পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ও পরিবেশ দূষণ রোধে মানববন্ধন
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): আজ (১৪ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার উপজেলাধীন ব্রামন্দী ইউনিয়নের উৎরাপুর গ্রামের পাশে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে ‘ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ও পরিবেশ দূষণ রোধে’ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধনের আয়োজক সংগঠনগুলো হল- পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), রিভারাইন পিপল, সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশন, উৎরাপুর আদর্শ সমাজকল্যাণ সংঘ এবং পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ রক্ষা আন্দোলন।
.
মানববন্ধনে আলোচকরা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, এই অঞ্চলের আশে-পাশের শিল্প-কারখানার বর্জ্য পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে ফেলে এই ভয়াবহ দূষণের সৃষ্টি করা হচ্ছে। অপরিশোধিত তরল বর্জ্য নদীগুলোকে গ্রাস করছে। এতে নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। এ দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রায় ১৫ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, সোনারগাঁ ও বন্দর উপজেলার এক হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠান সরাসরি ব্রহ্মপুত্র নদের পানি দূষণ করছে। এতে ব্রহ্মপুত্র নদ মাছসহ জলজপ্রাণীশূন্য হয়ে পড়েছে। স্থানীয় কৃষকরা কৃষি সেচেও নদের পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। প্রয়োজনে কেউ নদীতে নামলে বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। নদীতে মাছ না থাকায় স্থানীয় জেলেরাও তাদের কাজ হারিয়েছেন।
বছরের পর বছর ধরে এমন দূষণ চললেও নদী রক্ষা কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন সবকিছু জেনে শুনে নির্বিকার থাকছে অভিযোগ করে বক্তারা আরো বলেন, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ অঞ্চলটি দেশের অন্যতম আর্সেনিক প্রবণ এলাকা। শত বছর ধরে এই এলাকার মানুষ মেঘনা ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানির উপর নির্ভরশীল ছিল। পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের ক্রমাগত দূষণের ফলে এই এলাকার কৃষিকাজ থেকে শুরু করে সব কাজেই ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়েছে। এতে স্থানীয় মানুষের উপর আর্সেনিকের প্রভাবও বাড়ছে। নদের মাছ হারিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় জেলে ও দরিদ্র মানুষ বড় ধরনের সঙ্কটে পড়েছে উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, শতাধিক জেলে পরিবার কেবল পুরোনো ব্রহ্মপুত্রে মাছ শিকার করে তাদের সংসার চালাতো। ব্রহ্মপুত্রে মাছ শিকার করে স্থানীয় দরিদ্র মানুষ পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতো। তাছাড়া, এলাকায় হাঁস পালনে নদের ঝিনুক ও শামুকই ছিল একমাত্র ভরসা। পানি দূষণের কারনে মাছের সঙ্গে নদী থেকে শামুক ঝিনুকও হারিয়ে গেছে। ব্যঙ, সাপসহ বিভিন্ন প্রাণী হারিয়ে যাওয়ায় পরিবেশে এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। সারাদেশেই নদীগুলোকে হত্যা করা হচ্ছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্রও এর বাইরে নয়। সমাজের প্রতিটি মানুষকেই এসব নদী রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
.
মানববন্ধনে বক্তারা স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সরকারের কাছে দাবি জানান, শিল্প-কারখানার রাসায়নিক পদার্থের সামান্য অংশও যাতে আমাদের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ অবস্থায় ব্রহ্মপুত্র নদ দূষণ রোধে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। শিল্প-কারখানায় ক্ষেত্রে বিদ্যমান অনিয়মগুলো খুঁজে বের করে ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের সব নদীর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন কবি ও এক্টিভিস্ট শাহেদ কায়েস এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।