জাতীয়

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে স্কটল্যান্ডে ইউএনপিও’র ১৩তম সাধারণ সম্মেলনে রেজুলেশন গ্রহণ

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ শহরে অনুষ্ঠিত প্রতিনিধিত্বহীন জাতি ও জাতিগোষ্ঠীর সংগঠন (ইউএনপিও) এর ১৩তম সাধারণ সম্মেলনে এক রেজুলেশন গ্রহণ করা হয়েছে। উক্ত রেজুলেশনে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচি ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত ২৬-২৮ জুন ২০১৭ ইউএনপিও’র এই ১৩তম সাধারণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে ইউএনপিও’র অতীত ও ভবিষ্যত কার্যক্রম ও কর্মকৌশল বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া উক্ত সম্মেলনে ৮-সদস্যক প্রেসিডেন্সীর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউএনপিও’র সাধারণত ১৮-২৪ মাস অন্তর একবার সাধারণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইউএনপিও’র ২৪টি সদস্য-সংগঠনের প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। পাবত্য চট্টগ্রাম থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ সভাপতি ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার এবং জনসংহতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রণতি বিকাশ চাকমা উক্ত সম্মেলনে যোগদান করেন। উক্ত ১৩তম সম্মেলনে পশ্চিম বেলুচিস্তানের মি. নাসের বোলাদাই’কে প্রেসিডেন্ট এবং আফ্রিকার ওগাডেন থেকে মি. আবদিরহমান মাহদি ও ওয়ার্ল্ড ওইগুর কংগ্রেসের মি. দোলকুন ইসাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত করা হয়।
ইউএনপিও সাধারণ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত গৃহীত রেজুলেশনে আরো বলা হয় যে, দীর্ঘ আড়াই দশক ধরে আন্দোলনের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দুই দশক অতিক্রান্ত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যাবলী হস্তান্তর; পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ; ‘অপারেশন উত্তরণ’সহ অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার; ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিকরণ, ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের স্ব স্ব জায়গা-জমি প্রত্যর্পণসহ পুনর্বাসন; পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল চাকুরিতে জুম্মদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়োগ, চুক্তির সাথে সঙ্গতি বিধানকল্পে পুলিশ এ্যাক্ট, পুলিশ রেগুলেশন ও ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য অন্যান্য আইন সংশোধন; সেটেলার বাঙালিদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসন ইত্যাদি চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ এখনো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।

ইউএনপিও সাধারণ সম্মেলনে বলা হয় যে, ১৫ বছর ধরে দেনদরবারের পর অবশেষে গত ৬ অক্টোবর ২০১৬ জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন ২০১৬ পাশ করা হয়। কিন্তু আইন সংশোধন করলেও ভূমি কমিশনের জন্য সরকার এখনো পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করেনি, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় দু’টি শাখা অফিস স্থাপন করেনি, সর্বোপরি কমিশনের কার্যপ্রণালী বিধিমালা চূড়ান্ত করেনি। কার্যপ্রণালী বিধিমালা ব্যতীত কমিশনের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ তথা বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা কঠিন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
রেজুলেশনে আরো বলা হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও আদিবাসী বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন জোরদার হয়েছে। অবৈধ গ্রেফতার ও আটক, অমানুষিক নির্যাতন, অস্ত্র গুঁজে দিয়ে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায় জড়িত করে জেলে প্রেরণ, তল্লাসীর নামে জনসংহতি সমিতির অফিসসহ ঘরবাড়ির জিনিসপত্র তছনছ ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

Back to top button