মতামত ও বিশ্লেষণ

তারুণ্যের চোখে এম এন লারমাই হোক মোদের ভাবনাঃ বাচ্চু চাকমা

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ আসলেই প্রিয়নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৭৮ বছর পূর্ণ হবে। নেতার ৭৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে “তারুণ্যের চোখে এম এন লারমাই হোক মোদের ভাবনা” এ লেখনির মাধ্যমে প্রিয়নেতাকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সাথে স্মরণ করছি। মহাননেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ডাক নাম মঞ্জু। ১৯৩৯ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি মহাপুরম (মাওরুম), বুড়িঘাট মৌজা, নানিয়ারচর থানা, রাঙ্গামাটি জেলায় (বর্তমানে কাপ্তাই হৃদের পানির নিচে) জন্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু আজ সেই কর্মব্যস্ত মহাপুরম গ্রাম কাপ্তাই বাঁধের অথৈ জলে বিলীন হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে তাঁর স্মৃতি ও গৌরব। প্রিয়নেতা এম এন লারমার পারিবারিক জীবন, শিক্ষা জীবন, কর্মজীবন, রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানতে হলে তাঁর জীবন ও সংগ্রাম বইটি অধ্যয়ন করতে হবে। এম এন লারমার জন্ম, শিক্ষালাভ এবং আর্বিভাব পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপটে কোন গতানুগতিক সাধারণ ঘটনা নয়। কেননা তিনিই প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রামকে নাড়িয়ে দিতে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঐক্যবদ্ধ করতে, সামন্তবাদের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে জাগরিত করতে, দেশে ও বিশ্বের দরবারে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তুলে ধরতে, সর্বোপরি ভিন্ন ভাষাভাষি জুম্ম জনগণকে জুম্ম জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হন।
এম এন লারমার শিক্ষা লাভ ছিল অতীতের অন্য সবার চাইতে ব্যতিক্রম, তাঁর কর্মজীবন, জীবন-দর্শন, অন্য সবার চাইতে আলাদা। তিনি শিক্ষা অর্জন করে কোন চাকরী নিয়ে ব্যক্তি জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বেছে নেননি। কেননা তিনি ভাবতেন আরো অন্য কিছু, তিনি অনুভব করতে আরো অনেক বিষয়। তিনি জানতেন মানব সভ্যতার অগ্রগতির কথা, তিনি জানতেন বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষ ও নিপীড়িত জাতির সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ের কথা। তিনি বুঝতেন আধুনিক সব রাজনীতি, দর্শন, ইতিহাস ও সংস্কৃতির কথা। তিনি ভাবতেন পার্বত্য চট্টগ্রামের পশ্চাদপদ ও নিপীড়িত-নির্যাতিত জুম্ম জনগোষ্ঠীর কথা, তাদের জাগরিত করবার ও সংগঠিত করবার কথা, তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের কথা। এভাবে তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য জুম্ম জনগণ তথা দেশে ও বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষের কাছে তুলে ধরেছিলেন। তাঁর জন্মদিবস আর মৃত্যুদিবস আসলে তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা কি শুধু জনসংহতি সমিতির দায়িত্ব? প্রশ্ন জাগে তিনি কাদের জন্য তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি সরকারের মন্ত্রীত্ব না নিয়ে গভীর অরণ্যে প্রবেশ করেছিলেন কি কারণে? সরকারি শিক্ষকতা, ওকালতি পেশায় যুক্ত থেকে প্রশান্তময় জীবন কাটাতে পারতেন, তাহলে কিসের তাড়নায় এসকল বৈষয়িক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, চাকচিক্যময় জীবন-সংসার ত্যাগ করেছিলেন? জুম্ম তরুণেরা এর মর্মার্থ কি গভীরভাবে কখনো উপলদ্ধি করেছেন। নিজের জাতির যে করুণ অবস্থা সেটা কোনদিন, কোন সময় কিংবা কোন মুর্হুতে তাদের বিবেকের খোলসে করাঘাত করেছেন কি।
জ্যোতিপ্রভা লারমার লেখা “মঞ্জুর কিছু স্মৃতি কিছু কথা” প্রবন্ধ অধ্যয়ন করে জানা যায় প্রিয়নেতার জন্মভূমি আর জাতির প্রতি গভীর মমত্ববোধ সত্যিই অতুলনীয়। প্রিয়নেতার বড় বোন জ্যোতিপ্রভা লারমা অতীতের স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, ‘সেই তরুণ বয়সেও তাঁর জন্মভূমির প্রতি মমত্ববোধ কত গভীর, আর কিরূপ নিখাদ দেশপ্রেম। কাপ্তাই বাঁধের দরজা বন্ধ করার সাথে সাথে দেখতে দেখতে বাঁধের পানি গ্রামের পর গ্রাম গ্রাস করে নিচ্ছে। আমাদের সুন্দর প্রিয় গ্রামটিও ডুবে যাবে। সবার মধ্যে এক ধরনের উৎকন্ঠা, অনিশ্চয়তা আর শোক শোক ভাব। ধীরে ধীরে আমাদের বাড়ির দিকেও ধেয়ে আসছে পানি। ঠিক এমনি সময়ে মঞ্জু আমাদের বাড়ির দেয়াল থেকে এক খন্ড আর উঠোন থেকে আরেক খন্ড মাটি নিয়ে কাগজে ভালভাবে মুড়িয়ে আমার হাতে তুলে দিল। আর আমাকে বলছিল এই জিনিসগুলি প্রাণের চেয়ে সযতনে রেখে দিতে। সেদিন সেটা হাতে তুলে নিতে নিতে আমি ভাবনার সাগরে ভাসছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম। আমার ছোট ভাই আমাকে কি কোন যাদুকরের অমূল্য সম্পদ সংরক্ষণ করে দেওয়ার ভার দিচ্ছে! কাগজের প্যাকেটটি খুলে মাটির খন্ডগুলোর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ভাবতে থাকি আর মনে মনে প্রশ্ন করি, এই মাটির খন্ডটিতে কী স্বার্থ বা কোন স্মৃতির সাক্ষী বহন করছে কি? তখন মঞ্জুকে প্রশ্ন করেছিলাম, কেন এই মাটির টুকরো? তখন সে উত্তরে, “এই মাটি অমূল্য জিনিস” বলে আর কিছু না বলে কেবল একগাল হেসে চুপ করে থাকে। নানা ভেবে চিন্তে তার কথা রক্ষা করলাম মনেপ্রাণে, সযতনে তা রেখে দিলাম একটা ট্রাঙ্কে। তাঁর সেদিনকার সেই মাটির খন্ডগুলোর প্রতি এমন মায়া-মমতা, শ্রদ্ধাবোধ বুঝতে পারিনি। আজ এই শেষ বয়সে এসে তা গভীরভাবে উপলদ্ধি করছি, সেই মাটি মানুষের কতটুকু প্রয়োজন! আজ বুঝতে পারছি, মঞ্জু সেই সময়েও নিজের জন্মভূমি, মাতৃভূমি ও বাস্তুভিটাকে কত গভীরভাবে অনুভব করেছিল, ভালোবাসতে পেরেছিল!’
প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও ১৫ সেপ্টেম্বর প্রিয়নেতার জন্মদিবস উপলক্ষে রাঙ্গামাটিতে রচনা প্রতিযোগিতার আহ্বান করা হয়েছে। এবারে ৬ষ্ঠ হতে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে প্রিয়নেতা “এম এন লারমার শিক্ষা জীবন”, নবম হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত “এম এন লারমার জীবন ও সংগ্রাম”, একাদশ হতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত “এম এন লারমা ও জুম্ম জাতীয়তাবাদ”, ডিগ্রী-অনার্স-মাস্টার্সের জন্য “বর্তমান প্রজন্মের ভাবনায় এম এন লারমা”। বিগত রচনা প্রতিযোগিতায় অনেক ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের লেখনিতে এম এন লারমা সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখা গেছে। এম এন লারমা সম্পর্কে জানার জন্য নতুন প্রজন্মের অনেকের এই আগ্রহ খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। তবে প্রিয়নেতার সম্পর্কে জানার এই আকাক্সক্ষা আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। কেবল জানার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তাঁর আদর্শ ও চিন্তাধারা ধারণ ও অনুসরণে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। যে মানুষটি নিজের জন্যে কিছুই করেনি। নিজের এবং পরিবার-পরিজনদের জন্যে তিনি কিছুই রেখে যেতে পারেননি। সবকিছু জুম্ম জনগণের সামগ্রিক স্বার্থেই উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর নীতি-আদর্শ অবশ্যই তরুণ প্রজন্মকে অনুসরণ ও ধারণ করা দরকার।
এম এন লারমার মতো নি:স্বার্থ, ত্যাগী ও সংগ্রামী নেতাকে জুম্ম জনগণ অসময়ে হারিয়েছে। আমার প্রশ্ন জাগে, প্রিয়নেতার স্বপ্ন, চিন্তাধারা, দর্শন ও আদর্শ আমরা বর্তমান প্রজন্ম কতটুকু ভাবি এবং উপলদ্ধি করি? প্রিয়নেতার প্রতি গোটা জুম্ম জনগণের ভাবনাগুলো কতটা মূর্তমান? আমরা সমাজের মানুষেরা এতই অবিমৃষ্যকারী হতে পারি না যে, প্রিয়নেতা এম এন লারমাকে স্মরণ করতে পর্যন্ত ভুলে যাবো। শাসকশ্রেণির চাপিয়ে দেয়া জুম্ম জনগণের বর্তমান সংকট থেকে জাতিকে রক্ষা করতে গেলে প্রিয়নেতার নীতি-আদর্শ ও বিপ্লবী চিন্তাধারাকে জানতে হবে, ধারণ করতে হবে। তাই প্রিয়নেতার জন্মবার্ষিকী সবখানেই পালিত হোক; সমতল অঞ্চলে কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জুম্ম ছাত্র সমাজ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করুক, জাতীয়ভাবে সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী সমাজ সংগঠিত হয়ে পালন করুক, পার্বত্যাঞ্চলে প্রতিটি উপজেলায়, ইউনিয়ন, গ্রামে-গঞ্জে, স্কুল, কলেজ, সামাজিক ক্লাব কিংবা পাঠাগারে আনুষ্ঠানিকভাবে মহাননেতা এম এন লারমাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হোক। আমাদের সবার অন্তরের তাগিদবোধ কিংবা আত্মসচেতন থেকেই সেটা বেরিয়ে আসুক। আমার জানা মতে রাঙ্গামাটি দেবাশীষনগরের এম এন লারমা স্মৃতি গণপাঠাগার, রাঙ্গাপানির বলেন্দ্র স্মৃতি পাঠাগার, কল্যাণপুরের রাবিরা পাঠাগার ও ক্লাব স্বতন্ত্রভাবে প্রিয়নেতার ৭৮তম জন্মদিবস আনুষ্ঠানিকভাবে নানা সৃজনশীল আয়োজন হাতে নিয়ে এম এন লারমাকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সাথে স্মরণ করতে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও এম এন লারমা মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশনও পৃথক পৃথক কমৃসূচি হাতে নিয়েছে। এই শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন সর্বত্রই সম্প্রসারিত হয়ে ছড়িয়ে পড়–ক। এভাবে আমাদের পাহাড়ের শিশুরা ও তরুন প্রজন্মরা এম এন লারমা সম্পর্কে জানবে, বুঝবে, শিখবে এবং বাস্তব জীবনে আরো অধিকতর উপলদ্ধি করতে পারবে। এম এন লারমার আদর্শই জুম্ম জাতির একমাত্র মুক্তির ঠিকানা। এম এন লারমার আদর্শ ব্যতীত জুম্ম জাতির মুক্তি সম্ভব হবে না!
হাজারো জুম্ম জনতা সংগ্রামে রক্ত ঢেলে দিলো
তবুও বিজাতীয় শোষণ থেকে জাতির মুক্তি মেলেনি
মুক্তির জন্য আত্মত্যাগে, আত্মবলিদানে সাহসী ও নির্ভীক হতে হয়। সত্যিকার অর্থে এম এন লারমাই ছিলেন আত্মবলিদানে নির্ভীক এক বীর সেনানী। নিশ্চিত মৃত্যু হবে জেনেও তিনি পালিয়ে যাননি। মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলেন। মৃত্যুর মুখে তিনি বিভেদপন্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছেনÑ “কি, তোমাদের ক্ষমা করে আমরা অন্যায় করেছি? আমাকে কিংবা তোমাদের বন্ধুদের মেরে জাতি কি মুক্ত হবে? যাক, তোমরা প্ররোচিত ও উত্তেজিত হয়ে যাই করো না কেন জাতির দুর্দশাকে তোমরা কখনো ভুলে যেও না আর জাতির এ আন্দোলনকে কখনো বানচাল হতে দিও না”। জুম্ম জনগণের সামগ্রিক মুক্তির জন্য প্রিয়নেতা জীবন উৎসর্গ করে গেলেন। পার্বত্যাঞ্চলে কেন জন্ম গ্রহণ করেছি, কি আমার পরিচয়, কি আমার অধিকার, আমাদের জায়গা জমি নিরাপদ আছে কিনা, আমার জন্মস্থান-বসতভিটা কেউ কেড়ে নিয়ে আমাকে ধমকানি দেবে, হুমকি-ধামকি দেবে, আমার উপর খবরদারী করবেÑ যা ইচ্ছে তাই করবে, সেটা কখনো মেনে নেওয়া যায় না।
মেনে নিতে না পারলে কি করতে হবে? আমি বলছি, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার দেখিয়ে দেওয়া পথ বাস্তবে অনুসরণ করতে হবে। তিনি কি বলেছিলেন, “যে জাতি সংগ্রাম করতে জানেনা, সে জাতি পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার থাকতে পারে না”। জুম্ম জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, নিজের জাতিকে বিজাতীয় শাসন-শোষণ থেকে মুক্ত করার জন্য পাগল হয়েছিলেন। জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব, জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষা, ভূমিস্বত্ব ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি পাগল হয়েছিলেন। অথচ মুক্তির জন্য পাগলপ্রায় মানুষটির জীবন ও সংগ্রাম বিষয়ে তরুণদেরকে কতটুকু কৌতূহলী করে? অন্তরের ভেতর কতটুকু জানার আগ্রহ সৃষ্টি করে? আমি তারুণ্যের জয়গান করি, তরুণদের মহাশক্তিধর মনে করি। অমিত সম্ভাবনা রয়েছে তারুণ্যের হৃদয়ে। এই তরুণরাই অবিনশ্বর, তারা অমিত সম্ভাবনার অধিকারী। আদর্শিক চেতনাকে ধারণ করে তারা বিশ্বের বুকে অজেয় হিসেবে স্থান দখল করে নিতে পারে।
সংঘর্ষই মানুষের মূল আঁধার! সেই সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে আঁধারকে দূরীভুত করে পূর্বদিকের উদীয়মান সূর্যের মত তেজস্বী রূপে আর্বিভুত হয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করাই তরুণদের একমাত্র কাজ। আজ আমি উদ্বেগ প্রকাশ করছি, যে মানুষটি জুম্ম জাতির সামগ্রিক মুক্তি চেয়েছিলেন এবং বাংলাদেশের আপামর জনগণের শোষণ থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন, সেই মানুষটির জন্মবার্ষিকী-মৃত্যুবার্ষিকী সবখানেই পালিত হওয়া দরকার। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা বলতেন, জ্ঞানী-গুণীজনকে কদর না করলে, শ্রদ্ধা ও সম্মান না করলে সে দেশে, সে জাতিতে জ্ঞানী-গুণীজনের জন্ম হয় না। তাহলে আমরা কি এতই নিচে নেমে গেছি যার দরুণ পূর্ব-পুরুষদের ইতিবাচক কথাগুলো কামাকায় ভুলে যাচ্ছি?
যার কথা জুম্ম জনগণ মেনে চলে
যে মানুষটি জুম্ম জনগণের অন্তরে মিশে রয়েছে
তাঁর নাম “লারমা, লারমা”।

পাহাড়ের তরুণেরা নিজেদের শেকড়কে জানুক, এম এন লারমাকে আরো বেশি বেশি করে অধ্যয়ন করুক, লারমার আদর্শকে চলার পথে পাথেয় হিসেবে হৃদয়ে গেঁথে রাখুক। তিনি যে জুম্ম জাতির পিতা, জুম্ম জাতির মুক্তির দিশারী ও মহান অগ্রদূত এবং পথপ্রদর্শক সেটা পার্বত্যাঞ্চলের প্রতিটি প্রান্তে মানুষের জানা থাকা দরকার। তাঁর আদর্শকে তরুণ সমাজ কেন গ্রহণ করবেন; কেন অনুসরণ করবেন সেটার বাস্তবভিত্তিক ব্যাখ্যা অবশ্যই দিতে হবে। ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জীবন ও সংগ্রাম’ স্মারক গ্রন্থে অধ্যয়ন করে জানা যায়- “এ যুগের এক শ্রেষ্ঠ মানুষ মহাননেতা এম এন লারমা”। আসলে এম এন লারমার কোন গোষ্ঠীর জন্য, কেবল কোন নির্দিষ্ট শ্রেণি বা জাতির জন্য চিন্তাভাবনা করেননি বা সংগ্রাম করেননি; মানুষের জন্যই চিন্তা-ভাবনা করেছেন, মানুষের ন্যায্য অধিকারের জন্যই সংগ্রাম করেছেন। যা সত্যিকারের একজন মানুষের দায়িত্ব-কর্তব্য। তিনি মূলত বিশ্বের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে নির্যাতিত সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন এক প্রান্তিক মানবগোষ্ঠীর জন্যই কাজ করেছেন। তাই তাঁর অভিজ্ঞতা, চিন্তাধারা বিশ্বের সকল নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষ ও জাতিসমূহের অধিকার আদায়ের পথে এক অমূল্য সম্পদ। তাঁর সংগ্রামের ন্যায্যতা, বাস্তবতা, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, দূরদর্শিতা, গভীরতা এবং ব্যাপকতা আজকের দিনের আদিবাসী মানুষের যে দুর্দশা, আন্দোলন ও উত্থান তা লক্ষ্য করলেই আমরা অনুভব করতে পারি। মানবসমাজ ও সভ্যতার বিকাশকে কিছুটা হলেও এগিয়ে নিয়ে গেছেন। শুধু তাই নয়, মানুষ হিসেবেও তিনি অনন্য গুণের অধিকারী। তিনি চিন্তা করতেন অনেক উঁচুতে, অনেক ব্যাপকতায়, অনেক গভীরে, কিন্তু জীবনযাপন করতেন একেবারে সাদাসিধে। পার্টির সর্বোচ্চ নেতা হয়েও গেরিলা জীবনে তিনি নিজের কাপড় নিজেই ধুতেন।
গ্রামের কারো বাড়িতে গেলে বিশেষ করে রাত্রে গেরস্থরা যদি মোরগ-মুরগির মাংস রান্না করার উদ্যোগ নেয় তখন তিনি তৎক্ষণাৎ তা নিষেধ করেন। তিনি বলেন, রাত্রি হলেই মানুষ যেমন ঘরে ফেরে, পশু-পাখিরাও ঘরে ফেরে, গবাদি পশু-পাখিরাও স্ব-স্ব আশ্রয়স্থলে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে। এই সময়ে সেখান থেকে তুলে কোন গবাদি পশু-পাখি কাটাও সমীচীন নয়। আর কারো বাড়িতে খাবার খেলেও তিনি খোঁজ নিতেন সবাই খেয়েছে কিনা অথবা তাদের জন্য পর্যাপ্ত রাখা হয়েছে কিনা। তাঁর সঙ্গীদেরও তিনি এ ব্যাপারে সজাগ হওয়ার পরামর্শ দিতেন। পরিবেশের ব্যাপারেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত সচেতন প্রকৃতির প্রাচূর্য বনে থেকেও তিনি অহেতুক কোন গাছ কাটতে দিতেন না, লতা-পাতা ছিঁড়তে দিতেন না। দুর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় কোন প্রাণী শিকার করতে দিতেন না। নারী সমাজের প্রতিও ছিল তাঁর গভীর দরদ। তিনি ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী, অসীম ধৈর্যশীল, কষ্টসহিঞ্চু, সাহসী, আত্মবিশ্বাসী। ছিলেন সৎ, নিষ্ঠাবান, অমায়িক, ভদ্র, ন¤্র, সুশৃঙ্খল জীবনের অধিকারী। আসলে তিনি ছিলেন আধুনিক সভ্যতার অগ্রসর ও আদর্শস্থানীয় মানুষদের একজন।
এত বড় মানুষ, এত মহাননেতা যুগ যুগ ধরে পেছনে পড়ে থাকা পার্বত্য চট্টগ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছেন এবং সেখান থেকেই তিনি তাঁর বিকাশ ঘটিয়েছেনÑ এটা যেমনি এক আশ্চর্যজনক, তেমনি শিক্ষণীয় এবং অনুপ্রেরণাদায়ক। যেন সময়ের প্রয়োজনে, যুগের প্রয়োজনে তাঁর এই আর্বিভাব। তিনি এমন এক মানুষ যাকে নিয়ে একজন সাধারণ জুম্মও গর্ব করতে পারে, তাঁর অনুপস্থিতিতেও তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এবং তাকে সম্মান করে নিজে সম্মানিত হতে পারে। তাই সেই ১৯৮৩ সালে এম এন লারমাকে যারা হত্যা করেছেন তারাই আজ ইতিহাসের চরম ঘৃণার পাত্র। ভিয়েতনামের এক বিপ্লবী কবি বলেছেন, “কিছু কিছু মৃত্যু আছে যা পরিণত হয় অবিনশ্বর জীবনে”-তেমনি এম এন লারমার মৃত্যুও পরিণত হয়েছে অবিনশ্বর এক জীবনে।
গেরিলা জীবনে প্রিয়নেতা বলতেন যে, বন হচ্ছে পশু-পাখিদের আবাসভূমি। আমরা আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব ও আবাসভূমির অস্তিত্বের লড়াই করতে পশু-পাখিদের আবাসভূমিতে আশ্রয় নিয়েছি। কাজেই পশু-পক্ষীদের নিধন করা যাবে না। তাদেরকে নিয়েই একসাথে থাকতে হবে। অপ্রয়োজনে গাছ-বাঁশ কাটা যাবে না। তিনি পথের ধারের গাছ কাটতে বারণ করতেন। কাঁকড়াগুলো রাতের বেলায় গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে খাদ্যের সন্ধানে। গেরিলা জীবনে পার্টির সদস্যরা নাইট মার্চিং এর সময় ছড়াপথে কাঁকড়া ধরে দাঁড়গুলো ভেঙে নিয়ে ব্যারাকে পৌঁছে আগুনে পুড়িয়ে শাঁসগুলো খেতো। প্রিয়নেতা তা বারণ করতেন এবং বলতেন, তোমাদের হাতগুলো কেটে নিলে তোমরা কিভাবে আহার করবে? তাছাড়া তিনি রাতের বেলায় ঘনঘন কাঁকড়া ধরতে বারণ করতেন। রাতের বেলায় কাঁকড়াগুলো গর্তের বাইরে আসে বলে সহজে মানুষের হাতে ধরা পড়ে এবং কয়েকদিনের মধ্যে ঐ ছড়ায় আর কাঁকড়া পাওয়া যায় না। এজন্য কাঁকড়াগুলোর অস্তিত্বের কথা ভেবে রাতের বেলায় একই ছড়াই ঘনঘন কাঁকড়া ধরতে নিষেধ করতেন।
আমরা তাঁর জীবন ও সংগ্রাম বই অধ্যয়ন করে দেখতে পাই যে, শুধুমাত্র তাঁর ব্যক্তিগত নয়, বরং তা তিনি যৌথ জীবনে এবং জাতীয় জীবনে জীব পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ রক্ষার নীতি মেনে চলার প্রতি নিষ্ঠাবান ছিলেন। ১৯৭৫ সালে নির্দেশাবলীর মাধ্যমে সকল জনসাধারণকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে কেউ ধনেশ পাখি, বিরল প্রজাতির পাখি, মাদী হরিণ, বাঘ, ভল্লুক, গয়াল, হাতী, অজগর, কোবরা, শকজোড় (বিষধর বড় সাপ), বানর, জঙ্গলী কুকুর, বিরল প্রজাতির কচ্ছপ, ইয়ো হরিণ ইত্যাদি পশু-পাখিদের সংরক্ষণ করার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটিকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা দেয়া হয়। পশুদের মধ্যে কেবলমাত্র শূকর শিকারের উপর কোন বাধা-নিষেধ ছিল না। বর্তমান সময়ে উল্লেখ করা যায়, প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানুষের বৈরি সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাই প্রকৃতিও মানুষের উপর এর প্রতিশোধ নেয়। অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা, প্লাবন, সাইক্লোন, মহামারী ও ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকৃতি মানুষের উপর প্রতিশোধ নেয়। এবারে ২০১৭ সালে মোরা আর পাহাড়ের অতিবৃষ্টির কারণে ভূমিধস শতশত মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। পরিবেশবাদী প্রিয়নেতা এম এন লারমা প্রকৃতি ও তার অন্যতম অংশ মানুষের সমাজের সেই নিবিড় সম্পর্ক প্রকৃতির ক্ষতি না করেই গড়ে তোলার একজন কারিগর ছিলেন। তিনি প্রাকৃতিক পরিবেশের এই দৃষ্টিকোণ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের অস্তিত্ব সংরক্ষণের আন্দোলন থেকে প্রাকৃতিক জৈব পরিবেশ সংরক্ষণের আন্দোলনকে বিচ্ছিন্ন করে দেখেননি। এখানেই তাঁর সাথে অন্যান্য রাজনীতিবিদদের মৌলিক পার্থক্য। তাহলে তিনি শুধুমাত্র রাজনীতিবিদ নন, পরিবেশবিদও ছিলেন।
নিরাপদ, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন ফেলে
বেছে নিয়েছিলে তুমি ইস্পাত-কঠিন পথ
পাহাড়ের জীবনকে বাঁচাতে সে পথে চলা
শাসকগোষ্ঠীর কাছে কোনদিন হার মানোনি
জুম পাহাড়ে প্রিয়নেতা এম এন লারমার আদর্শকে ফিরে পেতে হলে তরুণদের অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হবে। ১৯৮৩ সালে ১০ই নভেম্বর গভীর রাতে বিশ্বাসঘাতকতামূলক হামলায় যেদিন নিহত হলেন আমাদের প্রিয়নেতা, তখন কি পাহাড়জুড়ে অরণ্য জননী কেঁদেছিল তাঁর প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে? কাঁপ্তাই বাঁধের ফলে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া তাঁর শৈশবের মহাপুরম নদী ও গ্রাম, জুম্মদের সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু উৎসব পাহাড়ের দেশে ঋতুর পরে ঋতুর ফিরে আসে, ফুরামোন, কেওক্রডং, আলুটিলা পাহাড়, মাচাং ঘর, পাহাড়ের বুকে জুমক্ষেত, পাহাড়ের চিল-সাদারার পায়ে চলা পথ, পাহাড় বেয়ে চলা ঝর্না, বনের পশু-পাখি, নিপীড়িত-শোষিত, বঞ্চিত জুম্ম জনগণ সকলে কি কেঁদেছিল প্রিয়নেতার জন্য? চেঙ্গী, মাইনী, কাচালং, কর্ণফুলী, শঙ্খ, মাতামুহুরী, লোগাং নদীর ¯্রােত কি স্বাভাবিকভাবে বয়ে গিয়েছিল? নেতৃত্ববিহীনতায় কিছু দিনের জন্য মৌন হয়ে গিয়েছিল কি তারা? মহান জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগোষ্ঠীর অধিকারের কথা বলার জন্য স্পিকার প্রিয়নেতাকে বলেছেন, দুই মিনিট সময় আপনাকে দেয়া হল। এই তো ছিল জাতীয় সংসদে পাহাড়ের এই মানুষটির অবস্থা। নিজের জাতিগোষ্ঠীর সম্পর্কে এত গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য তাঁকে স্পিকার সময় দিয়েছেন মাত্র দুই মিনিট। বাঙালি জাতীয়তাবাদের জাত্যাভিমানে টগবগ করা সংসদ সদস্যদের পাহাড়ী মানুষ সম্পর্কে এই তো ছিল আচরণ ।
তবুও অনেক কথা তিনি বলেছেন সংসদে। একাকী তিনি রীতিমত যুদ্ধ করেছেন সংসদের ভেতরে, আদিবাসী পাহাড়ি মানুষের স্বতন্ত্র পরিচয় ও সংস্কৃতি কথা, জীবনের আবেদন-আবেগের কথা বলে সকলকে বোঝাবার চেষ্টা করেছেন। তাঁর কথা সম্মিলিতভাবে শোনেননি শাসকগোষ্ঠী। তাঁর কথার মূল্য দেয়নি তারা। সেদিন সংবিধানে জুম্ম জাতির অপরিচয়ের বিল পাশ হয়ে গেল এবং তাঁর কথাগুলোকে চূড়ান্ত দম্ভ আর অহংকারে এবং চূড়ান্ত অজ্ঞতায় শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের জোরে কন্ঠভোটে নাকচ করে দেয়া হলো, মনে অনেক বেদনা ও কষ্ট নিয়ে প্রিয়নেতা রাঙ্গামাটিতে ফিরে এসেছিলেন, আর প্রিয় মাতৃভূমিতে এসে প্রিয়জনদের কাছে পেয়ে শিশুর মতো কেঁদেছিলেন এবং বলেছিলেন আমাদের সব আশা শেষ হয়ে গেল। না, এভাবে আর হবে না, অন্য পথ ধরতে হবে। তিনি বাংলাদেশ সরকারের হীন কার্যকলাপের চিত্র তুলে ধরলেন।
প্রতিক্রিয়াশীল চক্র প্রিয়নেতার জীবন কেড়ে নিলেও
আদর্শিক চেতনাকে কেড়ে নিতে পারেনি
এম এন লারমার চেতনার মৃত্যু নেই
প্রিয়নেতা বলেছেন, “রাজনৈতিক অধিকার ব্যতীত কোন অধিকারই টিকে থাকতে পারে না। তাই প্রথমেই জনগণকে রাজনৈতিকভাবে অধিকার সচেতন করে তুলতে হবে। অন্য কিছু দ্বারা মানুষের নিকট হতে অতি সহজেই সস্তা বাহবা পেতে পারে; কিন্তু এর দ্বারা মানুষের তেমন উপকার হবে না। তিনি উদাহারণ দিলেন, একজন নৌকার মাঝিকে মাত্র পঞ্চাশ পয়সার বদলে দশ টাকা দিলে সবাই প্রশংসা করবে। কিন্তু এর দ্বারা সকল নৌকার মাঝিদের উপকার হবে না। তিনি আরো বলেন, মানুষের উপকার করতে হলে সৎ নীতি, আদর্শ পালন করতে হবে এবং ইহার বাস্তবায়ন করতে হবে”। তাঁর সান্নিধ্যে থাকা অনেকেই বলেন প্রিয়নেতাকে হারিয়ে জুম্ম জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে যা কোনদিন পূরণ হবার নয়। সেই বিশ্বাসঘাতকেরা জুম্ম জাতির ইতিহাসের পৃষ্ঠাকে কলংকিত করেছে। প্রিয়নেতার ৭৮তম জন্মবার্ষিকীতে সেই বিভেদপন্থী গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ চক্রদের ঘৃণাভরে ধীক্কার জানাই। ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপিত এই চক্রান্তকারীরা পাক-ভারতের মীরজাফর এবং লংকার বিভীষণকেও হার মানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ইতিহাস তার আপন গতি থেকে বিচ্যুত হয়নি। জাতীয় চেতনা কখনো ধ্বংস করে দিতে পারেনি। স্বার্থ ও ক্ষমতার সংঘাতের ফলে ঐ চক্রান্তকারী কতিপয় নেতা দলবলে সশস্ত্রভাবে সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। ১০ই নভেম্বরের শহীদদের রক্তধারাকে সাক্ষী রেখে সত্য ও ন্যায়ের পথে সংগ্রামী ইতিহাস আপন গতিতে চলতে থাকবে। তাইতো জুম্ম তারুণ্যের চোখে এম এন লারমাকে কেমন মানাবে, কেমন করে দেখবে প্রিয়নেতার আদর্শকেÑ তাদের ভাবনা কি সেটা আজো সময়ের দাবী। প্রিয়নেতার ৭৮তম জন্মবার্ষিকী সবখানেই পালন করার মধ্য দিয়ে তরুণ সমাজ সেই আদর্শের পথে এগিয়ে যেতে থাকবে। এম এন লারমা অসমাপ্ত কাজ জুম্ম তরুণেরাই একদিন সমাপ্ত করবেÑ প্রিয়নেতার জন্মদিবসে এটায় তরুণদের একমাত্র ভাবনা হয়ে উঠুক।
মহান আদর্শের জয় হোক, প্রিয়নেতা এম এন লারমার চেতনা অমর হোক!!!

Back to top button