জাতীয় সংসদ, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদে নারী আসন বৃদ্ধির দাবি
'পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছরে নারী উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা
এ দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী নারীরা সম্পৃক্ত ছিলেন, অনেকেই বীরাঙ্গনা হয়েছেন কিন্তু তারা কোনো স্বীকৃতি পাননি। শান্তিচুক্তিতেও নারীরা অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত ছিলো কিন্তু ফল ভোগের জায়গায় নারীর চেয়ে পুরুষেরাই এগিয়ে আছে। আদিবাসী নারীদের ক্ষমতায়নের জন্যে জাতীয় সংসদ, আঞ্চলিক পরিষদ এবং পার্বত্য জেলা পরিষদে আদিবাসী নারীদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করা বা সংরক্ষিত আসন বৃদ্ধি করে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
আজ ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) উদ্যোগে আয়োজিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছরে নারীর উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বিএনপিএস-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের হলরুমে ’আমাদের জীবন, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের ভবিষ্যৎ’ প্রকল্পের অধীনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। প্রকল্প ব্যবস্থাপক সঞ্জয় মজুমদারের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই সভায় সভাপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপিএস-এর উপপরিচালক শাহনাজ সুমী।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চু্ক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপেলক্ষে নারীর উন্নয়ন পরিস্থিতি পর্যালোচনার উদ্দেশে এই আলোচনা সভাটির আয়োজন করা হয়। এতে নারীর অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুব নারী অধিকার কর্মী চন্দ্রা ত্রিপুরা।
প্রবন্ধের ওপর অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক শেফালিকা ত্রিপুরা, অনন্যা কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ডনাই প্রু নেলী, হিল ফ্লাওয়ারের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিলো কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, প্রোগ্রেসিভের নির্বাহী পরিচালক সুচরিতা চাকমা, উইভের নির্বাহী পরিচালক নাই ইউ প্রু মেরী, জাবারাং এর নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, আদিবাসী ফোরামের নেতা দীপায়ন খীসা।
স্বাগত বক্তব্যে শাহনাজ সুমী বলেন, ‘বিএনপিএস-এর প্রাতিষ্ঠানিক মূলনীতি হচ্ছে, কেউ পিছিয়ে থাকবে না। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং ধর্মীয় ও পেশাগত কারণে যারা পিছিয়ে আছে আমরা তাদের জন্য কাজ করছি। সমতলের নারীদের অধিকারের পাশাপাশি পার্বত্যচুক্তি পরবর্তী সময় থেকে বিএনপিএস পাহাড়ের আদিবাসী নারীদের উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে আসছে। বিএনপিএসসহ স্থানীয় নারী অধিকারভিত্তিক সংগঠনগুলোর কাজের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে নারীরা যুক্ত হচ্ছেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় চন্দ্রা ত্রিপুরা বলেন, ”পার্বত্য চট্টগ্রামে চুক্তি বা পূর্ববর্তী সশস্ত্র সংগ্রামের নানা পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ ছিলো উল্লেখযোগ্য। যদিও শান্তিচুক্তিতে নারীদের জন্য বিশেষ ও আলাদাভাবে কোনো ধারা উল্লেখ নাই কিন্তু এটিই মূলত চুক্তি পরবর্তীতে নারী মুক্তি ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রথম ধাপ হিসাবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। যেমন, প্রথাগত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারনে নারীদের প্রতি সহিংসতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ও নারী ক্ষমতায়নে ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার অর্থবহভাবে নিশ্চিত হচ্ছে না।”
’আমাদের জীবন, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের ভবিষ্যৎ’ প্রকল্পের ভূমিকা সম্পর্কে বক্তারা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের কিশোরী ও যুবনারীদেরকে সম্পৃক্ত করে পরিচালিত এই প্রকল্পের কারণে তারা তাদের অধিকারগুলো সম্পর্কে বুঝতে পারছে। আজকের এই কিশোরীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের মাঝেই নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে বলে বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।”
আলোচনা সভায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মী, তিন পার্বত্য জেলা থেকে আগত বিএনপিএস ও প্রকল্প বাস্তবায়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।