জাতীয়

মধুপুর বনে আদিবাসী নারীর ভূমির কলাবাগান ধ্বংসের প্রতিবাদে ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের প্রতিবাদ – বিবৃতি


বনবিভাগ কর্তৃক মধুপুর উপজেলার পেগামারী গ্রামে গারো আদিবাসী কৃষকের কলা বাগান জোরপূর্বকভাবে নিধন করার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি

বনবিভাগ কর্তৃক গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ টাঙ্গাইলে মধুপুর উপজেলার পেগামারী গ্রামে গারো আদিবাসী নারীর ভূমির কলা বাগান ধ্বংসের ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত, দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে নাগরিক সমাজের পক্ষে দেশের বিশিষ্টজন নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন। বিবৃতিটিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা হলেন, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তণ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বার কাউন্সিল সদস্য অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, ব্লাস্টের অনারারী নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, নারীপক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ।

“বনবিভাগ কর্তৃক গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ টাঙ্গাইলের মধুপুর শালবনে পেগামারী গ্রামে গারো আদিবাসী কৃষক বাসন্তী রেমার লক্ষ টাকার আবাদী ফসল কলা বাগান জোরপূর্বকভাবে কেটে ফেলা হয়। বাসন্তী রেমার পরিবার যুগ যুগ ধরে বংশপরম্পরায় এই জমিতে বসবাস ও চাষাবাদ করে আসছেন। ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী পরিবারের অভিযোগ, বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জামাল হোসেন তালুকদার, রেঞ্জার আব্দুল আহাদ ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে এ জঘন্যতম ঘটনাটি ঘটানো হয়। কোনরকম মৌখিক বা লিখিত নোটিশ ছাড়া বনবিভাগ এই বেআইনী কাজ করে। যুগ যুগ ধরে এই জমিতে গারো পরিবার ফসল আবাদ করে আসছেন। এখানে তাদের পুর্বপুরুষের সমাধি রয়েছে। বিনা নোটিশে রিজার্ভ ফরেস্টের নামে ফসল নিধন কর্মসূচী মধুপুরগড় অঞ্চলে আদিবাসী উচ্ছেদের এক গভীর ষড়যন্ত্র বলে সেখানকার আদিবাসীরা ও নানা সংগঠন মনে করছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় আদিবাসী জনগণ তাৎক্ষণিকভাবে বনবিভাগের দোখলা বিট অফিস ঘেরাও করে। নাগরিক সমাজ উক্ত ঘটনার প্রতিবাদে আদিবাসীদের সকল আন্দোলন-বিক্ষেভের সাথে সংহতি প্রকাশ করছে। সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ও প্রথাগত ভূমির অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে, যা আইএলও কনভেনশন ১০৭ এ অন্তর্ভুক্ত আছে বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ সালে এই কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করেছে।

উল্লেখ্য যে, বেলা, জয়েনশাহী আদিবাসী পরিষদ ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের দায়েরকৃত রিট আবেদন নং ১৮৩৪/২০১০-এ হাইকোর্ট বিভাগ বনের জমি উদ্ধারে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং মধুপুরের বনবাসীদের অধিকার ও দাবিসমূহ নিস্পত্তির জন্য একটি কমিটি গঠনের জন্য সরকারকে নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। সেই নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে বনবিভাগ সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারী কায়দায় যেভাবে মধুপুরের বনবাসী আদিবাসীদের উচ্ছেদের বিভিন্ন অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমানে করোনাকালীন কঠিন সময়ে আদিবাসীরা এমনিতেই দু:সময় পার করছেন। সেই বাস্তবতায় এই পরিবারের উপর বনবিভাগের এই বর্বর ঘটনা তাদের উপার্জনের একমাত্র উৎসকে ধ্বংস করে দিল। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

নাগরিক সমাজ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি প্রদান সাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত গারো পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানাচ্ছে।

বিবৃতিদাতাদের পক্ষে,

সঞ্জীব দ্রং, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম

Back to top button