ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে ডিজিটাল জালিয়াতি, সিআইডির হাতে গ্রেফতার ৮
ডিজিটাল জালিয়াতি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি হওয়ার অভিযোগে সাত শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইমের একটি দল।
মঙ্গলবার দুপুরে সিআইডির বিশেষ পুলিশ (এসএস) সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার ভোর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমতি নিয়ে প্রোক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় তাদের আটক করা হয়েছে।’
গ্রেফতার শিক্ষার্থীরা হলেন, তানভীর আহমেদ মল্লিক, মো.বায়োজিদ, নাহিদ ইফতেখার, ফারদিন আহমেদ সাব্বির, প্রসেনজিত দাস, রিফাত হোসাইন, আজিজুল হাকিম।
মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল জালিয়াতি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অভিযোগে গত ১৪ নভেম্বর রংপুর থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাভিদ আনজুম তনয়(২৪)কে গ্রেফতার করে সিআইডি। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই চক্রের সদস্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী আকাশকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। আদালতে পাঠানোর পর তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের নাম জানায় তারা। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরাই জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল।’
জালিয়াতির প্রক্রিয়া উল্লেখ করে এসএস নজরুল বলেন, ‘তারা ডিভাইসের সহায়তায় পরীক্ষার্থীদের উত্তর দিতো। এর আগে আমরা এমন ডিভাইস উদ্ধার করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে এই চক্রটি তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ৪ থেকে ৭ লাখ টাকা নিতো বলে আমরা তথ্য প্রমাণ পেয়েছি।’
গ্রেফতার শিক্ষার্থী ও জালিয়াতি চক্রের রাজনৈতিক আদর্শের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের অপরাধী হিসেবে আমরা আটক করেছি। কেউ রাজনৈতিক দলের কোনও সদস্য কিনা সেটা বিবেচনা করিনি।’
গ্রেফতার শিক্ষার্থীরা কে কোন বিভাগের তা জেনে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে সিআইডি। সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলামের নেতৃত্বে এই চক্রটিকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, ‘এই ডিভাইস দিয়ে যেকোনও পরীক্ষাতেই জালিয়াতি করার সম্ভব। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও জালিয়াতি করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতে পারে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম একটি মামলা হয়েছে। আমরাও লিংক আপ খুঁজছি। তারা তাদের মতো করে তদন্ত করছে। তবে আমরাও কাজ করছি।’
সিআইডি কর্মকর্তারা চক্রটিকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানান, ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগের দিন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অমর একুশে হল ও ড.শহীদুল্লাহ হলে অভিযান চালিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহীউদ্দিন রানা ও আবদুল্লাহ আল মামুনকে প্রথম গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের শাহবাগ থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়। তাদের স্বীকারোক্তিতে জালিয়াতিচক্রের অন্যতম হোতা তনয়ের নাম উঠে আসে। এরপর গত ১লা নভেম্বর আগারগাঁও থেকে একই চক্রের সদস্য নাফিকে আটক করা হয়। এরপর ৩ নভেম্বর আটক করা হয় একই চক্রের সদস্য আনিনকে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতি করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো এই চক্রের আরও সদস্যদের ব্যাপারে সিআইডির কাছে তথ্য আসছে। এই চক্রে যারা জড়িত রয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দীন খান, অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আসলাম উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মুহিবুল ইসলাম এবং সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস।