মধুপুরে আদিবাসীদের জমি চাষে বন বিভাগের বাধা, গুলি করে হত্যার হুমকিঃ ক্ষুব্ধ মধুপুরের আদিবাসী জনতা
কাঞ্চন মারাকঃ টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় আদিবাসীরা তাদের নিজ আবাদি জমিতে চাষ করতে গেলে টাঙ্গাইল বনবিভাগের দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে বাঁধা প্রদান ও বন্দুক দিয়ে গুলি করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ ৬ই জুলাই দুপুরে মধুপুরের আমতলী বাইদে আদিবাসী গারো নারী কৃষক কৌশলা নকরেক ও তাঁর পরিবার নিজ আবাদী কৃষি জমিতে আমন ধান রোপনের উদ্দেশ্যে জমি চাষ করার সময় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জমির মালিক কৌশলা নকরেক আমন ধান চাষের জন্যে সকালে জমিতে যান। বংশপরম্পরায় উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জমি চাষ উপযোগী করতে হাল চাষের মূহূর্তে দুপুর ১২ টা নাগাদ দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং হাল চাষে বাধা দেন। এতে সরাসরি প্রতিবাদ করেন কৌশলা নকরেক ও পরিবারের লোকজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিতে কিছুক্ষন পর অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ডেকে আনেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের নামে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার হুমকি প্রদান করেন রেঞ্জ কর্মকর্তা।
এরই মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক ভিডিও ধারন করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন। এতে দেখা যায়, অনেক মানুষের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে গুলি করার হুমকি দেয় রেঞ্জ কর্মকর্তা। প্রতি উত্তরে সর্বসাধারণ বলে উঠেন, ‘মারেন গুলি, মারেন।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পলান্ত চিরান বলেন, ‘চাষে বাধা দিলে, আমি প্রতিবাদ জানাই; পরে পুলিশ এনে আমাকে গুলি করে মারতে চেয়েছে।’
এসময় জমির মালিক কৌশলা নকরেক নাতিকে পিঠে বেধে ঘটনাস্থলে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘বংশপরম্পরায় আমরা এ জমিতে চাষ করে আসছি। চাষ করতে না দিলে আমরা কি খাবো? গুলিতে মরতে ভয় পাই না, এমনিতেও না খেয়ে মরে যাবো।’ (গারো ভাষা হতে অনুবাদকৃত।)
জানা গেছে, কৌশলা নকরেক উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ২ পাকি জমিতে চাষ করে কোনরকমে সংসার চালান। পাশের জমি বাকি ৩ ভাইয়ের। সকালে চার ভাই-বোন মিলে হাল চাষ করতে গেলে বাধা ও গুলি করে হত্যার হুমকি দেয় বনবিভাগ। এতে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
ঘটনার প্রেক্ষিতে বাগাছাস মধুপুর শাখা সভাপতি নিউটন মাঝি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে বলছেন এক ইঞ্চি জমি যাতে অনাবাদি না থাকে। সেখানে আবাদি জমিতে জোরপূর্বক খাল খনন করতে চায় বনবিভাগ।’
ঘটনার প্রেক্ষিতে পুরো এলাকা ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিতে আরোও এক ভ্যান পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সে সময় উপস্থিত ছিলেন বাগাছাস কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জন জেত্রা।
তিনি বলেন, ‘রেঞ্জ কর্মকর্তা গুলি করার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে ১ ভ্যান পুলিশ আসে এবং আপততো চাষ বন্ধ করার অনুরোধ জানান।’
তিনি আরও বলেন, ‘রেঞ্জ কর্মকর্তা আইন লঙ্ঘন করেছেন। উপযোক্ত বিচার না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
যোগ করে জিএসএফ সাধারণ সম্পাদক লিয়াং রিছিল বলেন, ‘গুলিতে প্রাণ দিয়েছে শহীদ পিরেন স্নাল, শহীদ চলেশ রিছিল। এখনো ওদের পিপাসা মিটেনি। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই।’
উল্লেখ্য, মধুপুর জাতীয় উদ্যানের ‘ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন ও টেকসই ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্পের আওতায় ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মধুপুর দোখলা রেস্ট হাউজের পাশে আমতলী বাইদ এলাকায় লেক খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করে বনবিভাগ। ২২ এপ্রিল সেই জমিতে সংরক্ষিত এলাকা ‘সর্ব সাধারণের প্রবেশ নিষেধ’ লেখা সংবলিত সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয়। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে মধুপুরের সর্বসাধারণ। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে আন্দোলন করে আসছে স্থানীয় আদিবাসী জনগণ। তাদের দাবি, আমতলী বাইদে ১৩ টি গারো আদিবাসীর ৪৫ বিঘা আবাদী জমিতে জোরপূর্বক লেক খনন করতে চায় বনবিভাগ।