আঞ্চলিক সংবাদ

জ্ঞান সমৃদ্ধ জাতি বিনির্মাণে বান্দরবানে ইয়াংঙান ম্রো’র স্বপ্নের পাঠাগার এর যাত্রা শুরু

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): ম্রো আদিবাসীদের প্রথম লেখক ও লেখক ইয়াংঙান ম্রো। তাঁর স্বপ্নের পাঠাগার এর যাত্রা শুরু হয়েছে আজ থেকে। এটিকে তারা নিজেদের ভাষায় ‘সাংচিয়া তেকরা-সাংচিয়া শুনতারা কিম’ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। বাংলায় যা অর্থ ‘গল্প বলা-গল্প শোনার ঘর’। জেলা শহর থেকে ২০কিলোমিটার দুরে চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে রামরি পাড়ায় ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো”র উদ্যােগে এর শুভ উদ্বোধন করা হয়।
আজ শুক্রবার, সকাল ১১টায় পাঠাগার এর মঙ্গল ও উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করে প্রার্থণার মাধ্যমে গল্প বলা ও গল্প শোনার পাঠাগার শুভ উদ্বোধন করেন ক্রামা ধর্মের ধর্মীয়গুরু লংঙি ম্রো।

চিম্বুক পাহাড় এলাকায় প্রথম পাঠাগার এর প্রতিস্থাতা লেখক ও গবেষক ইয়াং ঙান ম্রো বলেন, আমার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছিল, যখন খুব ছোট ছিলাম তখন থেকেই। মা-বাবারা অবসর সময়ে বিভিন্ন গল্প বলে শোনাতেন। তখন মা-বারা মুখে মূখে অনেক গল্প বলতেন সেই সমস্ত গল্পগুলো লিখিত আকারে সংরক্ষন করার চেষ্টা করেছি এবং এই পাঠাগার তৈরী করার ফলে প্রয়াত তার মা-বাবা”র আত্মাও শান্তি পাবে এলাকার মানুষেরও মঙ্গল হবে বলে মনে করেন তিনি। বর্তমানে ছোটপরিসরে শুরু করলেও আগামীতে ঘরটি বড় করার ইচ্ছে আছে বলে জানান ইয়াংঙান ম্রো।

তিনি আরো বলেন, রামরি পাড়ার আশে পাশে প্রাইমারী স্কুল ও ছাত্রাবাস আছে। সেখান থেকে ম্রো ছাত্র-ছাত্রীরা বন্ধের সময় এখানে এসে বই পড়বে। ম্রো জনগোষ্ঠীর যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত আছে তারা ছুটি পেলে এই পাঠাগারে এসে নিজেদের সুখ দুঃখের আলাপ করবে। আলোচনা করবে নিজেদের সংস্কৃতি,ইতিহাস,এতিহ্য নিয়ে। এবং নিজেদের জীবনের গল্প করবে, জ্ঞান বিনিময় হবে। ধীরে ধীরে ম্রো সমাজ জ্ঞান বিজ্ঞানে সব দিক দিয়ে সমৃদ্ধ জাতি গড়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ছাত্র ও যুব সমাজকে সেখানে নিয়ে নিজেদের গল্প,সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করা হবে,ছাত্র ও যুব সমাজকে সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন হবে। তাদের গল্পের মাধ্যমে একে-অপরের জ্ঞান বিনিময় হবে দেশ ও সমাজের ভাল কাজে উৎসাহিত করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।

উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে রোয়াংছড়ি কলেজের প্রভাষক অমর বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে জুমবাগানে গল্প বলা ও গল্প শোনার ঘরটি খুবই ভালো উদ্যোগ। ম্রো সমাজের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি, ঐতিহ্য লিখিত রুপ না থাকার কারণে অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। যেগুলো হারিয়ে গেছে তা পূনরুদ্ধার করা আরো যে সমস্ত রুপ কথার গল্প,সংস্কৃতি,ইতিহাস, ঐতিহ্য লিখিত আকারে সংরক্ষণ করা যায় সে গুলো ম্রো সমাজের তরুন প্রজন্ম চর্চার সুযোগ পাবে। তিনি বিভিন্ন লেখকের ১৭টি বই উপহার প্রদান করেন এই পাঠাগারে।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো বান্দরবান প্রতিনিধি সাংবাদিক বুদ্ধজ্যােতি চাকমা, এসএ টিভি”র বান্দরবান প্রতিনিধি উসিথোয়াই মারমা, ঢাকা মেইল বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি সুফল চাকমা, রুইপো পাড়া সরকারী প্রাথমি বিদ্যালয়ের শিক্ষক মেনচং ম্রো, চিম্বুক পাহাড়ের ড্রাগণ মাষ্টার খ্যাত তোয়ো ম্রো,সাংবাদিক মংহাইসিং মারমা প্রমূখ।

উল্লেখ্য যে ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচ্য ভাষা ও পালি বিভাগ থেকে ২০১২ সালে মাস্টার্স শেষ করে ম্রো ভাষা ও জাতিগোষ্ঠি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। এযাবৎ তার ম্রো ভাষার ব্যাকরণসহ ১৯টি ও বাংলায় ১০টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

Back to top button