বাগদা ফার্মের সাঁন্তালদের উচ্ছেদের চেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ৪০ বিশিষ্ট নাগরিক:
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা):বাগদা ফার্মের সাঁন্তালদের উচ্ছেদের চেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ৪০ বিশিষ্ট নাগরিক। আজ সোমবার এক বিবৃতির মাধ্যমে নাগরিকরা এই আহ্বান জানিয়ে। বিবৃতিতে নাগরিকরা গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ (বাগদা) ফার্মের জমিতে ইপিজেড স্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে এবং এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ১০ মে, ২০২২ তারিখ গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বেপজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, স্থানীয় সাংসদ, গাইবান্ধার এসপি, গোবিন্দগঞ্জের মেয়রসহ বাগদা ফার্মের সাঁওতাল নেতৃবৃন্দের সাথে একটি সভায় মিলিত হয়েছিলেন। অথচ সাঁওতাল নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদেরকে উক্ত সভায় তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলতে না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে, এর প্রতিবাদে স্থানীয় আদিবাসী সাঁওতালরা বিক্ষোভও করেছেন। তাদের দাবি চিনিকলের জন্য আখ চাষ করা ছাড়া অন্য কিছু করা হবেনা এই শর্তে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে এসব জমি রিকুইজিশন করেছিল। চিনিকলটি ২০০৪ সাল থেকে বন্ধ থাকায় সে শর্ত ভঙ্গ হয়েছে, তাই জমিগুলো তাদের কাছে ফেরত দিতে হবে এবং ইপিজেড নির্মাণের প্রশ্নই ওঠে না বলে দাবী করা হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিদাতাদের অন্যতম এবং আদিবাসীদের ভূমি অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা স্বাক্ষরিত উক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মনে করি তাদের এ দাবি যুক্তিসঙ্গত এবং কোন অবস্থায়ই তিন ফসলী জমিতে ইপিজেড স্থাপন করা কিংবা কোন শিল্প কারখানা করা যাবে না মর্মে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশও আছে।
বিবৃতিতে বলা হয় যে, স্থানীয় সাঁওতালদের দাবি রিকুইজিশন করা ১৮৪২ একর জমির সাথে তাদের আরো প্রায় ৬০০ একর জমি ফার্মের নামে অবৈধভাবে কুক্ষিগত করা হয়েছে। এক পর্যায়ে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের একাংশের যোগসাজসে এবং অসৎ সুগার মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সহায়তায় স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর বাগদা ফার্ম এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালায়, এবং উেেচ্ছদের নামে তাদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশ গুলি বর্ষন করে, ফলে ৩ জন আদিবাসী সাঁওতাল নিহত হন। কিছু পুলিশ সদস্য ও দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে সাঁওতালদের সহ¯্রাধিক বাড়িঘর ভস্মিভূত হয়। এ সংক্রান্ত হত্যা মামলা এখনো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। গভীর উদ্বেগ ও পরিতাপের বিষয় যে, ই পি জেড স্থাপনের অছিলায় আবার ক্ষতিগ্রস্ত ও অসহায় সাঁওতালদের ঐ এলাকা থেকে বলপূর্বক উচ্ছেদের নয়া কোন পরিকল্পনার ছক কাটা হচ্ছে বলে এই জনগোষ্ঠীর মানুষেরা আশংকা প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমপক্ষে ১০/১২ বার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, কোন দুই বা তিন ফসলা কৃষিজমি অকৃষিজ ব্যবহারের জন্য অধিগ্রহণ করা যাবেনা দাবী করে বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয় যে, স্থানীয় এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী দুর্বৃত্ত চক্র এবং প্রশাসনের উচ্চাভিলাসী অসৎ কিছু কর্মকর্তা এই ঘটনার নেপথ্যে থেকে বিভিন্ন দুস্কর্ম ও অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে এবং তাদেরই অতি উৎসাহী তৎপরতার কারণে সরকারি উদ্যোগ ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছে। ইপিজেড করতে হলে সেটির জন্য সরকারের জায়গার অভাব নেই। কারণ এর আগে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর সাকুয়া নামক স্থানে সরকারি খাসজমিতে ইপিজেড করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল। সুতারং সেই জায়গায় ইপিজেড না করে বাগদা ফার্মের তিন ফসলী জমিতে ইপিজেড নির্মানের চেষ্টা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা লংঘন করার সামিল বলেও মনে করেন বিশিষ্টজনরা।
বিবৃতিদাতারা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য কৃর্তপক্ষকে এ ধরণের জনবিরোধী, উষ্কানিমূলক ও হঠকারি উচ্ছেদ পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জন্য আহবান জানিয়ে বলেন, আমরা মনে করি কোন চাপিয়ে দেয়া অন্যায্য সিদ্ধান্তের ফল কখনও ভাল হয় না। একই সাথে বিষয়টির প্রতি আমরা সরকারের বিশেষত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই এবং তারই বহুল- উচ্চারিত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাগদা ফার্মের তিন ফসলী কৃষিজমি সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর পূর্বতন মালিকদের বংশধরদের অবিলম্বে ফিরিয়ে দেবার ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানাই।
এই বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন-
১. সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
২. পংকজ ভট্টাচার্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সামাজিক আন্দোলন নেতা
৩. ড. হামিদা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী
৪. আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব
৫. ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র
৬. খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি ও চেয়ারপার্সন, এএলআরডি
৭. আনু মোহম্মদ- শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৮. অ্যাড. জেড আই খান পান্না, সভাপতি, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সদস্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিল
৯. ড. আবুল বারকাত, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি
১০. ড. ইফতেখারুজ্জামান- নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি
১১. শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
১২. শিরিন হক, সদস্য, নারীপক্ষ
১৩. অ্যাড. রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বেলা
১৪. ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্বাহী পরিচালক, রীব
১৫. রাণা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
১৬. সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
১৭. কাজল দেবনাথ, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ
১৮. অ্যাড. তবারক হোসেইন, সহ-সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
১৯. ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী
২০. রাহনুমা আহমেদ, কবি ও লেখক
২১. ড. পারভীন হাসান, ভাইস চ্যন্সেলর, সেন্ট্রাল উইমেন্স বিশ^বিদ্যালয়
২২. শারমিন মোর্শেদ, নির্বাহী পরিচালক, ব্রতি
২৩. ড. গীতি আরা নাসরিন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়
২৪. ড. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৫. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৬. তাসনিম সিরাজ মাহবুব, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৭. সামিনা লুৎফা, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৮. সঞ্জীব দ্রং , সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
২৯. নুর খান লিটন, মানবাধিকার কর্মী
৩০. ড. জোবাইদা নাসরিন- অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩১. ড. মোহম্মদ তানজিবউদ্দিন খান- শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩২. জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ
৩৩. রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট
৩৪. রেজাউর রহমান লেনিন, গবেষক ও অধিকারকর্মী
৩৫. হানা শামস আহমেদ- মানবাধিকার ও আদিবাসী অধিকার কর্মী
৩৬. দীপায়ন খীসা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
৩৭. অনুপ রাহী, সাংস্কৃতিক কর্মী
৩৮. নোভা আহমেদ, গবেষক ও শিক্ষক নর্থ সাউথ বিশ^বিদ্যালয়
৩৯. পল্লব চাকমা, নির্বাহী পরিচালক, কাপেং ফাউন্ডেশন
৪০. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি