জাতীয়

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় অনিল মারান্ডীকে স্মরণ

সতেজ চাকমা: বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাবেক সহ-সভাপতি অনিল মারান্ডীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজধানীতে আজ স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উক্ত স্মরণ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ফোরাম, জনউদ্যোগ এবং আইইডি।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হরেন্দ্র নাথ সিং এর পরিচালনায় উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ফোরামের সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। উক্ত স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমদ খান, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, আইইডির প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জ্যোতি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

স্মরণ সভার শুরুতেই অনিল মারান্ডির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। আদিবাসীদের এই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু স্মৃতিচারণ করেন জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, অনিল মারান্ডি নিজেই নিজেকে তৈরী করেছেন। তিনি যখন সংগ্রাম করেছেন উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের তখন তেমন কোনো ছাত্র-যুব সংগঠন ছিল না। আজকের উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের বর্তমান রাজনৈতিক সচেতনতা ও সাংগঠনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠায় অনিল মারান্ডীর অবদান অনস্বীকার্য।

আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমদ খান বলেন, অনিল মারান্ডী আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠিত রাজনৈতিক লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তাকে অনুভব করতেন খুব করে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে নাড়া দিয়ে আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের কথাও ভাবতেন অনিল মারান্ডী।

আদিবাসীদের সামগ্রিক বাস্তবতার কথা তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, টংকা বিদ্রোহ, তেভাগা ও সিপাহী আন্দোলনেও আদিবাসীরাই নেতৃত্ব দিয়েছেন। যাদের অর্থ, ক্ষমতা রয়েছে তাদের পক্ষেই ইতিহাস রচিত হয়েছে, যেখানে আদিবাসীরা উপেক্ষিত বলেও মত দেন এই মানবাধিকার কর্মী।

নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, আজকের উদ্দেশ্য কেবল অনিল মারান্ডীকে স্মরণ নয়, তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আদিবাসীদের প্রগতিকে সামনে এগিয়ে নেওয়ায় আমাদের লক্ষ্য।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য অনিল মারান্ডীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি (অনিল মারান্ডী) এমন এক উঁচু মাপের আদর্শের অনুসারী একজন মানুষ যার অকপটে সত্য বলার সাহস এবং রাষ্ট্রীয় অসংগতিগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার একজন যোদ্ধা, যা আমাদের সমাজে বিরল।

অনিল মারান্ডী এককালে রিক্সা চালিয়ে জীবন যাপন করেছিলেন উল্লেখ করে বর্ষীয়ান এ বাম নেতা আরো বলেন, “দরিদ্রতা, নির্যাতন, নিষ্পেষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েই তিনি (অনিল মারান্ডী) লড়াই করেছেন। কখনো লড়াইয়ের মাঠ ছাড়েননি।”

সভাপতির বক্তব্যে সঞ্জীব দ্রং বলেন, অনিল দা’র সাথে আমাদের সম্পর্কটা আদর্শিক। পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীর মধ্যে রাজনৈতিক মেলবন্ধন ঘটানোর প্রক্রিয়ায় অনিল মারান্ডীর অবদান অনস্বীকার্য।

তিনি আরো বলেন, “২০১০ সালে সরকার সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন পাস করলে অনিল মারন্ডী আক্ষেপ করে বলেছিলেন যে, সরকারকে অনেক ধন্যবাদ। তারা (সরকার)কী তাহলে এ বিল পাসের পূর্বে আমাদেরকে জন্তু জানোয়ার মনে করতেন? ”

উল্লেখ্য অনিল মারান্ডীর জন্ম ৯ জুলাই ১৯৫৭ সালে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের রাজাবাড়ী হাটের পাশে বাদুরঝোলা গ্রামে। সাঁওতাল পরিবারে জন্ম নেয়া এ আদিবাসী নেতা মৃত্যুবরণ করেন ২০১৯ সালের আজকের (৭ জানুয়ারী) এই দিনে।

Back to top button