অন্যান্য

ঢাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম গণহত্যা “কলমপতি গণহত্যা দিবস” পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ১৯৭১ সালেন ২৫ শে মার্চ রাতের আঁধারে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যেভাবে কাপুরুষের ন্যায় এ দেশের নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর গনহত্যায় লিপ্ত হয়েছিল ঠিক তেমনি স্বাধীনতার ৯ বছর পর ১৯৮০ সালের ২৫ শে মার্চও স্বাধীন দেশের নাগরিক পার্বত্য এলাকার জুম্ম জনগণের ইতিহাসে এক কালো এবং বেদনাদায়ক অধ্যায় যার অপর নাম “কলমপতি গণহত্যা” । এ গনহত্যার স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার এবং পিসিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে স্মরণ সভা এবং মোমবাতি প্রজ্বলন অনুষ্ঠিত হয় ।

স্মরণ সভায় পিসিপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থী অশোক চাকমার সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন প্রথম বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী প্রণব চাকমা, জিনেট চাকমা,এডিট দেওয়ান এবং ক্লিনজো চাকমা প্রমুখ ।
দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী জিনেট চাকমা স্মৃতিচারণ করে বলেন ” স্বাধীনতার ৯ বছর পর স্বাধীন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভূখন্ডে এ গণহত্যা জুম্মদের জাতীয় জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত এবং নিঃসন্দেহে একটি কালো দিন। এ দিনে সেনা-সেটেলার কতৃক প্রায় ৩০০ আদিবাসী জুম্ম নারী পুরুষকে হত্যা করা হয়”।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটি’র সম্মানিত সভাপতি এডিট দেওয়ানের বক্তব্যের মাধ্যমে ফুটে ওঠে নৃশংসতার বর্বর এ চিত্র। তিনি বলেন “কাউখালি উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের সেনাবাহিনী ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা বৌদ্ধমন্দির সংস্কারের জন্য আলোচনা সভা’র নাম করে নিরীহ গ্রামবাসীকে বৌদ্ধ মন্দিরে জড়ো করাই। তারপর উপস্থিত নারী পুরুষকে সারিবদ্ধভাবে দাড়ঁকরিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
এতে প্রায় ৩০০ আদিবাসী জুম্ম নারী পুরুষ শাহদাৎ বরণ করেন এবং অসংখ্য আহত হন।
তাছাড়া সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগীতাই সেটেলার বাঙালীরা কলমপতি ইউনিয়নের প্রায় ১০-১২ টি আদিবাসী জুম্মদের গ্রাম পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দেয়।”
সভাপতির বক্তব্যে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাবি শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বলেন “আমরা ছোট পরিসরে হলেও পাহাড়ী জুম্মদের বেদনাহত এ দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদেরকে অবগত করাতে চাই আর সচেতন করার লক্ষ্যে এ ধরণের গণহত্যার ইতিহাসগুলো জানাতে চাই” তিনি আরো স্মৃতিচারণ করে বলেন “কলমপতি গণহত্যার পরবর্তী আরো বড় বড় ১২টি গণহত্যা জুম্মদের কাছে কালো অধ্যায়ে হিসাবে ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে আছে। তন্মধ্যে লংগদু গণহত্যা, লোগাং গণহত্যা, নানিয়াচর গণহত্যা অন্যতম এবং এ ধরণের গণহত্যাগুলোর পরিচালনার ধরণ ও উদ্দেশ্য প্রায় একই।”জুম্ম জনগণকে এ দেশ থেকে বিতারন, ভূমি দখল, সেতেলারদের পুনর্বাসন সর্বোপরি জুম্ম জনগণকে নির্মূল করার জন্য এ ধরণের গণহত্যাগুলো প্রশাসনের প্রত্যক্ষ এবং প্রশাসনের ভূমিকা ছিল এবং তা এখনো অবধি চলমান রয়েছে। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন , কলমপতি গণহত্যার ৩৭ বছর পূর্ন হলেও এখনো শে গণহত্যার বিচার কলমপতি গণহত্যায় নিহত পরিবার ও আহত পরিবার পাইনি। সরকার একদিকে ২৫ শে মার্চকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি ঘোষণা দেয়ার জন্য জাতিসংঘ বরাবর দাবি জানালেও নিজ দেশের জুম্ম জনগণের উপর ১৩ টির বেশী সংগঠিত গণহত্যার কোনটিরই বিচার করছেন না।
এরপরে জগন্নাথ হলের শহীদ মিনারে সঞ্চালকের পরিচালনায় গণহত্যায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে এ আয়োজনের সমাপ্তি করা হয়।
উল্লেখ্য যে, ১৯৮০ সালের আজকের এই দিনে সংঘটিত গণহত্যার দরুন পাবর্ত্য জুম্মজনগণের জন্য এই দিনটি এক কালো দিন হিসেবে বিবেচিত। এদিন খুব ঠান্ডামাথায় পরিকল্পনা করে কাউখালি উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের জুম্মদের উপর গণহত্যাটি চালানো হয়।সংঘটিত ওই গণহত্যায় প্রায় ৩০০ র অধিকজুম্ম আদিবাসী লোককে হত্যা করা হয়।স্বয়ং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরকলমপতির নিকটস্থ ক্যাম্পেরসেনাসদস্যরা জনসভার নামে ডেকেএনে লাইনে দাঁড়িয়ে রেখেব্রাশফায়ার করে হত্যা করে, আরসেটেলার বাঙালী দের লেলিয়েদেয়া হয়। কলমপতি ইউনিয়নের প্রায় সবজুম্ম আদিবাসীদের গ্রামে ঐ হামলাচালানো হয়।ঘটনার বিবরণ: তৎকালীন বিরোধীসাংসদ রাশেদ খান মেনন, শাহজাহানসিরাজ এবং উপেন্দ্র লাল চাকমারসমন্বিত তথ্যানুসন্ধানী দল উক্তঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা এটিরসত্যতা প্রকাশ করেন। তাঁদের বয়ান,স্থানীয় লোকজন এবং ভিকটিম দেরতথ্য মতে, সেদিন স্থানীয় সেনাক্যাম্পের সেনাদের একটি ইউনিটেরপ্রধান কলমপতি ইউনিয়নের বিভিন্নগ্রামের মুরুব্বিদের ধর্মীয় সভারনামে ডেকে একটি বৌদ্ধ বিহারেসবাইকে জড়ো করা হয়। সকালবেলায়স্থানীয় পোয়াপাড়া বৌদ্ধ বিহারসংস্কারের নামে সকল পাহাড়ীদেরআসতে বলা হয়। পরে সবাইকে বৌদ্ধবিহারের প্রাঙ্গণের সামনে লাইনেদাঁড় করানো হয় এবং ব্রাশফায়ার করেসবাইকে হত্যা করা হয়। নিহতের মধ্যেস্থানীয় নেতা বাজার চৌধুরী কুমুদবিকাশ তালুকদার, স্থানীয় স্কুলকমিটির সেক্রেটারি শরদিহর চাকমাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ছিলেন।সেনাসদস্যরা তাদের সবাইকে গুলিকরে হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি, তদুপরিসেটেলার বাঙালীদের উত্তেজিতকরে, লেলিয়ে দিয়ে কাছাকাছিপ্রায় দশ-বারো টি গ্রামে পাহাড়ীজুম্ম আদিবাসীদের উপর নির্মম গণহত্যাচালানো হয়। কাউখালী মুখ পাড়া,পোয়াপাড়া, কাউখালী বাজার,তোং পাড়া, হেডম্যান পাড়া সহআশেপাশের গ্রামে এই হামলাচালিয়ে গণহত্যা চালানো হয়।সেনাবাহিনীর সদস্যরা সকল গ্রামঘিরে রাখে যাতে কেউ পালাতেনা পারে, আর তখন সেটেলারবাঙালীরা ঐ গণহত্যা চালাতেসেনাবাহিনী কে সহায়তা করে এক ধরণের ত্রাসের সৃষ্টি করে। উক্তগণহত্যায় প্রায় ৩০০ র অধিক পাহাড়ীআদিবাসী নিহত হন। সেটেলাররা দা,কুড়াল বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়েহামলায় অংশ নেয়। হামলায়পাহাড়ীদের ঘরবাড়ী, বৌদ্ধ মন্দির সহসবকিছু পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়।ঘটনার পর হাজার হাজার পাহাড়ীআদিবাসী পরিবার রিফিউজি হয়েভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। আজসেসব জায়গা সেটেলাররা দখল করেআছে, বসতি গড়েছে। বৌদ্ধ বিহারেরজায়গায় মসজিদ তৈরি করা হয়।

Back to top button