জাতীয়

আদিবাসী শব্দ ব্যাবহারে বিধিনিষেধের প্রতিবাদ জানিয়েছে আদিবাসী ছাত্র যুবরা

আজ ৫ আগস্ট (শুক্রবার) আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক আদিবাসী শব্দ চয়ন না করার নির্দেশনার প্রতিবাদে ছাত্র-যুব সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে আদিবাসী ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলো। গত ১৯ জুলাই গণমাধ্যমগুলোর টকশোতে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার নির্দেশনা দিয়ে বিধিনিষেধ জারি করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এই বিধিনিষেধ বাতিলের দাবি জানিয়ে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ প্রতিবাদী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সমাবেশে সঞ্চালনা করেন আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ।

অলিক মৃ তার বক্তব্যে বলেন, আপনারা আমাদের উপজাতি বলছেন। আমরা সংখ্যায় কম বলে ক্ষুদ্র বলছেন। নদীর উপনদী থাকতে পারে, গাছের শাখা-প্রশাখা থাকতে পারে, কিন্তু জাতির কখনও উপজাত বা শাখা থাকতে পারে না।”

আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই বলেন, “আমরা নিজেদের আদিবাসী পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশে বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর বাইরে চাকমা, মারমা, গারোসহ ৫৪টি জাতিগোষ্ঠী বাস করে, তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও প্রথা রয়েছে। আমরা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার আমাদের কথা রাখেনি। আমাদের পরিচয় তারা চাপিয়ে দিচ্ছেন।”

সমাবেশে সংহতি বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল। তিনি তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, “সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিষয়ে আমরা বলেছি আদিবাসীদের ’আদিবাসী’ হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে হবে। জাতিসংঘ দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তাহলে কেন তাদেরকে নাম ডাক চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে?

তিনি আরো বলেন, আগামী ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যারাই শুভেচ্ছা বাণী দেবে, সেখানে আদিবাসী না লিখলে আপনারা তা প্রত্যাখ্যান করবেন।

উক্ত সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আদিবাসী যুব ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), কোচ আদিবাসী ইউনিয়ন, ত্রিপুরা ক্রিস্টিয়ান স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশন, মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, হাজং স্টুডেন্ট কাউন্সিল, গারো ছাত্র সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি ম্যাথিউস চিরান বলেন, আমরা সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম যে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত হবে, এটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হবে, বাংলাদেশ হবে একটি বৈচিত্র্যের দেশ। বাংলাদেশের সকল জাতিসত্তাই সাংবিধানিক অধিকার পাবে।

তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহার এ তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতৃ শেখ হাসিনা আদিবাসী দিবসে আদিবাসীদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী প্রেরণ করেন। কিন্তু এই ক্ষমতাসীন সরকার ১৩ বছর অতিক্রান্ত করার মধ্যে তার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আদিবাসীদেরকে আদিবাসী হিসেবে শব্দ চয়ন না করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে। এইদেশে যারা আদিবাসী ছাত্র সংগঠন রয়েছে, যুব সংগঠন রয়েছে, প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন রয়েছে আমরা সকলেই এই প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।

তাছাড়া বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি ছাত্রনেতা নুথোয়াইন মারমা বলেন, বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এই যে প্রজ্ঞাপনটি দিয়েছে তার মাধ্যমে কী প্রমাণ করতে চায় যে বাংলাদেশে কী আদিবাসী নেই? এইদেশে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসা আদিবাসীরা অবহেলিত, নিষ্পেষিত, বৈষম্যের শিকার। আপনারা কী বলতে চান, যে বাংলাদেশে শুধু বাঙালীরাই বসবাস করে। আদিবাসীরা বসবাস করেনা?

তিনি বলেন, এই বৈচিত্র্যকে সামনে রেখে আমরা বলতে চাই, আপনারা আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার না করা মানে জাতিসংঘ ও আইএলও’র আদিবাসীদের সম্পর্কে দেওয়া বিবৃতিগুলোকে অস্বীকার করা।

এছাড়াও সমাবেশ পরবর্তী একটি বিক্ষোভ মিছিল করেছে আদিবাসী ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলো। বিক্ষোভ মিছিলটি শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের সামনে শেষ হয়।


উল্লেখ্য যে, গত ১৯ জুলাই তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শেখ শামছুর রহমান স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন ছোট ছোট সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃগোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়। সেই সাথে আগামী ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত টকশোতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গকে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার নির্দেশ দেয়া হয়।

Back to top button