লামায় জুম-বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থরা নি:সঃ সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): বান্দরবানের লামা সরই ইউনিয়নে তিন আদিবাসী পাড়ার জুমচাষে বনাঞ্চল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা তুলে ধরতে আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে অনন্যা কল্যান সংগঠন।
আজ বৃহস্পতিবার ( ১৯ মে) সকালে বান্দরবান পৌরসভা সংলগ্ন ‘কাপ অফ জয়” রেস্টুরেন্টে অনন্যা কল্যান সংগঠনের আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অনন্যা কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ডনাই প্রু নেলি, নারী প্রগতি সংঘ”র প্রতিনিধি সঞ্জয় মজুমদার, তদন্ত দলের সদস্য দীনেন্দ্র ত্রিপুরা, ইয়াঙ্গান ম্রো, তিন পাড়া কার্বারী লাংকম ম্রো, জয় চন্দ্র ত্রিপুরা,রেং য়েন ম্রোসহ গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন জুম-বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা তদন্ত দলের সদস্য ইয়াংঙান ম্রো।
লিখিত বক্তব্যে তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পাড়াবাসীর অভিযোগ গত ২৬ এপ্রিল লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ডলুছড়ি মৌজায় ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্টির ৪০০ একর জুম ভুমি ও বিভিন্ন ফলদ বাগান লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি রাবার কোম্পানী তাদেরকে পাড়া থেকে উচ্ছেদ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়েছে।
সে আগুনে ১লক্ষ ২৮হাজার বিভিন্ন ফলদ ও বনজ চারা, ৭একর ধানিজমি, প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বাঁশের বাগান যেখান থেকে পাড়াবাসী অভাবের দিনে বাঁশ সংগ্রহ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তা আগুনে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও পাড়াবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ ও অনন্যা কল্যান সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত দল গঠন করে গত ১৭মে সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার তদন্ত করে।
এদিকে গত ফেব্রুয়ারী -মার্চ মাসে ১৫০–২০০জন রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে ৪০০একর জায়গার বন কাটা হয় তারপর গত ২৬ এপ্রিল জুম ভুমিতে আগুন দেওয়া হয়। সে আগুনে জুম চাষের জমি ও প্রাকৃতিক বন, ফলদ বাগান, বাঁশ -বাগান পুড়ে যাওয়ায় বন নির্ভর পাড়াবাসীর আয়ের উৎস সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তিনটি পাড়ার ৩৯ টি পরিবার তীব্র খাদ্য সংকটে পড়ে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ৭মে থেকে দায়িত্বশীল ব্যক্তি, সামাজিক সংগঠন খাদ্য সামগ্রী নিয়ে তাদের পাশে দাড়ানোর কারনে সাময়িক খাদ্যের অভাব কেটে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে লাকংম পাড়া গ্রামপ্রধান (কার্বারী) লাংকম ম্রো বলেন, রাবার কোম্পানীর লোকজনের ভয়ে তিন পাড়ার ৩৫জন ছাত্র/ছাত্রী স্কুলে যেতে পারছেন না।
ঘটনায় তদন্ত দলের পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়,গত ১৯৯৩-৯৪ সালে লামা সরই ইউনিয়নে ডলুছড়ি ও সরই মৌজায় মোট ৬৪ জনকে ব্যক্তিকে ২৫ একর করে ১ হাজার ৬শত একর রাবার চাষ করার জন্য ৪০ বছরের জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসন ইজারা প্রদান করেন। ইজারা চুক্তি অনুযায়ী ২৮টি শর্ত ইজারাদারদের দেওয়া হয়েছিল।
এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে ইজারা চুক্তির ১০বছরের মধ্যে রাবার বাগান সৃজন না করলে আপনা-আপনি ইজারা বাতিল হয়ে যাবে। ব্যক্তির নামে ইজারা দেওয়া জমি হস্তান্তর যোগ্য নয়, এখন ২৯বছরে এসে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে ৪শত একর তিন পাড়াবাসীর জুমভুমি বেদখল তদন্ত দলের কাছে অপরাধ বলে প্রতীয়মান হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।