ইউরোপের দরজায় কড়া নাড়ছেন ঋতুপর্ণা চাকমা ও তার সতীর্থরা
সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয় করে প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। এই অসামান্য অর্জনে দলের খেলোয়াড়রা বিশেষ করে মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা চাকমা প্রধান ভূমিকায় অবদান রেখেছেন। ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে শেষ গোলটি করে ২-১ ব্যবধানে দলকে শিরোপা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখেন তিনি এবং টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতি পান। সাফের এই সাফল্যের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংবর্ধনা পাচ্ছেন ঋতুপর্ণা। তবে তার জন্য এসেছে আরও একটি বড় সুখবর। সাফ চলাকালীন সময়ে ভারত এবং ইউরোপের দুটি ক্লাব থেকে খেলার প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি, যা দেশের নারী ফুটবলের জন্য নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের ভারতীয় ক্লাব থেকে খেলার প্রস্তাব পাওয়ার ঘটনা অবশ্য নতুন কিছু নয়, তবে ইউরোপীয় ক্লাবের প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। ঋতুপর্ণা জানিয়েছেন, তিনি এখনই ইউরোপের সেই ক্লাবটির নাম প্রকাশ করতে রাজি নন, তবে সবকিছু চূড়ান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেবেন। উল্লেখ্য, সাবিনা খাতুন ২০১৮ সালে ভারতীয় ক্লাব সেথু এফসির হয়ে এবং গত বছর ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগের কিকস্টার্ট এফসির হয়ে খেলেছেন। এবার একই ক্লাব থেকে ঋতুপর্ণাকেও খেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এদিকে ঋতুপর্ণার পাশাপাশি তার সতীর্থ মনিকা চাকমা, তহুরা খাতুন ও সাবিনাকেও নর্থ মেসিডোনিয়ার শীর্ষ নারী ফুটবল ক্লাব টিভেরিজা ব্রেরা দলে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
নর্থ মেসিডোনিয়ার শীর্ষ লিগের ক্লাব টিভেরিজা ব্রেরা বর্তমানে লিগের শীর্ষে অবস্থান করছে এবং বিদেশি কোটায় বাংলাদেশের ফুটবলারদের অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। ক্লাবটির জেনারেল ডিরেক্টর আলেকসান্দ্রা টেরজিস্কি জানিয়েছেন, তারা সাফের সেমিফাইনাল খেলা দেখে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। তার মতে, ঋতুপর্ণা ও সাবিনাকে জানুয়ারিতে তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে এবং দিল্লিতে গিয়ে ভিসা সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। আপাতত বিদেশি কোটার সীমাবদ্ধতার কারণে তারা এই দুই ফুটবলারকে নিতে চায়, তবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আরও প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের নিতে চায় বলে তিনি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের বিদেশি লিগে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা নতুন নয়। এর আগে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকার, সানজিদা আক্তার ও মাতসুশিমা সুমাইয়া ভারতের বিভিন্ন ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এছাড়া সম্প্রতি এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভুটানের রয়েল থিম্পু কলেজের হয়ে অংশ নিয়েছেন মারিয়া মান্ডা, মনিকা ও ঋতুপর্ণা। তবে ইউরোপীয় লিগে খেলার এই সুযোগ বাংলাদেশের নারী ফুটবলের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে এবং দেশের ফুটবলকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।
এই অর্জন বাংলাদেশের নারী ফুটবলের জন্য একটি নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। দেশের জন্য এটি কেবল সাফল্যের পরিচায়ক নয়, বরং আরও বড় সুযোগ ও সম্ভাবনার দরজাও খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহযোগিতা পেলে ঋতুপর্ণা ও তার সতীর্থরা ইউরোপে পেশাদার ফুটবল খেলার মাধ্যমে দেশের জন্য আরও বড় সাফল্য এনে দিতে সক্ষম হবেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।