জাতীয়

ঢাকায় সিপিবির সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত

নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তদারকি সরকার নিয়ে আলোচনা শুরুর আহ্বান

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সমাবেশে বলা হয়, দুর্নীতি, লুটপাট, সাম্প্রদায়িকতাকে পরাজিত করে গণতন্ত্র ও শোষণমুক্ত সমাজ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে আওয়ামী ও বিএনপি ধারার বাইরে বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীলদের বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

সমাবেশ থেকে অবিলম্বে ‘ভোটারবিহীন সরকারের পদত্যাগ’, সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারসহ নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং গ্যাস বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো, রেশনিং-ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু, পাচারের টাকা ফেরত আনা, খেলাপী ঋণ উদ্ধার ও এর সাথে জড়িতদের শ্বেতপত্র প্রকাশ, দেশের রাজনীতি-অর্থনীতিতে সাম্রাজ্যবাদী বিদেশি হস্তক্ষেপ বন্ধ, দুঃশাসনের অবসান, ব্যবস্থা বদল ও বিকল্প গড়ার সংগ্রাম জোরদার করারও আহ্বান জানানো হয়।

সমাবেশ থেকে গণসংগ্রামে সকল বামপন্থী, বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ার আহ্বান জানানো হয়।

এছাড়া সমাবেশে কালক্ষেপণ না করে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও নির্দলীয় তদারকি সরকারের রূপরেখা প্রণয়নে আলোচনা শুরু করতে সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়।একইসাথে দুঃশাসনের অবসান, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারসহ নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন বেগবান করার আহ্বান জানানো হয়।

গতকাল শুক্রবার, বিকেল ৩টায় ঢাকার শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবি’র সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সিপিবি’র সদস্য এম এম আকাশ। সমাবেশ পরিচালনা করেন সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। সমাবেশে পার্টির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শামছুজ্জামান সেলিম, এ এন রাশেদাসহ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশ শেষে কয়েক হাজার মানুষের লাল পতাকা মিছিল শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর থেকে শুরু হয়ে এলিফ্যান্ড রোড, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশের আগে বিভিন্ন এলাকা থেকে লাল পতাকা নিয়ে পার্টির নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন।

সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, দেশে সংঘাতের রাজনীতি চলছে। গণতন্ত্র আজ নির্বাসনে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে ও ভয়ের রাজনীতি চলছে। হামলা মামলাসহ চলছে সর্বত্র দলীয়করণ। মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। ঋণখেলাপীদের ঋণ উদ্ধারে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। সরকার আইএমএফের সাথে অযৌক্তিক চুক্তি করেছে। ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। আমরা বলতে চাই উন্নয়ন ও গণতন্ত্র পরস্পর বিরোধী নয়। দেশে গণগন্ত্র না থাকলে স্থিতিশীল উন্নয়ন সম্ভব নয়। সামনে নির্বাচন, ক্ষমতার খেলা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। সরকার গণতন্ত্রকে জিম্মি করে রেখেছে। কমিউনিস্ট পার্টি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। ভয় দেখিয়ে কোনো সরকার রেহাই পাবেনা। কমিউনিস্ট পার্টি জনগণের পক্ষে লড়াই করবে। আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ-বিএনপির নীতি একই। ২০১৮ তে যেভাবে ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছে, এবার যদি সরকার সেরকম ভোট করতে চায় কমিউনিস্ট পার্টি জনগণকে সাথে নিয়ে এর প্রতিরোধ করবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির লাল পতাকার মিছিল। ২০ জানুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, দেশে দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব চলছে। বাংলাদেশে বর্তমানের নীতি হলো ‘যে করে আয় তার পকেট ফাকা, আর যে আয় করে না তার পকেট থাকে মোটা’। দেশের কমিউনিস্ট পার্টি এ ব্যবস্থা বদলের জন্য লড়াই করছে। বামপন্থী কমিউনিস্টরা করে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি। বর্তমানে দুর্নীতি-দুঃশাসন ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে ফেলেছে। বাংলার জনগণকে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। অনেকে সেøাগান দিচ্ছে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। কিন্তু আমরা বলি, সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবস্থা বদল করতে হবে। আমরা ক্ষমতায় গেলে জিনিসপত্রের দাম কমাব, ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য কমাবো, সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেব। সরকার কমিউনিস্টদের, বামপন্থীদের উপেক্ষা করে, কেননা কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় আসলে তারা লুটপাট করতে পারবে না। আমাদের সামনে বড় সংকট এই দুঃশাসন। তিনি দুঃশাসনের অবসান ও ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করতে গণসংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণকে নীতিহীন শক্তিকে ‘না’ ও নীতিশীল শক্তিকে ‘হ্যাঁ’ বলতে হবে।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বামপন্থীদের নেতৃত্বে বিকল্প গড়ে তুলতে হবে। রাজনীতিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাছে কুক্ষিগত রাখার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। ২০০১ সালে পল্টনের মহাসমাবেশে বোমা হামলায় আমাদের ৫ জন শহীদ হয়েছিলেন, দুঃশাসনের বাইরে বিকল্প শক্তির উত্থানের দাবিতে। আমরা বলতে চাই, আওয়ামী লীগের বর্তমান দুঃশাসন নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। দেশ এখন দুভাগে বিভক্ত। একদিকে না খাওয়া মানুষ, অন্যদিকে মুষ্টিমেয় লুটেরা ধনী। ‘আওয়ামী দুঃশাাসন’ হটাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য মেহনতি মানুষকে রাস্তায় নামতে হবে। বামপন্থীদের একত্র করতে হবে। কমিউনিস্ট পার্টি বর্তমানে ক্ষমতার কথা ভাবার কথা শুরু করেছে। আমরা বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তুলব।

এম এম আকাশ বলেন, শহীদের রক্ত কখনও বৃথা যায় না। আগে বলা হত বংলাদেশ হলো তলাবিহীন ঝুঁড়ি। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমলেও দেশে দাম কমে না। সরকার সাধারণ ঋণ খেলাপিদের ঋণ মওকুফ করে দিচ্ছে। অবিলম্বে পাচারকৃতদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক। তদন্ত করে কালো টাকা ফেরত আনা হোক। বর্তমান বাংলাদেশে, সুশাসনের অভাব, দুর্নীতির কারণে পুঁজিবাদ স্বজন তোষণমূলক পুজিবাদ। আওয়ামী লীগ-বিএনপি হলো লুটেরাদের দল। বিকল্প বাম শক্তির উত্থান এখন সময়ের দাবি।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের এই দিনে রাজধানীর পল্টন ময়দানে সিপিবি’র লাখো মানুষের মহাসমাবেশে বোমা হামলা চালায় প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতক চক্র। এই হামলায় খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা হিমাংশু মণ্ডল, খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার সিপিবি নেতা ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর শ্রমিক নেতা আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরা থানার লতিফ বাওয়ানি জুট মিলের শ্রমিক নেতা আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের মোক্তার হোসেন ঘটনাস্থলেই এবং খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কমরেড বিপ্রদাস রায় আহত হয়ে ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ওই বছরেই ২ ফেব্রুয়ারি শহীদের মৃত্যুবরণ করেন। বোমা হামলায় শতাধিক কমরেড আহত হন। এদের মধ্যে অমর মণ্ডল, মো. জাহাঙ্গীর, আব্দুস সাত্তার, মিজানুর রহমান, এম. এ করিমসহ অনেকে পঙ্গু অবস্থায় বেঁচে আছেন।

এছাড়া গত ২০ জানুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার, সকাল ৯টায় এই শহীদদের স্মরণে সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত অস্থায়ী বেদীতে সিপিবি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠন পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়।

শাহবাগে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উক্ত সমাবেশ থেকে ঘোষিত আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত আন্দোলনের কর্মসূচিগুলো হল- বিদ্যুৎ, গ্যাস, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, জাতীয় সম্পদ রক্ষা, পাচারের টাকা উদ্ধার, রেশনিং ও ন্যায্যমূল্যের দোকান খোলার দাবিতে ২৮-২৯ জানুয়ারি ২০২৩ দেশের সকল জেলা-উপজেলায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ, ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ভোট ও ভাতের দাবিতে বিভাগীয় সদর, জেলায়-উপজেলায় সমাবেশ ও পদযাত্রা, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ থেকে দেশব্যাপী গণজাগরণ অভিযাত্রা, ঝটিকা সফর, ৬ মার্চ ২০২৩, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ৭৫তম বার্ষিকীতে মাসব্যাপী নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ।

Back to top button