ছাত্র ইউনিয়নের ৩৯তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন

২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় ছাত্র আন্দোলনের অগ্রদূত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৩৯তম সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ভাষা সংগ্রামী, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. গোলাম আরিফ টিপু। উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি বলেন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সংগ্রামী ঐতিহ্য থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এর ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ওতোপ্রতভাবে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ছিল সমাজ বিপ্লবের চেতনা এবং সেকারণেই স্বাধীন বাংলাদেশে একমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি গৃহীত হয়েছিল। আজ পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের দোসর শাসকগোষ্ঠী সেই শিক্ষানীতিকে পরাজিত করার চক্রান্তে সেটিকে ত্রিমুখী করে ফেলেছে। যাতে শোষিতের ঐক্য গড়ে না উঠে প্রতিক্রিয়াশীল আমলাতন্ত্র জয়লাভ করে। আজকে ছাত্র ইউনিয়নকে প্রকৃত অর্থে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্খিত সমাজ বিপ্লবের পথে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষা সংস্কৃতি রক্ষা করে সমাজ পরিবর্তনের জ্ঞানের চর্চার ও প্রসারের জন্য সংগ্রাম করতে হবে। সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীর পরিচালনায় উদ্বোধনী সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জি এম জিলানী শুভ বলেন বলেন, ছাত্র ইউনিয়ন ৫২’র ভাষা আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ থেকে জন্ম নিয়ে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশের মাটির শিক্ষা সংস্কৃতিকে নির্ধারণ করেছে। একারণেই বাংলাদেশে একমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক সার্বজনীন শিক্ষানীতি গৃহীত হয়েছিল। আজকে কথিত ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্নফাঁস করা হচ্ছে, হেফাজতে ইসলাম-ওলামালীগের প্রেসক্রিপশনে পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সাম্প্রদায়িকীকরণ, বহুজাতিক কোম্পানীর সেবাদাস এবং ভোক্তা তৈরির জন্য আজকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিচালনা করতে গিয়ে ক্রমেই ধ্বংসের পথে নেওয়া হচ্ছে। আজ সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা কার পক্ষে যাব? বহুজাতিক মুনাফাখোরদের পক্ষে নাকি আমাদের শোষিত নিপীড়ত ফসলের মূল্য-মজুরি না পাওয়া কৃষক-শ্রমিকদের পক্ষে যাব। ছাত্র ইউনিয়ন মেহনতি জনতার সাথে ছাত্র সমাজের ঐক্যের কথা বলে। শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ প্রতিরোধে ছাত্র জনতার ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। গত ৩০ ডিসেম্বর রাতের আধারে ভোট চুরির জাতীয় নির্বাচনের এর অনুরূপ ১১ মার্চ ২০১৯-এর যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়,তাতে শিক্ষাক্ষেত্রের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে হত্যা করে শিক্ষার অধিকার আদায়ের সকল পথকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই এখন শিক্ষা অধিকার বাস্তাবায়নের একমাত্র পথ। আহ্বায়কের বক্তব্যে অনিক রায় ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলন সফল করতে সারাদেশের নেতাকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমকে সাধুবাদ জানান।
চেয়ারম্যানের বক্তব্যে সুমন সেনগুপ্ত বলেন বলেন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন তার ৩৮তম সম্মেলনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তার লড়াই সংগ্রামকে আরও বেশি সংঘবদ্ধ করে এগিয়ে নেবে। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, অধ্যাপক এম এম আকাশ, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাজ্জাদ জহির চন্দন, হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল, লুনা নূর, বাকী বিল্লাহ, খান আসাদুজ্জামান মাসুম, মানবেন্দ্র দেব, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট একাংশের সভাপতি ইমরান হাবিব রুম্মন, অপরাংশের সভাপতি মাসুদ পারভেজ সহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ শেষে একটি র্যালি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে দিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেসিয়ামে গিয়ে শেষ হয়। আগামীকাল ২৬ এপ্রিল ছাত্র ইউনিয়নের ৬৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষীকিতে বিকেলে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক ইউনিয়নসহ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে অংশগ্রহণ করবে সারাদেশ হতে আগত সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের শিল্পীবৃন্দ। এছাড়াও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে অংশগ্রহণ করবে বিভিন্ন ব্যান্ড। ২৭ ও ২৮ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল অধিবেশনের মধ্য দিয়ে ৩৯তম সম্মেলনের পর্দা নামবে।