পানছড়িতে আদিবাসী শিশু ধর্ষণ; কুকীর্তির দায় আমাদের সকলেরঃ ইমতিয়াজ মাহমুদ
(১)
আপনি কি পানছড়ি জায়গাটার নাম জানেন? খাগড়াছড়ি জেলায়। আপনি যদি বাংলাদেশের মানচিত্র খোলেন দেখবেন কুমিল্লার উপর হয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উপর দিয়ে কর্কট ক্রান্তি রেখাটা খাগড়াছড়ির উপর দিকে স্পর্শ করেছে। যেখানে কর্কট ক্রান্তি রেখাটা খাগড়াছড়িকে স্পর্শ করেছে ঠিক সেইখান থেকে সামান্য একটু নিচে নামলে দেখবেন একটা সরু পাহাড়ি নদী বয়ে গেছে নীচের দিকে। এটা হচ্ছে চেঙ্গি নদীর উপরের অংশ। এই নদীটা ধরে নীচের দিকে নামতে থাকলে একটু পরে পাবেন লোগাং। আপনি যদি আমাদের পাহাড়ের ইতিহাসের কোন খোঁজ খবর রাখেন, তাইলে নিশ্চয়ই লোগাং এর নাম শুনেছেন। এই হচ্ছে লোগাং গণহত্যার জায়গাটি- লোগাং।
লোগাং থেকে আরেকটু নিচে নামলে দেখবেন চেঙ্গি নদীটি সামান্য একটু স্ফিতকায়া হয়েছে। এখান থেকে শুরু হয়েছে পানছড়ি। আঁকাবাঁকা হয়ে পানছরির মাঝখান দিয়ে লাস্যময়ী চালে চলতে চলতে রূপসী চেঙ্গি খাগড়াছড়ি শহরের দিকে চলে গেছে। এই যে চেঙ্গির দুই পারে পানছরি, এই পুরো জায়গাটাই পাহাড় আর এইখানে একসময় বাস করতো কেবল আমাদের আদিবাসী পাহাড়িরা। এই পুরো পাহাড় আর অরণ্য নিয়ে আদিবাসীরা বাস করতো ওদের নিজেদের মতো। এখন আর সেই অবস্থা নাই। এখন সেখানে সেটেলাররা ঢুকেছে। ওরা সেখানকার পরিবেশ নষ্ট করছে আর আদিবাসী মানুষজনকে অত্যাচার করছে।
এই সেটেলাররা আদিবাসীদের উপর যে অত্যাচার করছে সেটা তো পুরো পাহাড় জুড়েই করছে। তাইলে আজকে শুধু পানছড়ির কথা কেন বলছি? সেটেলাররা কোথায় নাই? পাহাড়ের সর্বত্র। আজকে বিশেষভাবে শুধু পানছড়ির কথাটাই বলছি তার কারণ হচ্ছে কয়েকদিন আগে এই পানছড়িতে আরেকটা সেটেলার তস্কর আমার আরেকটা পাহাড়ি শিশুকে ধর্ষণ করেছে, গতকাল সেই সেটেলার ধর্ষক ধরাও পরেছে পুলিশের হাতে। এইসব খবর দেখে গতকাল সন্ধ্যায় আমি গুগল আর্থএ পানছড়ি খুলে পানছড়ির সবুজ দেখছিলাম আর বিষন্ন হচ্ছিলাম।
(২)
পানছড়িতে একটা শিশু- ক্লাস সিক্সে পড়ে একটা বাচ্চা মেয়ে- গিয়েছিল বাড়ীর পাশে বাঁশ-কোড়ল আনতে। সেখানে এই শিশুটিকে ধর্ষণ করে এক বাঙালি মুসলমান সেটেলার। আহত রক্তাক্ত মৃতপ্রায় শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে সেখানকার ছাত্র যুবক ও রাজনৈতিক কর্মীরা রাস্তায় নামে প্রতিবাদে। প্রতিবাদের মুখে পুলিশ মোহাম্মদ আবদুল খালেক নামের ধর্ষকটিকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের কাছে মোহাম্মদ আবদুল খালেক তার কুকর্মের কথা স্বীকারও করেছে।
ধর্ষণ তো এমনিতেই একটা ঘৃণ্য অপরাধ। আর শিশু ধর্ষণ? আপনি ভেবে দেখেছেন কখনো? কি করে পারে লোকে?
ধর্ষণ তো সর্বত্রই হয়। সমতলেও হয় পাহাড়েও হয়। এই তো কয়েকদিন আগে একটা খবর ঘুরে বেড়াচ্ছিল অন্তর্জালে যে এক মসজিদের হুজুর ছোট একটি শিশুকে মেরে ফেলেছে ধর্ষণ করতে গিয়ে। হুজুরটি নাকি নিজেই স্বীকার করেছে যে সে যখন দেখল যে মেয়েটি বেশী ছোট, ধর্ষণের লায়েক না, তখন মেয়েটিকে মেরে পুকুরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। মসজিদের বা মাদ্রাসার হুজুরদের এইসব খবর মাঝে মাঝেই আসে। হুজুররা ছাড়াও, এমনিও সবখানেই ধর্ষণের খবর আপনি পাবেন মাঝে মাঝেই। যতদিন পর্যন্ত আমাদের সমাজ আমাদের ধর্ম নারীকে মানুষের মর্যাদা না দিবে ততদিন পর্যন্ত ধর্ষণ থাকবেই। ধর্ষণ তো আর মানুষ শারীরিক চাহিদার জন্যে করে না।
কিন্তু আমাদের এই পাহাড়ের ব্যাপারটা ভিন্ন। কেন ভিন্ন? কারণ এখানে নারীর উপর নির্যাতনের সাথে সাথে আদিবাসীর উপর দখলদার জনগোষ্ঠীর নির্যাতনও জড়িত। এই কারণে সমতলের একটি ধর্ষণের চেয়ে পাহাড়ে আদিবাসী নারীর উপর হয়ে যাওয়া অত্যাচারটি আরও ঘৃণ্য এবং আরও নিন্দনীয় অপরাধ। এবং আমার জন্যে- আমি যেহেতু একজন বাঙালি- এই অপরাধগুলির দায় বহন করাটা নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পড়ে।
(৩)
আপনি হয়তো বলবেন, যে না ভাই, অপরাধ তো অপরাধই, একজন মানুষের প্রতি আরেকজন মানুষের অপরাধ, এখানে কেন আপনি আদিবাসী আর বাঙালি এই বিভেদ করছেন? কারণ এইখানে ধর্ষণটিকে ব্যাবহার করা হচ্ছে জাতিগত সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে। অনেকটা যুদ্ধের সময় ধর্ষণ যেরকম একটা হাতিয়ার বা যুদ্ধকৌশল হিসাবে ব্যাবহার হয়, তারই মতো।
বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে? আপনা কি মনে হচ্ছে যে ইমতিয়াজ খালি খালি ছোট একটা ব্যক্তিগত অপরাধকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বাগাড়ম্বর করছে? তাইলে একটু ভেবে দেখেন। প্রথমে দেখেন কারা এই সেটেলাররা আর তারপর দেখেন আদিবাসীদের সাথে তাঁদের সম্পর্কটা কি।
এই সেটেলাররা কারা? সমতল থেকে এরা পাহাড়ে গিয়ে বসবার করছে। এইটুকু বললে বিষয়টা খুবই সরল আর নিষ্পাপ মনে হয়। একই দেশের মধ্যে সমতল থেকে একটা লোক ভাগ্যের অন্বেষণে বা অন্য কোন কারণে দেশেরই ভিতরে পাহাড়ে গিয়ে বসবাস করতে কেন পারবে না? কুমিল্লা থেকে একজন যদি গিয়ে রংপুরে বসবাস করতে পারে তাইলে ময়মনসিংহ থেকে কেন একজন গিয়ে পানছড়ি বসবাস করতে পারবে না বা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে না। অবশ্যই পারবে। ব্যাপারটা যদি এইরকম সরলভাবে হতো তাইলে কারো কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু এই সেটেলাররা তো এই প্রক্রিয়ায় পাহাড়ে আসেনি।
জিয়াউর রহমানের সময় সরকারী ভাবে সরকারী খরচে এইসব সেটেলারদেরকে ঝাঁকে ঝাঁকে নিয়ে গিয়ে পাহাড়িদের জায়গা ওদের নামে বরাদ্দ দিয়ে সেখানে সেটল করা হয়েছে। কেবল তাই না, এইসব সেটেলারদেরকে নিয়ম করে রেশন দেওয়া হয়েছে (সম্ভবত এখনো ওদেরকে রেশন দেওয়া হয়), যেন ওরা সেখানে থেকে খেতে পরতে পারে আর সেখান থেকে চলে না আসে। আর সেই সাথে যুক্ত হয়েছে পাহাড়ের বেসামরিক প্রশাসন আর সামরিক বাহিনীর লোকেদের সেটেলারদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ। এটা হচ্ছে কৃত্রিমভাবে একটি এলাকার ডেমোগ্রাফি পাল্টে দেওয়া।
ফলাফল কি হয়েছে? আদিবাসী আর সেটেলারদের আপনি মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলেন। এখন সেটেলাররা হয়ে গেল শাসক সম্প্রদায় আর আদিবাসীরা শাসিত। আদিবাসীদের চিরায়ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ধরন ভেঙে পড়লো। দুর দুর পাহাড়ে যেসব আদিবাসী ওদের নিজেদের মত ট্র্যাডিশনাল ভূমি ব্যবহার করতো সেই পন্থায় বিঘ্ন ঘটে গেল। একবার জুম চাষের পর একটা পাহাড়ে যে কিছুদিনের বিরতি দেওয়া হতো সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। প্রাকৃতিক ভারসাম্য গেল নষ্ট হয়ে। আর কিছুদিনের মধ্যেই পাহাড়ের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ চলে গেল মূলত সেইসব সেটেলারদের হাতে।
(৪)
হ্যাঁ, পাহাড়ে অশান্তি হয়েছে। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সশস্ত্র আন্দোলনের লাইন নিয়েছিলেন। সেই লাইন সঠিক ছিল কি না এটা এখন একটা ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের ব্যাপার। কিন্তু দুইটা জিনিস ভুললে চলবে না।
প্রথমটা হচ্ছে এই সশস্ত্র সংগ্রামটা শুরু হলো কেন? কাপ্তাই বাঁধ নিয়ে আদিবাসীদের বঞ্চনার কথা আপনারা জানেন। স্বাধীনতার পর যুক্ত হলো জাতিগত স্বতন্ত্র পরিচয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না পাওয়া। কিন্তু সেটা তো রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল। সেই সমস্যার রাজনৈতিক মীমাংসা সম্ভব ছিল। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটা সমতাভিত্তিক অভিন্ন জাতিসত্ত্বা তৈরি করতে। সেখানে আদিবাসীদের স্বতন্ত্র পরিচয়ের স্বীকৃতি না দেওয়া অবশ্যই ভুল ছিল। সেটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই শুধরানো যেতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর যখন আদিবাসীদেরকেই ওদের নিজভূমিতে সংখ্যালঘুতে পরিণত করার স্কিম নিলো আমাদের সেসময়ের সরকার, তখন কি আর ইস্যুটা সরল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে?
দ্বিতীয় ব্যাপারটা হচ্ছে, সেই সময়ে, অর্থাৎ সত্তরের দশকে সশস্ত্র সংগ্রামের লাইনটা সারা দুনিয়াতেই একটা প্রায় স্বীকৃত রাজনৈতিক পন্থা ছিল। আমাদের দেশেই সমতলে মাওবাদীরা সশস্ত্র সংগ্রামের লাইন নিয়েছিল। ভারতে নকশাল ছিল। আমদের দেশ ছাড়াও, আফ্রিকায় ও ল্যাটিন আমেরিকায়ও দেখবেন সেই সময় জাতীয় মুক্তির সংগ্রামগুলি সশস্ত্র লাইনেই ছিল।
জনসংহতি সমিতির কি বিশ্লেষণ আমি জানিনা। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে এইসব ব্যাপার মিলিয়ে জনসংহতি সমিতির সেসময় কেন সশস্ত্র সংগ্রামের লাইন নিয়েছিল সেটা আমি বুঝতে পারি। আপনি যদি সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে ব্যাপারটা দেখেন- সমর্থন করবেন কি না সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ- কিন্তু পাহাড়ে ওরা কেন সশস্ত্র সংগ্রামে গেল সেটা আপনিও বুঝতে পারবেন। চূড়ান্ত বিচারে সশস্ত্র সংগ্রামে যাওয়াটা ভুল ছিল কি সঠিক ছিল সেটা ভিন্ন আলোচনা যদিও।
এখন জিয়াউর রহমান যখন সেটেলারদেরকে সেখানে ঢুকিয়ে পাহাড়িদের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিল তখন পুরো সমস্যাটা- যেটা ছিল একটা নীতিগত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার- সেটা আর কেবল রাজনৈতিক সমস্যা থাকলো না।
(৫)
এই সবকিছুরই নেট ফলাফল দাঁড়ালো, সেটেলাররা এখন দখলদার মনোবৃত্তি নিয়ে সেখানে বসবাস করে। ওরা ভাবে আমরা শাসক জাতি, পাহাড়িদের চেয়ে উন্নত ও সভ্য। এইসব নাকবোচা জংলীদেরকে এতো গুরুত্ব দেওয়ার কি আছে। আমরা পাহাড়কে ‘উন্নত’ করবো, এখানে রাস্তা বানাবো, পর্যটন কেন্দ্র বানাবো। পাহাড়িরা সেখানে পর্যটকদের জন্য নাচবে গাইবে, ব্যাস। ওরা যদি বাংলাদেশে বাস করতে চায় তাইলে আমাদের কথা মেনেই বাস করতে হবে।
এই যে আধিপত্য দেখানোর মনোবৃত্তি- এটাই সেটেলার মনোবৃত্তি। এই আধিপত্য দেখানোর মনোবৃত্তি থেকেই পাহাড়ে আমার মেয়েদেরকে ওরা ‘পাহাইড়া মাল’ মনে করে। আর এইরকম দুই চারটা ‘পাহাইড়া মাল’ খেয়ে দিতে না পারলে আর কিসের শাসক গোষ্ঠী হলাম। এইটাই হচ্ছে পাহাড়ে বাঙালি সেটেলারদের ধর্ষণের মনস্তত্ব। আর এই মনস্তত্বটা নিয়ত প্রশ্রয় পায়, কারণ পাহাড়ি মেয়েদেরকে ধর্ষণ করলে শেষ পর্যন্ত শাস্তি হয় না। আমার জানামতে আদিবাসী নারীদের উপর নির্যাতন করে কোন বাঙালি শাস্তি পেয়েছে এরকম ঘটনা আমি দেখিনাই। আমার জ্ঞানের বাইরে দুই একটা শাস্তি হলেও হতে পারে- কিন্তু অপরাধের সংখ্যার অনুপাতে সেগুলি অনুল্লেখযোগ্য।
আর শাস্তি হবে কি করে। পাহাড়ে গণহত্যা করলেও শাস্তি হয়না, ধর্ষণ তো মামুলি ব্যাপার। পাহাড়ের সেটেলারদের সাথে আপনি কথা বলে দেখতে পারেন, পাহাড়ি মেয়েদের ধর্ষণ করাটাকে ওরা নৈতিকভাবে দুষ্টামি করে মুরগি চুরি করে খাওয়ার চেয়ে বেশী বড় কোন অপরাধ মনে করে না।
এইসব কারণেই পানছড়িতে একজন বাঙালি মুসলমান সেটেলার যখন একটা আদিবাসী শিশুর উপর নির্যাতন করে সেটাকে আপনি একটা সাধারণ আরেকটা ধর্ষণের সাথে মিলাতে পারবেন না। এখানে ভিক্টিম আর ধর্ষকের পরিচয়টা গুরুত্বপূর্ণ এবং এই অপরাধটি ধর্ষকের জনগোষ্ঠী কর্তৃক ভিক্টিমের জনগোষ্ঠীর উপর হতে থাকা ক্রমাগত অপরাধেরই একটা অংশ মাত্র।
(৬)
আমি পাহাড় খুবই পছন্দ করি। পাহাড়ে ক্লাইম্বিং ট্র্যাকিং বা সেরকম কোন এডভেঞ্চার আমার দরকার হয়না, পর্বতের হাই আল্টিচ্যুডে গিয়ে বসে থাকতেই আমার ভাল লাগে। ট্যুরিস্ট জর্জরিত হিল স্টেশন ততোটা না, ছোট্ট একটা পার্বত্য শহরে গিয়ে চুপচাপ থাকবো ঘুমাব খাবো তাতেই আমার বিশাল আনন্দ। আর এখন তো ছবি তুলতে চাই, একটু ঘুরে ঘুরে ফটো তুলতে পারলে তো ভালোই।
কিন্তু আমাদের পাহাড়ে আমার যেতে ইচ্ছা করে না। লজ্জা লাগে। হাঁটা চলা করতে গেলেই দেখা যায় ভয়ংকর সব হাতিয়ার নিয়ে মিলিটারি ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুরা যুদ্ধের ইউনিফর্ম। আবার কয়েকজন যখন ওরা একসাথে যায় তখন একজনের কাঁধে আবার একটা রেডিও বাঁধা থাকে। উনাদেরকে দেখলে দম বন্ধ হয়ে আসে।
আর মন জুড়ে থাকে তীব্র অপরাধবোধ। পাহাড়ে ঘটে যাওয়া সকল অপরাধের গ্লানি যেন আমার কাঁধে এসে ভর করে। আমি মাথা সোজা করে সকলের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারিনা। পানছড়ির এই ছোট্ট শিশুটির কথা ভাবেন তো। ওর জায়গায় নিজেকে চিন্তা করেন। ওর চোখে একজন বাঙালিকে দেখতে চেষ্টা করেন তো।
ভেবেছিলাম সামনের শরৎ কালটায় ঐদিকে যাবো, চেঙ্গি মাইনি কাসালং ঘুরে বেড়াবো আর মেঘেদের ছবি তুলবো। সেই পুরনো লজ্জা এসে গলা চেপে ধরে। কি করে যাবো? একটা নিষ্পাপ পাহাড়ি শিশু আমাকে দেখে ধর্ষক ভেবে আতঙ্কে হিম হয়ে যাবে। এই লজ্জার কথা আমি কাকে বুঝাব! আপনি ভেবে দেখেছেন? এইসব সেটেলারদের কুকীর্তির দায় আমাদের সকলের মুখে কালি লাগাচ্ছে প্রতিদিন প্রতিদিন।
ইমতিয়াজ মাহমুদঃ আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী