অন্যান্য

ঢাবির জগন্নাথ হলের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের বাস করা রুমে’র ছাদের পলেস্তরা ধ্বসে দুই ছাত্র আহত

সতেজ চাকমা:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল। সাধারণত এই হলেই বরাদ্দ দেওয়া হয় নন-মুসলিম শিক্ষার্থীদের। বিজয় একাত্তর হলে কিছু সংখ্যক নন-মুসলিম ছাত্রকে বরাদ্দ দেওয়া হলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে বরাদ্দ দেওয়া হয় জগন্নাথ হলেই। হলের পুরাতন ছাত্র সংসদের জরাজীর্ণ ভবনের দ্বোতলাটি আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৫ বছর আগে।এখন এই ভবনটির দ্বোতলার একপাশে বাস করে প্রায় ৪০ এর অধিক শিক্ষার্থী যারা সবাই আদিবাসী। এই ভবনটির পলেস্তেরা ধ্বসে পড়ছে প্রায় ৫ মাস আগে থেকেই। এবছরের জুলাই মাসে ধ্বসে ছাদের পলেস্তেরা মশারির উপর পড়ে একটুর জন্য রক্ষা পান শুভ চাকমা নামের এক শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থী পড়েন শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ২য় বর্ষে। মাঝ রাতে ঘুমানোর সময় টানানো মশারির উপর পড়ে পলেস্তেরা। মশারির রশি ছিড়ে সোজা শুভ চাকমা’র নাকের উপর গিয়ে পড়ে। এতে খানিক আহতও হয়েছিলেন বলে জানান শুভ চাকমা। এ ঘটনা সম্পর্কে উক্ত হলের প্রভোষ্ট ড. মিহির লাল সাহাকে জানানো হলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। উক্ত রুমে বাস করা শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানিয়েছেন এর পর তেমন কোনো ব্যবস্থায় নেওয়া হয়নি।

এই ঘটনার ৫ মাস পর আজ (২৪ নভেম্বর) ভোর ৪.০০ টার দিকে বড় আকারের পলেস্তেরা ধ্বসে আবারো দুইজন ছাত্র আহত হয়েছেন বলে জানান উক্ত ভবনের শিক্ষার্থীরা। আহত দুইজন হলেন ব্যংকিং এন্ড ইনসুরেন্স বিভাগের ৪র্থ বর্ষের সুবল কিসকো এবং ভাষা বিজ্ঞানের মাষ্টর্সের শিক্ষার্থী এডওয়ার্ড সরেন। ভুক্তভোগী আহত ছাত্র এডওয়ার্ড সরেন আইপিনিউজ এর এই প্রতিবেদককে জানান, প্রতিদিনের ন্যায় গতকালও (২৩ নভেম্বর) মশারি টানিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি, কিন্তু ভোরে আসার ঠিক উপরে ছাদের পলেস্তেরা খসে মশারির উপর পড়ে যায়। এতে মশারির রশি ছিড়ে গিয়ে ঢিলা হয়ে একেবারের পড়ে যায় আমার পায়ের উপর এবং এতে পায়ের চামড়া থেতলে যায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উক্ত ছাত্র এখন ব্যান্ডেজ পড়া অবস্থায় রয়েছে। আহত অপরজনের অবস্থাও একই বলে জানা গেছে। এতে এক প্রকার আতংকের মধ্যে রয়েছেন উক্ত ভবনে বাস করা ছাত্ররা।

উক্ত ভবনে থাকা পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সরল তঞ্চঙ্গ্যা জানান, “ভোরে এমন শব্দে এই পলেস্তেরাটি ধ্বসে পড়ে যায় তখন পুরো ছাত্রদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়ে যায় এবং অনেকেই মনে করেন ভূমিকম্প হচ্ছে। কিন্তু আসলে তা নয়।”

উক্ত বিষয়টি অবগত করে উক্ত রুমের ছাত্ররা প্রভোষ্টের সাথে যোগাযোগ করলে প্রভোস্ট দুপুর নাগাদ রুম দেখতে যান বলে জানান রুমের বাসিন্দা এবং সিনিয়র শিক্ষার্থী হিতো চাকমা। কিন্তু প্রভোস্টের কাছ থেকে তেমন কোনো সদুত্তর পাননি বলে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে জগন্নাথ হলের প্রভোষ্ট ড. মিহির লাল সাহা আইপিনিউজকে জানান, বিষয়টি অবগত আছেন। তবে সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান। হলের সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের নতুন নির্মিত কক্ষেগুলোর নির্মাণ কাজ এখন মোটামুটি শেষ হয়েছে। সেই কক্ষগুলোতে বা অন্য কোথাও আতংকিত এই শিক্ষার্থীদের কবে সড়িয়ে নেওয়া হবে বলে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, একটু সময় লাগছে। আমরা সময় হলে তাদের বরাদ্দ দেবো।

তবে সন্ধ্যা ৬.৩০ টা’র দিকে প্রভোষ্ট তাঁর অন্যন্য সহকর্মীদের নিয়ে রুমে যান। উক্ত হলের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে দ্রত সময়ের মধ্যে ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনায় থাকা পলেস্তেরাগুলে ছড়িয়ে আপাত নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করার নির্দেশনা দিলেও ভরসা পাচ্ছেন না উক্ত রুমের অর্ধশতের কাছাকাছি শিক্ষার্থী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রুমের ছাদের বিভিন্ন অংশে ঘাটল ধরেছে। রুমে থাকা অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে- বৃষ্টি হলে ছাদ বেয়ে ছুইয়ে ছুইয়ে পানি পড়ে এই ভবনে। আর এই ভবনে থাকা শিক্ষার্থীদের মূল সমস্যা হচ্ছে পানির অপ্রতুলতা। একতলায় দুইটি মেস থাকার কারণে ভবনের জন্য পানির যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। এইসব বাদেও এখন দেখার বিষয় প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয় , নাকি ১৯৮৫ সালে জগন্নাথ হলে সংঘটিত দুর্ঘটনার মত আরেকটি ঘটনার শিকার হন এই শিক্ষার্থীরা ।

Back to top button