সুনামগঞ্জের ছাতকে আদিবাসী পল্লীতে অগ্নিকান্ডঃ ৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি অপরাধীরা
সুনামগঞ্জের ছাতকের রাসনগরের আদিবাসী পল্লীর এক মণিপুরী কৃষকের ধানের ভাড়াল (ধান রাখার ঘর) দুস্ক্রতকারীরা আগুন দিয়ে জালিয়ে দেওয়ার ঘটনার ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখানো হামলাকারীদের ধরতে পারেনি। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করার পর বাংলাদেশ মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতির ছাতক শাখার সভাপতি ব্রজেন্দ্র সিংহকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়ায় তিনি এখন বাড়ি থেকে পালিয়ে পৌর শহরের একটি আবাসিক হোটেলে আশ্রয় নিয়েছেন।
মামলা ও ঘটনার সুত্রে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী পাহাড় টিলা ঘেরা অধুষ্যিত ছাতকের রাসনগরের মৃত দেবেন্দ্র সিংহের ছেলে মণিপুরী সমাজের নেতা ও কৃষক ব্রজেন্দ্র সিংহ’র বাড়িতে থাকা ধানের ঘরে গত ১৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে একদল দুর্বৃত্ত পরিকল্পিত ভাবে আগুন জালিয়ে দেয়।’ এতে খোরাকীর ধান ও কৃষি উপকরণ, আসবাব পত্র সহ তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে দুবৃক্তরা। ঘটনার দিন বাড়িতে থাকা গৃহিনী ব্রজেন্দ্র সিংহের স্ত্রী দীপালী রাণী সিনহাকে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বনগাঁওর সাবেক ইউপি সদস্য প্রভাবশালী নুরুল হক তার লোকজনকে সাথে নিয়ে বসত বাড়ির নিজস্ব ভুমি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে হুমকি প্রদান ও শাসিয়ে আসেন।
নুরুল হক দীপালী সিংহকে উদ্দেশ্য করে ওদিন দুপুরে প্রকাশ্যেই বলেন ‘‘কয়েকটা মণিপুরী না কাঁটলে, আর পেট্রোল দিয়া না জালাইলে সোজা অইত না। একই দিন পার্শ্ববর্তী নোয়াকোট বিওপির বিজিবির টহল দল পাঠিয়েও একদফা পাথর উত্তোলনে বাঁধা প্রদান করান নুরুল হক। এদিকে নুরুল হক চলে আসার ঘন্টা খানেক পরই দুর্বৃত্তরা বসত ঘরের সামনে থাকা ধানের ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে ওই দিন ছাতক থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করে ফিওে আসে। এরপর সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার ছাতক-দোয়ারাবাজার (সার্কেল), থানার ওসি, ওসি (তদন্ত) পুলিশের অপর একটি টিম ফের মধ্যরাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কিছু আলামত জব্দ করে থানায় ফিরে আসেন।
ব্রজেন্দ্র সিংহ মঙ্গলবার বিকেলে গণমাধ্যকে জানান, ঘটনার পরদিন ১৪ এপ্রিল সন্দিগ্ন হিসাবে পার্শবর্তী বনগাঁও’র মৃত সিফত উল্লাহর ছেলে ইন্তাজ আলী, হাজি আবদুল বারীর ছেলে নুরুল হক, পুরান নোয়াকোট গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে আঞ্জব আলী সহ অজ্ঞাত নামা আরো ১০ থেকে ১২ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা থানায় দায়ের করি।’ আমার ধারণা, ওই চক্রটি গত কয়েক বছর ধরে আমার পরিবারকে টিলাভুমি থেকে উচ্ছেদ করে পাথর লুটের অপচেষ্টা করে আসছে এমনকি ঘটনার দিন পুর্ব পরিকল্পিত ভাবে আগুনে আমার পরিবারের লোকজনকে হতাহত করতেই তাদের ইন্দনে, তাদেরই লোকেরাই ধানের ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
ঘটনার ব্যাপারে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বনগাঁওর বাসিন্দা নুরুল হকের বক্তব্য জানতে চাইলে ওই দিন সন্ধায় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ব্রজেন্দ্র সিংহের বাড়িতে আমি গিয়েছিলাম তার খোঁজে, সেখানে পাথর উত্তোলন দেখে জানতে চেয়েছি সে কোথায় আছে ও কার অনুমতি নিয়ে পাথর উঠানো হচ্ছে?
এদিকে থানা সন্ধিগ্ন হিসাবে মামলা দারের পর থেকেই ‘‘ব্রজেন্দ্র সিংহের শরীরের রক্ত দিয়ে গোসল করার হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে নুরুল হকের লালিত ইন্তাজ আলী ও তার মেয়ের জামাই নুরুজ্জামান । ব্রজেন্দ্র সিংহ মঙ্গলবার জানান, আমি প্রাণের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে গত ৪ রাত ধরেই ছাতক পৌর শহরের একটি হোটেলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি।
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার ছাতক-দোয়ারাবাজার (সার্কেল) মো. দোলন মিয়ার বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি মঙ্গলবার বিকেলে গণমাধ্যকে বলেন, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এখন পর্য্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্য্যন্ত এ ব্যাপারে আপাতত কিছুই বলা যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, মামলার বাদীকে কেউ হুমকি দিয়ে থাকলে তিনি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ তার নিরাপওার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।