সরকার চুক্তিকে পদদলিত করছেঃ পিসিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সন্তু লারমা
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা অভিযোগ করে বলেছেন, দীর্ঘ দুদশক ধরে সশস্ত্র সংগ্রামের পর ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু চুক্তির ১৯ বছর অতিবাহিত হলেও চুক্তি স্বাক্ষরকারী সেই শেখ হাসিনার সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না বরং পার্বত্য চুক্তিকে অবধমিত ও পদদলিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি জুম্ম জাতিকে বিলুপ্তির জন্য যড়ষন্ত্র চালানো হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন,বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে উপনেবিশক কায়দায় পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসিত হয়ে আসছে। এক সময় অমুসলিম অধ্যূষিত অঞ্চলকে এখন মুসলিম অধ্যূষিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে। এ অঞ্চলকে ইসলামিক সম্প্রসারণবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। আজকে পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসী জুম্ম জনগণকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হয়েছে। ফলে জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব বিলুপ্তি আজ অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান বাস্তবতায় নতুন করে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রামের চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে।
গতকাল শনিবার রাঙামাটিতে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ২৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দুদিন ব্যাপী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।
রাঙামাটি সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট প্রাঙ্গনে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে সভাপতি সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় বিদায়ী সভাপতি বাচ্চু চাকমা। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফকরোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ব বিভাগের সহকারী সহকারী অধ্যাপক মহিউদ্দীন মাহিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বসুমিত্র চাকমা, এমএন লারমা মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশনের সভাপিত বিজয় কেতন চাকমা, শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি জিএম জিলানী শুভ, ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন প্রিন্স,পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙামাটি শাখার সভাপতি টোয়েন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক চন্দ্রা ত্রিপুরা। স্বাগত বক্তব্যে দেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতা সুমন মারমা।
এর আগে জাতীয় ও দলীয় পাতাকা উত্তোলন করা হয়। তারপর বেলুন উড়িয়ে দুদিন ব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সন্তু লারমা। অনুষ্ঠানে গণ সংগীত পরিবেশন করে গিরিসুর শিল্পী গোষ্ঠীরা। দুদিন ব্যাপী সম্মেলনে তিন পার্বত্য জেলা থেকে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মী অংশ নিচ্ছেন।
সন্তু লারমা তার বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের অন্যতম স্বাক্ষরকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জসংহতি সমিতি চুক্তি বাস্তবায়নে আন্দোলন করতে গিয়ে সরকার জনসংহতি সমিতিকে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজী আখ্যায়িত ও চিহ্নিত করে নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পাহাড়ী গণ মানুষের স্বাধিকার অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করতে না পারে সেই জনসংহতি সমিতিকে চিরতরে বিলুপ্তি করতে।
পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সুবিধাবাদী ও প্রতিক্রীয়শীলদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সুবিধাবাদী ও প্রতিক্রীয়াশীল যারা রয়েছেন তাদের ভূমিকা হচ্ছে আত্মঘাতি ভূমিকা। এসব চুক্তি বিরোধী ও প্রতিক্রীয়াশীলরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের যে আশা আকাংখা রয়েছে তার পদদলিত করে চুক্তি যাতে বাস্তবায়িত না হতে পারে সেই ষড়যন্ত্র জালে আবদ্ধ হয়েছে। যারা চুক্তি বিরোধী ও প্রতিক্রীয়াশীল তারা সতর্ক হোন ও নিজেদের অবস্থান নিয়ে ভাবুন। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে নতুন করে বেঁচে থাকার সংগ্রাম শুরু হতে যাচ্ছে।
তিনি জুম্ম জনগণের সামাজিক,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক,স্বাধিকার ও অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্র ও যুব সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।