রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের কারণ অনুসন্ধানে জাতীয় কমিটি
রাঙামাটি বান্দরবানসহ বিভিন্ন স্থানে গত ১৩ জুন সংঘটিত পাহাড়ধসের কারণ অনুসন্ধান এবং করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নে গঠিত জাতীয় কমিটি মঙ্গলবার দুপুরে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটি পরিদর্শনে গেছে। কমিটির আহ্বায়ক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সত্যব্রত সাহা বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুপারিশ তৈরি করা হবে। এটি সাত দিনেও হতে পারে, ১৫ দিনের মধ্যেও হতে পারে। তবে এটা ধরে নেন, সাত মাস কিংবা ১৫ মাস গড়াবে না।’
২৭ সদস্যের এই কমিটি রাঙামাটি বান্দরবানসহ বিভিন্ন স্থানে গত ১৩ জুন সংঘটিত পাহাড়ধসের কারণ অনুসন্ধান এবং করণীয় নির্ধারণ করবে। রাঙামাটি রওনা হওয়ার আগে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলনকক্ষে একটি সভা করে কমিটি। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন সত্যব্রত সাহা। সভায় সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সহমত থাকা দরকার বলে অনেকে মন্তব্য করেন।
সভায় ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ১২৭ জন মারা যাওয়ার পর কমিটির ৩৬ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। ওই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার সমালোচনা করেন বিভিন্ন বক্তা।
২০০৭ সালে পাহাড়ধসের পর গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ওই সময় পাহাড়ধসের নানা কারণ চিহ্নিত করে ৩৬ দফা সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। আবার পাহাড়ধসের পর নতুন করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব সত্যব্রত সাহা বলেন, ‘আমাদের কাছে ২০০৭ সালের একটি সুপারিশনামা আছে। এটি আমাদের কাজে লাগবে। এখন আমরা আবার যাচ্ছি। ভূমিধসের কারণ চিহ্নিত করে এ-সংক্রান্ত করণীয় নির্ধারণে সুপারিশ তৈরি করে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেব। আগে কী হয়েছে, কী হয়নি তা নিয়ে আমি ভাবব না। আমরা ভিকটিমসহ সবার সঙ্গে কথা বলব। আমি সবাইকে নিয়ে এর মূল কারণ খুঁজে বের করব।’
আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে প্রথমবারের মতো সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির আহ্বায়ক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সত্যব্রত সাহা।
সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অর্ধেন্দু শেখর রায় বলেন, ‘আমরা সুপারিশ নির্ধারণ করব। সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সহমত দরকার। আমরা কার্যকর প্রতিবেদন দেব।’
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) সৈয়দা সারোয়ার জাহান, জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল হক প্রমুখ সভায় মতামত তুলে ধরেন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, এসব পাহাড়ে কোনোভাবেই মানুষদের বাস করতে দেওয়া উচিত নয়। উচ্ছেদ করতে গেলে কারা কারা বাধা দেয়, তাদেরকেই আগে চিহ্নিত করতে হবে। তবেই এ ক্ষেত্রে সমাধান মিলবে। আমি মনে করি, এই কমিটি এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করবে।
সভায় ইউএনডিপির রিকভারি অ্যাডভাইজর সেপা গিরি বলেন, পাহাড়ধস ঠেকানো এবং পাহাড়ে বসতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা দরকার। এ ছাড়া পাহাড়ধসের পূর্বাভাসসহ বিভিন্ন বিষয়ে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো