেনি মর্টন।
তিনি জানান, ‘২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকারের প্রদত্ত বৃত্তির ১০ শতাংশ আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দ করা হবে ।’

সন্মেলনে আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘আমরা যখন মানবাধিকার বিষয়ে কথা বলি, অধিকারের কথা বলি তখন সরকার পক্ষ থেকে এমন ভাবে বক্তব্য দেয়া হয় তা শুনে মনে হয় কেবল তারা দেশপ্রেমিক আর অন্যরা সবাই রাষ্ট্রদ্রোহী। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমনই।’

তিনি আরো বলেন, ‘যারা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কাজ করেন তারা নানানভাবে নিপীড়নের শিকার হয়। তাদের নামে মামলা হয়। মামলা বাংলাদেশে সহজ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।’

সন্মেলনের সভাপতি কাপেং ফাউন্ডেশনের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু এই স্বাধীন দেশে আদিবাসীরা নিপীড়িত নির্যাতিত হয়ে চলেছে। আমরা আমাদের ভূমি রক্ষা করতে পারছিনা, নারীদের অধিকার রক্ষা করতে পারছিনা।’
‘এ দেশে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে থাকে পুলিশ তারাই আদিবাসীদের বসত বাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে, তাহলে এই দেশে কিভাবে নিরাপত্তা আশা করা যায়।’

তিনি সরকারি চাকরিতে আদিবাসী কোটা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করেন। আদিবাসী ছাত্র সংগঠনকে এ ব্যাপারে সংগঠিত প্রতিবাদ করার আহবান জানান তিনি।

সন্মেলনে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আদিবাসী মানবাধিকার কর্মীরা তাদের কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। সেখানে প্রশাসনের অসহযোগিতা, রাজনৈতিক সংগঠনের সম্পৃক্ততা, মানবাধিকার কর্মীদের প্রতি নানান হুমকি সহ বিভিন্ন সমস্যার কথা উঠে আসে।
কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমার সঞ্চালনায় মানবাধিকার কর্মীদের সন্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক মিস রিনা রায়, আইএলও’র ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর আলেক্সিউস চিছাম, এএলআরডি’র ডেপুটি ডিরেক্টর মিস রওশন জাহান মনি এবং HEKS’র প্রোগ্রাম অফিসার সেলিনা আক্তার কেয়া প্রমুখ।

Back to top button