আন্তর্জাতিক

ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় রায়ের পর ভারতে ব্যাপক সহিংসতা

ভারতের স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু গুরমিত রাম রহিম সিং ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর পঞ্জাব ও হরিয়ানায় ব্যাপক সহিংসতা শুরু করেছে তার ভক্তরা।

সহিংসতার আশঙ্কায় আগে থেকে সেনা-পুলিশ সব প্রস্তুত রেখেও পরিস্থিতি বাগে আনা যায়নি। লঠিচার্জ করে, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েও পাঁচকুলা পরিস্থিতি পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।

সংঘর্ষ আর পুলিশের গুলিতে সেখানে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছে বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

পঞ্জাব এবং হরিয়ানার বিভিন্ন স্থানে গণ্ডগোল শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই দু’টি রেলস্টেশনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে ধর্মগুরু রাম রহিমের ক্ষুব্ধ অনুসারীরা। দু’টি থানাতেও অগ্নিসংযোগ করেছে তারা।

ধর্মীয় গোষ্ঠী ডেরা সাচ্চা সওদার সদর দফতর সিরসায় এবং পাঁচকুলায় রাম রহিমের অনুসারীরা সংবাদমাধ্যমকেও আক্রমণ করেছে। সংবাদকর্মীদের গাড়ি ভাঙচুর করেছে ক্ষুব্ধ ডেরা সমর্থকরা। গণমাধ্যমের একাধিক গাড়ি এবং ও ভ্যান নষ্ট করেছে তারা।

চন্ডিগড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় শহরজুড়ে কয়েকটি স্থানে এবং পঞ্জাবজুড়ে কারফিউ জারি হয়েছে।
পাঁচকুলার পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। সেখানে কারফিউ জারি করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আদালত চত্বরের বাইরে প্রচণ্ড গোলমাল চলছে।
পাঁচকুলায় থানা এবং বিভিন্ন সরকারি দফতরে রাম রহিম ভক্তরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগুন লাগানো হয়েছে বহু গাড়িতে।

গোটা শহরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। পুলিশের সঙ্গে প্রবল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন রাম রহিম সমর্থকরা।

পুলিশ পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে গুলি চালানোতেই নিহতের ঘটনা ঘটেছে বলে শোনা যাচ্ছে। ১৪ জন নিহত হওয়া ছাড়াও সংঘর্ষে আহত অন্তত ২শ’ বলে জানানো হচ্ছে খবরে। তবে প্রসাশনিকভাবে হতাহতের সংখ্যার ব্যাপারে এখনও কিছু বলা হয়নি।

ডেরা সচ্চা সৌদার সদর দফতর হরিয়ানার সেই সিরসাতেও তাণ্ডব চলছে। পুলিশের সঙ্গে সেখানেও রাম রহিম ভক্তদের সংঘর্ষ হয়েছে।

অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে দিল্লিতেও। রাজধানীর আনন্দ বিহার রেলওয়ে স্টেশনে একটি ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাসও জ্বালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।

হরিয়ানা ও পঞ্জাবজুড়ে তান্ডবের মুখে দুই রাজ্যের সীমান্তই সিল করে দেওয়া হয়েছে।

উত্তেজনার মধ্যেই সিরসায় নিজের সাংগঠনিক দপ্তর থেকে ১০০ গাড়ির বহর নিয়ে রওনা হয়ে আড়াইশ কিলোমিটার দূরে পাঁচকুলা আদালতে পৌঁছান রঙদার চরিত্র রাম রহিম সিং।

আদালত দুপুরে রায় ঘোষণার পরপরই ৫০ বছর বয়সী রাম রহিমকে কড়া পাহারার মধ্যে আম্বালা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। রায় শোনার পর আদালতের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বহু সমর্থক। টেলিভিশন ফুটেজে ওই সময়ই রাম রহিমের অনুসারীদেরকে সহিংসতায় লিপ্ত হতে দেখা গেছে।

বিবিসি লিখেছে, একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, চিত্রনায়ক ও পরিচালক বাবা রাম রহিমের মতো বর্ণময় চরিত্র ভারতের অজস্র ধর্মগুরুর মধ্যেও বিরল। শিখ, হিন্দু, মুসলিম- সব ধর্মের চেতনা মিশিয়ে বাবা রাম রহিম তৈরি করেছেন তার আশ্রম- ডেরা সাচ্চা সওদা।

হরিয়ানায় গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন রাম রহিম। লাখ লাখ ভক্ত থাকায় বড় ভোট ব্যাংক বিবেচনা করে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অনেক নেতাই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখেন।

কিন্তু পনেরো বছর আগে নিজের আশ্রমেই দুজন ভক্ত মহিলাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির চিঠির সূত্র ধরে ২০০২ সালে এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে সিবিআই। সেখানে বলা হয়, ১৯৯৯ সালে নিজের আশ্রমে দুই শিষ্যাকে ধর্ষণ করেন রাম রহিম।

২০০৭ সালে শুনানি শুরুর পর দশ বছরের মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। বিচারের পুরোটা সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন ডেরা সাচ্চা সওদার প্রধান।

তথ্যসূত্রঃ bdnews24.com

Back to top button