আগামীকাল বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্যের ৮৩ মত জন্মদিন
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): আগামীকাল ৬ আগস্ট। ৬০ এর দশকের স্বৈরশাসক আইয়ুব-ইয়াহিয়া বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য ৮৩ তম বছরে পদার্পন করবেন।
দিনটি পালন উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার বেলা ৪টায় সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের উদ্যোগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় রুম ১, পশ্চিম গ্যালারীর নিচে জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্স, শাহবাগ এ সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা ও সূহৃদ সমাবেশ আয়োজন করবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সংক্ষিপ্ত জীবনী:
পঙ্কজ ভট্টাচার্য ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলায় রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রফুল্ল কুমার ভট্টাচার্য, একজন আদর্শ শিক্ষক ও স্বদেশী আন্দোলনের নিবেদিত প্রাণ। মাতা মনি কুন্তলা দেবী স্বদেশী আন্দোলনের নেতা কর্মীদের আশ্রয়দাতা ও অনুপ্রেরনাকারী।
১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম শহরে এসে স্কুলে ভর্তি হন তিনি। এই সময়টি ছিল, এক উত্তাল-পাতাল সময়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে মাত্র অন্যদিকে স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল ভারত। ১৯৪৬ সালের জুলাই মাসে সারা ভারতে ডাক ও তার ধর্মঘট পালিত হয়, বাংলার ব্যাপক এলাকায় তেভাগা, টংকপ্রথা ও নানকার প্রথা বন্ধের দাবিতে আন্দোলনের অভিঘাতে আলোড়িত হয় গ্রামবাংলা। স্বাভাবিক ভাবে এই আবহের প্রভাব চট্টগ্রাম শহরেও পড়েছিল ব্যাপক। শৈশব ও কৈশরের সন্ধিক্ষনে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের মনেও এই আবহের ছাপ পড়েছিল গভীরভাবে।
আন্দোলন সংগ্রামের উজ্জীবিত পঙ্কজ ভট্টচার্য রাজনীতির কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে বিতাড়িত হয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মুসলিম স্কুলে। ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্র হিসেবে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেন। এই সময় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গেও পরিচিত হন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হন। তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন, পাশাপাশি কমিউনিস্ট পার্টির কার্যক্রমেও ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। ১৯৬২’র ছাত্র আন্দোলনে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সারাদেশে ছাত্র-সমাজকেঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে পঙ্কজ ভট্টাচার্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিতহন। ১৯৬৪-৬৫ সালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে পঙ্কজ ভট্টাচার্য ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করেন। এই সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ব্যাপক জানমালের ক্ষতি সাধিত হলে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে সংখ্যালঘু এলাকায় পাহারা ও ত্রাণকার্যক্রম পরিচালনায় পঙ্কজ ভট্টাচার্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
১৯৬৭ সালে স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলার পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পূর্বেই স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলার আইয়ুব-ইয়াহিয়ার স্বৈরশাসনের রোষানলে পড়ে তিনি তিনমাস কারাবাসে নির্যাতিত হন। স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলা ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা একই সুত্রে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা করা হলেও পাকিস্তান ন্যাপ এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে পড়বে এই বিবেচনায় স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করা হয়।
স্বৈরাচার আইয়ুব-ইয়াহিয়ার ষড়যন্ত্রে সাড়ে ৩ বছরের অধিক সময় পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে কারান্তরালে থাকতে হয়। ১৯৬৯ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনী গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭২ সালে পঙ্কজ ভট্টাচার্য ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন, অর্থাৎ ১৫ দল, ১১ দল, পিডিএফসহ বিভিন্ন জোট গঠন ও পরবর্তীতে ১৪ দল গঠনে পঙ্কজ ভট্টাচার্য সদা সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। ১৯৯৩ সালে বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তীত প্রেক্ষাপটে মানব মুক্তির নয়াদিগন্তের সন্ধান ও কৌশলে পঙ্কজ ভট্টাচার্য সহ সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় কনভেনশনের সিদ্ধান্তে গণফোরাম গঠন করা হয়।পঙ্কজ ভট্টাচার্য ২০০৮ সালের পরবর্তী সময়ে সমমনাদের নিয়ে‘ঐক্যন্যাপ’গঠন করেন।
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ হল- আপন হারা দিনগুলি। এই রাজনীতিবিদ দেশের আপামর নিপীড়িত মানুষের জন্য আজ অবধি কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে দেশের
প্রান্তিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি আজও সোচ্ছার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।