মনিপুরী সমাজকর্মী এস রীনা দেবীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন

বাঙালি ও আদিবাসী নাগরিকবৃন্দ আজ শনিবার ঢাকায় এক মানববন্ধনে সিলেটের প্রবীণ মনিপুরী সমাজকর্মী এস রীনা দেবীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপহরণ মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করেছে ‘মানবাধিকার রক্ষার পক্ষে নাগরিক সমাজ’ শীর্ষক একটি মঞ্চ।
সকাল ১১টায় আয়োজিত এই মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে সংহতি বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ ইকবাল খান, হিল উইমেন ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা, আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য চঞ্চনা চাকমা, বাঁচতে শেখ নারী’র সভাপতি ফিরোজা বেগম, শাহাবুদ্দীন ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দীন মাতুব্বর, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এএএম ফায়েজ হোসেন, এবং বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমলি কিস্কু। আরো সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ সংযুক্ত বিল্ডিং অ্যান্ড উড ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল আলম ফারুক। সঞ্চালনা করেন শহীদুল ইসলাম সবুজ।
বক্তারা বলেন, গত ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে সিলেটের কুলাউড়া উপজেলার শেখ নূর মিয়া জামালপুর আদালতে তাঁর ভাই অপহরণের অভিযোগ জানিয়ে একটি মামলা করেন [জামালপুর সদর, সিআর মামলা নং ৯৯৩(১)]। এতে সিলেটনিবাসী বৃদ্ধ ও অসুস্থ রীনা দেবীকে তিন নম্বর আসামী হিসাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে, রীনা দেবী জামালপুরনিবাসী অন্যান্য আসামীর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে নূর মিয়ার ভাই আবদুল আহাদকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেছেন। মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জামালপুর ডিবি অফিসে আগামী ১৫ই জানুয়ারি (২০২০) উপস্থিত থাকার নোটিশ পেয়ে রীনা দেবী বিস্মিত এবং আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি, তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং শুভানুধ্যায়ীদের বিশ্বাস, এই মামলায় তাঁকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হয়েছে। এর সঙ্গে ভূমিদস্যুরাই সম্পৃক্ত বলে তাঁদের বিশ্বাস।
আয়োজকরা আরো জানান, এস রীনা দেবীর বয়স ৭২ ও জাতিতে তিনি মনিপুরী। তাঁর স্বামীর পরিবার বংশানুক্রমিকভাবে সিলেটের শিবগঞ্জের মনিপুরী পাড়ায় বসবাস করে আসছেন। তাঁর স্বামী অমৃত সিংহ ২০০০ সালে মারা যান। বর্তমানে এস রীনা দেবী শিবগঞ্জে তিন সন্তান ও তাদের পরিবারবর্গকে নিয়ে বাস করেন। তাঁর শ্বশুর অম্বিকা সিংহ এই এলাকার অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। শিবগঞ্জ ও এর আশেপাশের এলাকায় তাঁর কিছু ভূসম্পত্তি ছিল। সেসময় এই এলাকায় মূলত মনিপুরীদেরই বসবাস ছিল। পরবর্তীকালে বাঙালিরাও বসতি স্থাপন করতে শুরু করলে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে পাশাপাশি বসবাস করে আসছিল। গত কয়েক দশকে চিত্রটি ধীরে ধীরে পাল্টে গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের হাতে অনেক মনিপুরী পরিবার তাদের জমি হারাচ্ছে।
এস রীনা দেবীর স্বামী অমৃত সিংহ একমাত্র পুত্র হিসাবে অম্বিকা সিংহের সব সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। ২০০০ সালে তাঁর মৃত্যুর পর এই সম্পত্তির বর্তমান অধিকারী তাঁর স্ত্রী। কিন্তু এসব সম্পত্তির বিরাট অংশ ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি সম্প্রদায়ের লোকজন বেদখল করেছে। যেটুকু বাকি আছে তা বেদখলের জন্য দুই দশকের বেশি সময় ধরে অপতৎপরতা চালাচ্ছে ভূমিদস্যুরা। পরিবারটির অভিযোগ, এই অপতৎপরতায় নেতৃত্ব দিচ্ছে সিলেটের ২০ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ। ভুয়া দলিল তৈরি, সামনাসামনি ও টেলিফোনে হুমকি, সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টিসহ নানারকমভাবে এস রীনা দেবীর পরিবারকে ভূমিদস্যুরা আজ দীর্ঘ ২০ বছর যাবত উপদ্রব করে আসছে এবং তাঁদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।
২০১১ সালে এদেরই একটি দল লাঠিসোটা ও দা-চাপাতিসহ রীনা দেবীর বাড়িতে হামলা করে। তাদের দায়ের কোপে তাঁর মেয়ে অজন্তা গুরুতর আহত হন। এসংক্রান্ত একাধিক মামলা আদালতে চলছে। প্রশাসন ও গণমাধ্যমের তৎপরতা এবং শুভানুধ্যায়ীরা পাশে দাঁড়ানোয় রীনা দেবীর সংসার এখনও চলছে। কিন্তু ভূমিদস্যুরা হুমকিধামকি ও আরো নানা প্রকারে প্রতিনিয়ত তাঁর পরিবারের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
নূর মিয়ার ভাই আবদুল আহাদের উদ্ধার, তার নিখোঁজ হওয়ার প্রকৃত কারণ, এর পেছনে কারা প্রকৃত দায়ী, কী তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য, কারা এস রীনা দেবীকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে নিয়ে তাঁকে এই মামলায় জড়িয়েছে – তদন্তের মাধ্যমে তা খুঁজে বের করার জন্য বক্তারা সরকার ও প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।