জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামে পার্বত্য ভূমি কমিশন কার্যকর ও সমতলের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের আহ্বান কাপেং প্রতিনিধির
নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘের সদরদপ্তরে আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ১৬তম অধিবেশনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন যথাযথভাবে কার্যকর ও সমতলের আদিবাসীদের বেহাত হওয়া ভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের’ আহ্বান জানান কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি বাবলু চাকমা।
এজেন্ডা-৪ঃ আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের [অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, সংস্কৃতি, পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার] আলোকে স্থায়ী ফোরামের ৬টি এখতিয়ারভুক্ত ক্ষেত্রসমূহের বাস্তবায়ন সম্পর্কে গত ২৭ এপ্রিল ২০১৭ প্রদত্ত বক্তব্যে বাবলু চাকমা তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের আদিবাসীদের ন্যায় বাংলাদেশের আদিবাসীরাও যে প্রধানতম সমস্যার মুখোমুখী হয় তা হলো বৃহত্তর জনগোষ্ঠী কর্তৃক আদিবাসীদের ভূমি বেদখলের সমস্যা। দেশে বিদ্যমান সরকারি নীতিমালা আদিবাসীদের ভূমি সুরক্ষার ক্ষেত্রে অপ্রতুল মর্মে সরকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় স্বীকার করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাবলু চাকমা বলেন, বাংলাদেশে আদিবাসীদের উপর অধিকাংশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ভূমিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে ২০১৬ সালে আদিবাসীদের ১৫,৪৩০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যেগুলো মূলত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন ও রিজার্ভ ফরেষ্ট ঘোষণার জন্য নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। একই বছরে সমতল অঞ্চলে ১,২১৬ পরিবার আদিবাসী তাদের চিরায়ত ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলে ১,০৩৫ পরিবার উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে রয়েছে। সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা নিরসনের জন্য সরকার একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের নির্বাচনী ওয়াদা করলেও তা এখনো বাস্তবায়ন করেনি বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন বিগত ১৭ বছরেও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ শুরু করতে পারেনি মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ এর বিরোধাত্মক ধারাগুলো সংশোধনের কাজ বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখার ফলে। সম্প্রতি ২০১৬ সালে সরকার এই আইন সংশোধন করেছে যা চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের একটি সাহসী পদক্ষেপ বলে বিবেচনা করা যায়। কিন্তু আইন সংশোধন করলেও ভূমি কমিশনের জন্য সরকার এখনো পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করেনি, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় দু’টি শাখা অফিস স্থাপন করেনি, সর্বোপরি কমিশনের কার্যপ্রণালী বিধিমালা চূড়ান্ত করেনি। কার্যপ্রণালী বিধিমালা ব্যতীত কমিশনের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ তথা বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা কঠিন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
এজন্য তিনি পার্বত্য ভূমি কমিশনের জন্য অচিরেই পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ, কার্যবিধিমালা অনুমোদন, পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ, অপর দু’টি জেলায় শাখা অফিস স্থাপনসহ কমিশনের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা এবং সমতল অঞ্চলের জন্য একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে তদ্বির করতে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামকে আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য যে, গত ২৪ এপ্রিল ২০১৭ নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘের সদরদপ্তরে আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ১৬তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। আগামী ৫ মে পর্যন্ত এ অধিবেশন চলবে। কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে জনসংহতি সমিতি প্রতিনিধি বিধায়ক চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বিনতাময় ধামাই, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি নুহ ওয়ে প্রমুখ আদিবাসী নেতৃবৃন্দ উক্ত অধিবেশনে অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সুদত্ত চাকমার নেতৃত্বে একটি সরকারী প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করছেন।