মতামত ও বিশ্লেষণ

উপকূল অঞ্চলে রাখাইনদের ভূমি সমস্যা : রাখাইন শূন্য করার এক দুষ্টচক্র

মঙ্গল কুমার চাকমা

বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও ঐক্যন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে এক নাগরিক প্রতিনিধিদল রাখাইনদের মানবাধিকার পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে গত ১৭-১৯ মার্চ ২০১৭ উপকূল অঞ্চলের বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার আদিবাসী রাখাইন এলাকা সফর করেন। প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা, আইইডি’র নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমেদ খান, দৈনিক সমকালের প্রতিবেদক রাজীর নূর, গবেষক ও প্রাণবৈচিত্র্য অধিকার কর্মী পাভেল পার্থ, দৈনিক ভোরের কাগজের প্রতিবেদক তানভীর আহমেদ, নিউ এইজের প্রতিবেদক ইমরান হোসেন ইমন, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সহ সভাপতি সোনা রাণী চাকমা, মানবাধিকার কর্মী রওশন মাসুদা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, ফিল্ম মেকার লতা আহমেদ প্রমুখ। সফরকালে নাগরিক প্রতিনিধিদল দু’টি রাখাইন গ্রাম সরেজমিন পরিদর্শন করেন। রাখাইন প্রতিনিধি ও ভুক্তভোগী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে দু’টি মতবিনিমিয় সভায় মিলিত হন। সবশেষে তারা পটুয়াখালী জেলার জেলা প্রশাসকের সাথে একটি পৃথক মিটিং করেন।
জানা যায় যে, একসময় দেশের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত উপকূল অঞ্চলের (বৃহত্তর বরিশাল) বর্তমান পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া, গলাচিপা ও কুয়াকাটা এবং বরগুনা জেলার তালতলী, আমতলী ইত্যাদি এলাকার মালিক ছিল রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা। স্বাপদসঙ্কুল এই উপকূল অঞ্চলকে বাসযোগ্য করেছে তারাই। একসময় এই অঞ্চলে কোনো বাঙালির জমি ছিল না বলে জানা যায়। রাখাইনরা এসে জঙ্গল পরিষ্কার করে, হিংস্র পশুর সঙ্গে যুদ্ধ করে এই অঞ্চলকে বাসযোগ্য করে তুলেছে। কৃষিকাজের জন্য জমির ক্ষেত তৈরি করেছে। মেইনথিন প্রমিলার এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, ১৭৮৪-১৯০০ সালের দিকে বৃহত্তর বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস ছিল প্রায় ৫০,০০০ এর উর্ধ্বে রাখাইন মানুষের। ১৯০০-১৯৪৮ সালে এই সংখ্যা হয় ৩৫,০০০ জন। ১৯৯০ সালে ৪,০০০ জন। ২০১৪ সালে এ অঞ্চলে রাখাইন জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২,৫৬১-এ। একসময় শুধু কলাপাড়ায় সাত হাজার রাখাইন পরিবার ছিল। এখন আছে মাত্র ১,১০০ পরিবার। ১৭৮৪-১৯৮৪ সালে ছিল মোট ২৩৭টি রাখাইন অধ্যুষিত গ্রাম, যার মধ্যে পটুয়াখালীর ১৪৪টি রাখাইন পাড়া এবং বরগুনার ৯৩টি রাখাইন পাড়া ছিল। বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৪৩টি গ্রাম, যার মধ্যে পটুয়াখালী জেলায় মাত্র ৩২টি এবং বরগুনা জেলায় মাত্র ১৩টি গ্রাম রয়েছে।
মেইনথিন প্রমিলার সমীক্ষায় জানা যায়, রাখাইনদের দিয়ে বন-জঙ্গল পরিস্কার ও পতিতজমি আবাদে উৎসাহিত করার জন্যে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ভূমি আবাদকারী রাখাইনদের প্রথাগত ভূমি অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু নিজেদের গড়ে তোলা সেই চিরায়ত জায়গা-জমি থেকে রাখাইনরা ক্রমাগত উচ্ছেদ হয়ে বর্তমানে নিশ্চিহ্নের দাঁড়প্রান্তে এসে পড়েছে। ভূমিখেকো একটি গোষ্ঠী এই জনপদকে রাখাইন শূন্য করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের রেকর্ডীয় ও সামাজিকভাবে ভোগদখলীয় জমি ভূমিগ্রাসী প্রভাবশালী মহল ক্রমাগতভাবে জোর করে কেড়ে নিচ্ছে। জাল দলিল দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে, আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে নানারকম মামলা দিয়ে রাখাইনদের সর্বশান্ত করা হচ্ছে। এমনকি সাংস্কৃতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করতে ইসলামী ও বাঙালিকরণ করা হচ্ছে রাখাইনদের এলাকা ও গ্রামের নাম। যেমন ক্যহ্লাউ পাড়াকে করা হয় কলাপাড়া, হুইসেন পাড়াকে করা হয় হোসেন পাড়া, দোকাশি পাড়াকে করা হয় দোভাষী পাড়া, থঞ্জু পাড়াকে করা হয় অঞ্চু পাড়া, ফ্যাথিপাড়াকে করা হয় ফাঁসিপাড়া ইত্যাদি।

তালতলী উপজেলাধীন অংকুজান পাড়ার উদ্বিগ্ন গ্রামবাসী।
বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলাধীন অংকুজান পাড়া পরিদর্শনে দেখা যায় যে, ভূমিদস্যুদের অব্যাহত ভূমি আগ্রাসনের ফলে সংকুচিত হয়ে পড়েছে এই রাখাইন গ্রামের পরিধি। একসময় যেখানে অর্ধ শতাধিক রাখাইন পরিবার বসবাস করতো, সেখানে বর্তমানে মাত্র ১১ পরিবারের বসতি রয়েছে। সবচেয়ে জবরদখলের মুখে রয়েছে রাখাইনদের পবিত্র শ্মশানভূমি, যে শ্মশানে জড়িয়ে রয়েছে তাদের পূর্বসূরীদের স্মৃতি ও ঐহিত্য, তাদের আবেগ ও অনুভূতি। শ্মশানভূমির চারপাশ থেকে প্রতিবেশী ভূমিদস্যুদের ক্রমাগত সম্প্রসারণের ফলে শ্মশানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে একদম ছোট্ট পরিসরে। দাহ করার পূর্বে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য সাময়িকভাবে শবদেহ রাখার স্থান মো: ইউনুস নামে জনৈক ব্যক্তি কর্তৃক দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছে। প্রতিবাদ করতে গেলে উক্ত মো: ইউনুস উল্টো হামলার হুমকি দিয়ে থাকে রাখাইন গ্রামবাসীদের। সাতাশ হাজার টাকা বিনিময়ে কিনে নিয়েছে বলে সফররত নাগরিক প্রতিনিধিদলের কাছে দাবি করলেও রাখাইন গ্রামবাসীরা এটা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। শ্মশান ও দেবালয় সম্পত্তি কখনো কেউ বিক্রি করতে পারে না বলে রাখাইনরা জানান। গ্রাম থেকে শ্মশানে শবদেহ নেয়ার রাস্তাও ঘেরা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে ভূমিদখলদাররা।
দাহ করার পূর্বে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য সাময়িকভাবে শবদেহ রাখার স্থান মো: ইউনুস নামে জনৈক ব্যক্তি কর্তৃক দখল করে নির্মিত বাড়ি।
অংকুজানপাড়া ধর্মজেয়া বৌদ্ধ বিহারের পুকুর, শ্মশান ভূমি, আধ্যাত্মিক আচার-অনুষ্ঠানের রিজার্ভ স্থান ইত্যাদি রাখাইনরা পবিত্র জ্ঞান করেন। তারা সেই পবিত্র পুকুরে হাঁস ছেড়ে দেন না। শ্মশানে গরু-ছাগল চরান না, মল-মূত্র ত্যাগ করেন না। কিন্তু ভূমিলোভী বাঙালি প্রতিবেশীরা নানাভাবে তিক্ত-বিরক্ত করে রাখাইনদের বিতাড়নের হীনউদ্দেশ্যে রাখাইনদের পবিত্র পুকুরে হাঁস ছেড়ে দেয়। পুকুরে গরু-মহিষ নামিয়ে ধৌত করে। শ্মশানে গৃহপালিত পশু চরায়। এভাবেই তাদের দু:খ-দুর্দশার কথা বর্ণনা করেন অংকুজান পাড়ার মাতব্বর মি. চোথয়ফ্রু। বর্তমানে বিদ্যমান পটুয়াখালী জেলায় ৩২টি এবং বরগুনা জেলায় ১৩টি গ্রামের অবস্থা এই অংকুজান পাড়ার অবস্থা থেকে ভিন্নতর নয়। ভূমিদস্যূদের আগ্রাসনের ফলে রাখাইনদের এসব গ্রাম রয়েছে নিশ্চিহ্নের মুখে।
সুলতান, আফজাল ও নাসিমা এবং গান্ধী শীল ও ফেমা শীল নামে পাঁচ বাঙালি অংকুজান পাড়ার রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী রিজার্ভ পুকুর এবং পুকুরের চারিপাশে কয়েক একর জমি বেদখল করেছে। ঘরবাড়ি নির্মাণ করে তারা দস্তুর মতো বসবাস করছে। ‘কেন তারা রাখাইনদের জমি দখল করেছে’ জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় যে, এগুলো রাখাইনদের ভূমি। রাখাইনরা তাদেরকে থাকতে দিয়েছে। রাখাইনদের সাথে তারা সম্প্রীতির মনোভাব নিয়ে বসবাস করছে। রাখাইনদের সাথে তাদের কোন সমস্যা নেই বলে সাফাই গাইতে থাকে। রাখাইনরা বলেছেন, তারা তাদেরকে সাময়িকভাবে থাকতে দিয়েছিলেন। সাময়িক থাকতে দিয়ে বসতিকারী বাঙালিরা রাখাইনদের জমি একেবারে দখল করে নিয়েছেন। ছেড়ে দিতে বললেও তারা জমির দখল ছেড়ে দেয় না বলে অসহায় ভঙ্গিতে রাখাইন গ্রামবাসীরা জানান। এভাবে আজ তালতলী উপজেলার অংকুজান পাড়া উচ্ছেদের মুখে রয়েছে। সফররত নাগরিক প্রতিনিধিদলের মতো কেউ রাখাইনদের খোঁজখবর নিতে গেলে ভূমিখেকো প্রতিবেশী বাঙালিরা বা দখলদাররা রাখাইনদের পাড়ায় উপস্থিত হয়ে থাকে। রাখাইনরা কি অভিযোগ করছে তার তথ্য নিতে এবং ক্ষেত্র বিশেষে পাল্টা যুক্তি ও রাখাইনদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ অবতারনা করতে তাদের এই উপস্থিতি। এই প্রতিনিধিদল সফরের সময়ও সে ধরনের ভূমি শকুন কয়েকজন প্রতিবেশী বাঙালি উপস্থিত হয়েছিল এবং প্রতিনিধিদল যেখানে যেখানে গেছে সেখানে তারা প্রতিনিয়ত পিছু নিয়েছিল।
চোথয়ফ্রু আরো জানান, তার মালিকাধীন তালতলী উপজেলা অন্তর্গত ৪১নং ছোট নিশানবাড়িয়া মৌজার ১২.৩৭ একর জমি সানু খন্দকারের নেতৃত্বে প্রতিবেশী ১০ জন বাঙালি জাল দলিলের মাধ্যমে দখলের পাঁয়তারা করছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে তালতলী থানার এস আই মো: আসাদুর রহমানের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় যে, উক্ত ছোট নিশানবাড়িয়া মৌজার ৩১.৩৭ একর জমি বহু বছর পূর্ব হতে মনচালা মগ গং ঝোপ জঙ্গল পরিষ্কার করে চাষাবাদ উপযোগী করত: তাঁর নামে রেকর্ডভুক্ত করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা উচিনসে মগনী উক্ত জমি ওয়ারিশ সূত্রে মালিক হন। উচিনসে মগনীর মৃত্যুর পর তাঁর স্বামী চোথয়ফ্রু ও দুই মেয়ে উক্ত জমির মালিক হন। কিন্তু উক্ত জমি সানু খন্দকারের নেতৃত্বে ১০ জন বাঙালি ২০০০-২০০১ সালে ভূমি বন্দোবস্ত কেস নং-১২৮৫(আম) এবং একই সনে বন্দোবস্ত কেস নং-১৩৭৬(আম) ও ১৩৩৮(আম) মূলে জাল দলিল প্রদর্শন করে মালিকানা দাবি করে। এ সংক্রান্ত দেওয়ানী মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন পক্ষ তাদের নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করতে পারবে না মর্মে প্রশাসন ও আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও দখলদার বাঙালিরা ঘরবাড়িও নির্মাণ করেছে। এভাবেই আজ জাল দলিলের মাধ্যমে ভূমিদস্যুরা রাখাইনদের জমি জবরদখল করে চলেছে।
সফররত নাগরিক প্রতিনিধিদলের সাথে তালতলীস্থ কারিতাসের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় রাখাইন প্রতিনিধিরা জানান, ১৯৬২ ও ৬৩ সালে ঘূর্ণিঝড়ে শত শত রাখাইনের মৃত্যু হয়। ল-ভন্ড হয়ে যায় তাদের ঘরবাড়ি। নষ্ট হয়ে যায় তাদের জমির যাবতীয় দলিল। এমনকি ভূমি অফিসের যাবতীয় ভূমি দলিলও নষ্ট হয়ে যায়। সেই সুযোগে স্থানীয় ভূমি অফিসের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে ভূমিলোভী অনেক বাঙালি জাল দলিল তৈরি করে এবং উক্ত জাল দলিলের দোহাই দিয়ে জোরপূর্বক তারা রাখাইনদের ভূমি জবরদখল করে। এমনকি বান্দরবান থেকে কিছু ভাড়াতে মারমা এনে তাদেরকে ভূমির মালিক সাজিয়ে ভূমি অফিসে বা আদালতে হাজির করে রাখাইনদের ভূমি দখলদাররা নিজেদের নামে নামজারি করে নেয় বলে রাখাইন প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন। আরো উল্লেখ্য যে, ভূমিদস্যুরা অনেক সময় সরাসরি প্রতিপক্ষ রাখাইন ভূমি মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের না করে জমির দখল পাওয়ার জন্য ভূমি কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে থাকে। এভাবে রাখাইন ভূমি মালিককে পরোক্ষভাবে মামলায় জড়িত করে সর্বশান্ত করা হয় এবং একপর্যায়ে ভূমি হাতিয়ে নেয়া হয়। ২০১৫ সালে রাখাইনদের মালিকানাধীন ৩.০ একর জমি বিবাদীর প্রতিকূলে ডিক্রী প্রদানের জন্য মো: রাফেজ ও মোসা: মনোয়ারা বেগম কর্তৃক তালতলী উপজেলার উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ও প্রজেক্ট ডাইরেক্টরের বিরুদ্ধে এধরনের ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হয়।
তালতলী পাড়ার টিএন্ডটি এলাকার মিজ হ্লাচাং জানান যে, ২০১৪ সালে একদল ভূমিদস্যু রাতের মধ্যে ঘর নির্মাণ করে তাদের ১.৫০ একর জমি দখল করে নেয়। ভূমি দখলের সময় গভীর রাতে ভূমিদস্যুরা তার বোন মিজ মাচানহ্লাকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করে। তাঁর পরিবার-পরিজনকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। তালতলী থানায় পুলিশকে ফোন করলেও তাদের উদ্ধার করতে বা ভূমিদস্যুদের ধাওয়া করতে সারারাত কোন পুলিশ ফোর্স আসেনি। এভাবে রাখাইন গ্রামবাসীরা তাদের নিরাপত্তাহীনতা ও অসহায়ত্বের কথা মতবিনিময় সভায় তুলে ধরেন।
তালতলীর ছাতনপাড়ার মিজ খেন খেন জানান যে, তিনি একখ- জমি বিক্রি করেন এক বাঙালির কাছে। কিন্তু ঐ ব্যক্তি সেই জমিটা না নিয়ে দখল করে নেয় ভালো মানের আরেকটি জমি। খেন খেন বিক্রি করেছেন ১০ শতক জমি। কিন্তু ক্রেতা বাঙালি ব্যক্তি দখল করেছে ৩০ শতক জমি। এভাবেই নির্বিচারে বেহাত হচ্ছে রাখাইনদের জমি। তালতলী উপজেলার কবিরাজ পাড়ার মিজ চিন খেন জানালেন, তাঁর দুই একর জমি ৪/৫ বছর ধরে আবুল খাঁ নামে এক বাঙালি প্রতিবেশীর কাছে একসনা বন্ধকী (অগ্রিম বর্গা) দিয়ে আসছেন। কিন্তু গতবছর থেকে সেই বাঙালি তাঁদেরকে বন্ধকী বাবদে কোন টাকা না দিয়ে ভোগদখল করছে। একদিন তাঁর স্বামীসহ মিজ চিন খেন আবুল খাঁয়ের কাছে গিয়ে বন্ধকীর টাকা চাইলে আবুল খাঁ উল্টো তাদেরকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অথবা তাদেরকে এক নম্বর আসামী করে থানায় মামলা করার হুমকি দেয়।
নারী নেত্রী মিজ মেইনথিন প্রমিলা জানান যে, ভূমিদস্যুরা প্রথমে রাখাইনদের ভূমির নিজ নামে জাল দলিল তৈরি করে এবং জাল দলিল দেখিয়ে ভূমি জবরদখল করে। জবরদখলের ফলে রাখাইনরা যদি মামলা করে থাকে তাহলে ভূমিদস্যুদের পক্ষে সেটা আরো পোয়াবারো হয়ে থাকে। যেহেতু মামলাধীন ভূমি ভূমিদখলদারের দখলে, তাই মামলা চলাকালে দখলদারকারী ব্যক্তি উক্ত জমি ভোগদখল করতে থাকে। বিরোধীয় জমিতে চাষ করে দখলদারকারী ব্যক্তি ফসল উৎপাদন করে ভোগ করতে পারে এবং ফসলের কিছু অংশ বিক্রি করে মামলাও পরিচালনা করতে পারে। অপরদিকে রাখাইন ব্যক্তি মামলা পরিচালনার জন্য তার ভোগদখলে থাকা নিষ্কন্টক জমি থেকে পর্যায়ক্রমে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। একপর্যায়ে মামলা যথাযথভাবে পরিচালনা করতে না পেরে বা উপযুক্ত দলিলপত্রাদি উপস্থাপন করতে না পেরে কিংবা পুলিশকে ও আদালতে ঘুষ দিতে না পেরে বিরোধীয় জমিটি তো হারাতেই হয় রাখাইন গ্রামবাসীদের, অন্যদিকে তার ভোগদখলে থাকা নিষ্কন্টক জমি ক্রমাগত বিক্রি করে করে তাও হারাতে হয়। এভাবেই সর্বস্ব হারা হচ্ছে রাখাইনরা। জমি বেহাত হওয়ার একটা দুষ্টচক্রের মধ্যে আটকে পড়ে রাখাইন জনগোষ্ঠী তাদের চিরায়ত ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে পড়ছে বলে মিজ প্রমিলা জানান।
ভূমি বেদখলের কথা বলতে গিয়ে আবেগে অশ্রুসিগ্ধ কলাপাড়া উপজেলাধীন রাখাইনদের ছ-আনি পাড়ার প্রধান চিংদামো (দামো)।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলাধীন রাখাইনদের ছ-আনি পাড়ার অবস্থা আরো নাজুক। এই রাখাইন গ্রামটি একসময় বধিষ্ণু হলেও বর্তমানে বিলুপ্তি দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ক্ষয় হতে হতে এই গ্রামে বর্তমানে মাত্র ১০ পরিবার রাখাইন জনগোষ্ঠীর ২৮ জন লোক বাস করে। এই গ্রামের পাশে পায়রা বন্দর গড়ে তোলা হচ্ছে। দক্ষিণ দিকে পায়রা বন্দরের প্রশস্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। পশ্চিম দিকে বাঙালি গ্রাম এবং উত্তর দিকে প্রভাবশালী গাজী পরিবারসহ আরেকটি বাঙালি গ্রাম। পূর্ব দিকে পায়রা নদীর লাগোয়া বেড়ি বাঁধ। গ্রাম থেকে বাইরে আসা-যাওয়ার একমাত্র রাস্তা হচ্ছে পূর্ব দিকের এই বেড়ি বাঁধ। সেই বেড়ি বাঁধের সংলগ্ন রাখাইনদের জমি দখল করে পার্শ্ববর্তী গ্রামের প্রভাবশালী তিন ভাই গাজী শামীম (আওয়ামীলীগ), গাজী সুমন (বিএনপি) ও গাজী রিয়াজ (বিএনপি) ঘর নির্মাণ করছে। ছ-আনি পাড়ার প্রধান চিংদামো (দামো) এই জরবদখলের বিরুদ্ধে কলাপাড়া থানায় মামলা করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও থেমে নেই ঘর নির্মাণের কাজ। প্রতিনিধিদল সফরকালেও ঘর নির্মাণের কাজ চলছিল। প্রতিনিধিদলকে দেখে কাজের লোকগুলো লুকিয়ে পড়ে। সেসময় থানায় ফোন করলে থানার এক দারাগো ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্থ করেন যে, রাখাইনদের ভূমি দখল করে তিন গাজী ভাইকে তাদের ঘর নির্মাণের কাজ এগুতে দেবেন না। কিন্তু যেখানে দখলদাররা প্রভাবশালী ও ক্ষমতা-কেন্দ্রীক রাজনৈতিক দলের সদস্য, সেহেতু সেই দারোগা সাহেবের কথার উপর কতটুকু আস্থা রাখা যায় তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কিত হতে হয়।
রাখাইনদের জমি দখল করে গাজী শামীম, গাজী সুমন ও গাজী রিয়াজ কর্তৃক নির্মাণাধীন স্থাপনা।
জমি জবরদখল করে ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি নেয়ার সময় নারী-পুরুষ মিলে রাখাইনরা বাধা দিতে গেলে তিন গাজী ভাই এই বলে হুমকি দেয় যে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে প্রয়োজনে তারা মুল রাখাইন গ্রামে গিয়ে ঘর নির্মাণ করবে। বাইরে আসা-যাওয়ার একমাত্র রাস্তা বন্ধ হলে ছ-আনি পাড়া রাখাইনদের পক্ষে গ্রাম থেকে বাইরে আসা-যাওয়াও কঠিন হবে বলে কান্না জড়িত কণ্ঠে ছ-আনি পাড়ার রাখাইনরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পায়রা বন্দর ও বন্দর সংযোগ সড়কের জন্য রাখাইনদের ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৭.৬৯ একর জমি ভূমিদস্যু বাঙালিরা তাদের মালিকানাধীন বলে আদালতে মামলা করেছেন। তাই অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ ভোগ করতে পারবে কিনা সেটা নিয়েও তারা সংশয় প্রকাশ করেছেন।
নাগরিক প্রতিনিধিদের সফরকালে অন্যতম কার্যক্রম ছিল কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ স্থানীয় রাখাইন প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত করা। আলোচনা সভার প্রাক্কালে পটুয়াখালীতে চারজন জঙ্গী ধরা পড়েছে বলে খবর আসায় রাখাইন প্রতিনিধিদের বক্তব্য না শুনে উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের বক্তব্য দিয়ে চলে যান। উপজেলার এই শীর্ষ কর্তাদের সামনে রাখাইনদের সমস্যার কথা বলতে না পারাতে নাগরিক প্রতিনিধিদলসহ সকলেই আশাহত হয়েছিলেন নি:সন্দেহে। কিন্তু তার থেকে বেশি হতাশ হয়েছিলেন উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য শুনে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম সাদিকুর রহমান বলেছেন যে, এলাকার রাখাইনরা এদেশের নাগরিকদের কেবল পরম আত্মীয় নন, তারা এলাকার সম্পদও বটে। কেননা এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে তাদের নাচ-গান অনুষ্ঠানকে উজ্জ্বল করে তোলে বলে মন্তব্য করে রাখাইনদেরকে অনেকটা ¯্রফে বিনোদনের উপজীব্য হিসেবে তুলে ধরেন। রাখাইনদের মধ্যে দু’একটি সমস্যা থাকলেও তারা সুখে শান্তিতে আছে বলে উল্লেখ করে তিনি রাখাইনদের সমস্যাকে আড়াল করার চেষ্টা করেন। মিয়ানমারে সমস্যার কারণে প্রশাসন রাখাইনদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানান। রাখাইনদের মধ্যে অনেক বিসিএস ক্যাডার রয়েছে। সংখ্যানুপাতে হিসাব করলে বিসিএস ক্যাডারে বাঙালিদের তুলনায় এখানকার রাখাইনদের হার বেশি হবে বলে তিনি কাল্পনিক মতামত ব্যক্ত করেন। সাধারণ নাগরিকদের চেয়ে তাদেরকে অধিকতর নাগরিক অধিকার প্রদান করা হয় বলেও তিনি অবহিত করেন। পরিশেষে তিনি রাখাইনদেরকে ঘরকোণো বলে অভিহিত করেন। তারা বাইরে আসতে চান না বলে জানান। রাখাইনদের কেবল ভূমি ভিত্তিক পেশায় পড়ে না থেকে বিকল্প পেশায়, যেমন ভ্যান চালক পেশায় আসতে হবে বলে তিনি রাখাইনদের পরামর্শ প্রদান করেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব হোসেন তালুকদার বলেন, রাখাইনরা পারিবারিক বন্ধনের মতো সম্প্রীতির মধ্যে রয়েছে। কোন সমস্যা নিয়ে কোন রাখাইন তাদের কাছে আসেননি। ভূমি সমস্যা নিয়ে রাখাইনদের কেউ আবেদনও করেননি। কেউ না আসলে তাদের পক্ষে কোন কিছু করার নেই বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, কেবল রাখাইনদের ভূমি বেদখল হয় না। মুসলমান-মুসলমানদের মধ্যেও ভূমি দখল হয়। রাখাইনদের তুলনায় মুসলমানদের মধ্যে আরো বেশি ভূমি বেদখল হয়ে থাকে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। সংখ্যালঘু হয়ে জন্ম নেয়াই পাপ বলে তিনি মন্তব্য করায় রাখাইন প্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, কলাপাড়ায় প্রশাসন রয়েছে। স্থানীয় অনেক নেতৃবৃন্দ রয়েছেন। তা সত্ত্বেও ঢাকা থেকে নাগরিক প্রতিনিধিদল পরিদর্শনে আসবে কেন বলে তিনি প্রশ্ন করেন।
কলাপাড়া উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের এমন দায়িত্বহীন বক্তব্য শুনে রাখাইন প্রতিনিধিবৃন্দ, নাগরিক প্রতিনিধিদল ও স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বস্তুত তাদের এরূপ দায়িত্বহীন বক্তব্য এবং সত্যকে আড়াল করার মধ্য দিয়ে সারাদেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি দেশের শাসকগোষ্ঠী দৃষ্টিভঙ্গিরই বহি:প্রকাশ ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হয়। বিশেষ করে ইউএনও’র বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাখাইনদের ভূমি অধিকারের প্রতি প্রশাসনের চরম অবজ্ঞা, রাখাইনসহ আদিবাসীদের সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করা, এলাকার রাখাইনদের সমস্যাকে ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা, মিয়ারমারের সমস্যার কথা স্মরণ করে দিয়ে রাখাইনদের প্রতি বিশেষ ইঙ্গিত প্রদান করা ইত্যাদির বহি:প্রকাশ ঘটেছে বলে বলা যেতে পারে।
মোদ্দা কথা হচ্ছে বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর জীবনজীবিকা ও অস্তিত্ব এখন চরম সংকটে। তাদের বসতভিটা, ব্যবসা-বাণিজ্য, উপাসনালয়, শ্মশান দখলসহ মামলা দিয়ে হয়রানি ইত্যাদি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাখাইনদের জমি, চলাচলের রাস্তা, পুকুর ও শ্মশান দখলের মহোৎসব চলছে। তাদের চাষাবাদের জমির মধ্যে খাসজমি অন্য জাতির মানুষকে বন্দোবস্ত দেওয়ায় সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। জালিয়াতি চক্র জমিজমা হাতিয়ে নিচ্ছে। মেইনথিন প্রমিলা জানান, এ পর্যন্ত কারিতাস-এর আইসিডিপি-রাখাইন প্রকল্পের মাধ্যমে আইনী সহায়তার মাধ্যমে রাখাইনদের ২৯২টি মামলার ৭৮টি মামলায় রায়ের মাধ্যমে ৬৭৪ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু এখনো রাখাইনদের মালিকানাধীন শত শত একর জমি ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বেদখলের মুখে রয়েছে। রাখাইন গ্রামবাসীরা জানান, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় এমন কোন রাখাইন পরিবার নেই যার ভূমি সংক্রান্ত মামলা নেই। ভূমি সংক্রান্ত মামলায় জর্জরিত হয়ে তারা একাধারে ভূমি হারাচ্ছে, সেই সাথে অর্থ ও অন্যান্য সম্পত্তি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়ছে।
পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় স্থানীয় নাগরিক সমাজসহ গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে রাখাইন জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার সংরক্ষণ ও মানবাধিকার সুরক্ষায় তেমন সক্রিয় থাকতে দেখা যায়নি। কতিপয় স্থানীয় সংবাদ কর্মীবৃন্দ রাখাইন দু:খ-দুর্দশার প্রতি সংবেদনশীল হলেও তাদের কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় দুর্বল বলে বিবেচনা করা যায়। রাখাইনদের ভূমি সমস্যার উপর এসব সংবেদনশীল সংবাদকর্মীদের প্রতিবেদন স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ করা হলেও জাতীয় দৈনিকে প্রায়ই অপ্রকাশিত থেকে যায়।
বলাবাহুল্য যে, দেশের অন্যান্য আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মতো রাখাইনদের ভূমি সমস্যার ধরন দেশের বৃহত্তর বাঙালি জনোগোষ্ঠীর ভূমি সমস্যা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাই প্রচলিত আইন-আদালতের মাধ্যমে রাখাইনদের ভূমি সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে রাখাইন প্রতিনিধিরা অভিমত ব্যক্ত করেন। এজন্য রাখাইনদের ভূমি সমস্যা সমাধানকল্পে বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে রাখাইনসহ দেশের সমতল অঞ্চলের সকল আদিবাসীদের বেহাত হওয়া ভূমি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে একটি পৃথক ভূমি কমিশন করা দরকার বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়। আওয়ামলীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার সমতলের আদিবাসীদের ভূমি অধিকার নিশ্চিতকরণে একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের নির্বাচনী ওয়াদা করেছে। কিন্তু সরকারের সেই ওয়াদা বর্তমানে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে বলে আদিবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দ্বিতীয়ত: ১৯৫০ সালের জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৭ ধারায় সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমি অআদিবাসী বা অন্য জনগোষ্ঠীর নিকট হস্তান্তরে বাধা-নিষেধ হিসেবে সংশ্লিষ্ট জেলার রাজস্ব কর্মকর্তার অনুমোদনের বিধান রয়েছে। রাখাইন জনগোষ্ঠীসহ সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এই বিধান অত্যন্ত দুর্বল বলে বিবেচনা করা যায়। তা সত্ত্বেও এই বিধান উপকূল অঞ্চলে যথাযথভাবে কার্যকর করা হয় না বলে রাখাইন প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন। এই বিধানকে লঙ্ঘন করে প্রশাসন অআদিবাসী বা অন্য জনগোষ্ঠীর নিকট রাখাইনদের ভূমি বন্দোবস্ত ও হস্তান্তর করে চলেছে। তাই রাখাইন ভূমি বেদখল রোধকল্পে ১৯৫০ সালের জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৭ ধারা যথাযথভাবে কার্যকরকরণের দাবি জানিয়েছেন রাখাইন প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালের ২২ জুন অনুস্বাক্ষরিত আদিবাসী ও ট্রাইবাল জনগোষ্ঠী বিষয়ক আইএলও’র ১০৭ নং কনভেনশনে আদিবাসী ও ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যগতভাবে অধিকৃত ভূমির উপর যৌথ কিংবা ব্যক্তিগত মালিকানার অধিকার স্বীকার করা হয়েছে। সরকারের অনুসমর্থিত এই আন্তর্জাতিক চুক্তি মোতাবেক রাখাইনদের ভূমি অধিকার সুরক্ষার দাবি জানিয়েছেন রাখাইন গ্রামবাসীরা। রাখাইনদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া এবং এই অঞ্চল থেকে যেন রাখাইন মানুষেরা চিরতরে হারিয়ে না যান তার নিশ্চয়তা প্রদান করার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আপামর রাখাইন মানুষ।
তারিখ: ২৪ মার্চ ২০১৭।

Back to top button