মতামত ও বিশ্লেষণ

ভূমিধস, আদিবাসী উচ্ছেদ ও মানবাধিকারঃ সঞ্জীব দ্রং

এবার আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের আগের দিন আমি এই প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেছিলাম এএলআরডিসহ কয়েকটি সংগঠন আয়োজিত সেমিনারে। বলেছিলাম, বিশ্বের ৯০টি দেশের প্রায় ৪০ কোটির অধিক আদিবাসী জনগণের জন্য আদিবাসী দিবস হলো তাদের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে প্রেরণার দিন।এবারের আদিবাসী দিবসের মূল সুর ছিল, “The 10th Anniversary of the UN Declaration on the Rights of Indigenous Peoples.” জাতিসংঘ আদিবাসী দিবস উদযাপনের মূল লক্ষ্য হলো- আদিবাসীদের জীবনধারা, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার, আদিবাসী জাতিসমূহের ভাষা ও সংস্কৃতি তথা আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকার সম্পর্কে সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, সংখ্যাগরিষ্ঠ অ-আদিবাসী জনগণ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন করে তোলা এবং আদিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করা। দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে আজো আদিবাসী দিবস পালিত হলো না। এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রবন্ধটি উপস্থাপন করছি।
এক.
বৈশ্বিক পর্যায়ে আদিবাসীদের একটি ঘোষণাপত্র আছে। সেই লেটিসিয়া ঘোষণাপত্রের কয়েকটি লাইনের বাংলা রূপান্তরের চেষ্টা আমি করেছি এভাবে, ‘সকল মানুষের আগমন ঘটেছে বন থেকে, ভূমি থেকে। বন মরে গেলে মানুষ মরে যায়। আমাদের উপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে বিশ্বের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার, একে মমতা-ভালোবাসা দিয়ে যতœ করার। যখন এ প্রকৃতির কোনো একটি অংশকে ধ্বংস করা হয়, তখন সকল ভারসাম্য লন্ডভন্ড হয়ে যায়। যখন বনের শেষ বৃক্ষ কেটে ফেলা হবে, যখন শেষ নদীটি শুকিয়ে যাবে, তখন মানুষ শিখবে যে সোনা ও রূপা খেয়ে জীবন বাঁচে না। সঠিক ও নির্লোভভাবে প্রকৃতিকে, বন ও ভূমিকে ব্যবহার করার ভার আমরা পেয়েছি পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে, যারা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একে রক্ষার ভার আমাদের দিয়ে গেছেন।’ অস্থির পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মানুষের অপরিণামদর্শী ও সীমাহীন লোভ-নিষ্ঠুরতার কাছে আদিবাসী সমাজ আজ বিপন্ন, অসহায়। প্রকৃত বিচারে ধরিত্রীর সকল প্রাণীই আজ বিপন্ন। আদিবাসী সংস্কৃতি ও জীবনধারাকে সম্মান ও রক্ষা করলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড়ে এমন ভূমিধস হতো না। এতগুলো প্রাণহানিও ঘটতো না।
দুই.
আদিবাসী অধিকার মানবাধিকার ও মানব মর্যাদার অংশ। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আদিবাসী জনগণ এখন কঠিন সময় পার করছে। এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি আমরা। সাঁওতালদের উপর হামলা, লংগদুতে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ, খাসিয়াদের ভূমি দখল, মধুপুরে রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা, উপকূলে রাখাইনদের উপর বিরামহীন অবিচার ও সারা দেশে আদিবাসীদের উপর অব্যাহত নিপীড়ন ও নির্যাতনের ঘটনা বলে দেয় আদিবাসীরা ভালো নেই। সরকার বলছে, উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে দেশ। প্রকৃতপক্ষে আদিবাসী জনগণ, গরিব প্রান্তিক কৃষক, দলিত হরিজন, খেটে খাওয়া মেহনতী মানুষ, চা বাগানের শ্রমিকসহ লক্ষ লক্ষ মানুষ এই কথিত উন্নয়নের জোয়ারে ডুবে যাচ্ছে। এই যে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে এত মানুষ মারা গেল, অথচ সরকারের সেখানে তেমন কর্ম তৎপরতা নেই। সরকার যেন নির্বিকার। এখনো পাহাড়ে আশ্রয়হীন মানুষ ক্ষুধা ও অভাবের তাড়নায় হাহাকার করছে, সুনামগঞ্জের হাওর কৃষকের অশ্রু জলে ভরে আছে। জেলায় জেলায় বানভাসী মানুষ অবর্ণনীয় কষ্ট পেয়েছে। ঢাকা শহর ও চট্টগ্রাম ডুবে গেছে কিছুদিন। আর সরকার উন্নয়নের জোয়ারে আত্ম-অহংকারে ভেসে বেড়াচ্ছে। অথচ সাধারণ মানুষের জীবনে চলছে অবিরাম হাহাকার ও বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস। অস্ফুট কান্না আর নীরব বেদনায় এক অন্ধকার ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে এদেশের আদিবাসীসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র শোষিত জনগণ। সরকার বলছে, বাংলাদেশ নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এভারেজ ও গড়পড়তা হিসাবের মারপ্যাচ আছে এই হিসাবে। বাস্তবতা হলো, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত হাজার হাজার আদিবাসী মানুষের জীবনে, অগণন মেহনতী মানুষের জীবনে এ কথাগুলোর প্রতিফলন নেই, এর সত্যতা নেই। মানবাধিকার লংঘন, ভূমি দখল, নিপীড়ন ও নির্যাতনের ফলে আদিবাসীদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে কবলিত। মাথা পিছু আয়ের যে হিসাব দেখানো হয়, সেখানেও আদিবাসী জীবনের প্রতিফলন নেই। দেশে যখন ‘আমিত্বের’ অহংকার সর্বগ্রাসী হয়, দেশে যখন জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতার অভাব প্রকট হয়, তখন আদিবাসীসহ দেশের গরিব ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে আসে দুর্বিষহ পরিস্থিতি। তারা আরো বেশি প্রান্তিক অবস্থানে চলে যায়। দেশে এমনি যন্ত্রণাময় অবস্থা বিরাজমান এখন। আদিবাসীদের ভূমি নির্বিঘ্নে অনায়াসে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। অহংকার ও ক্ষমতার দাপটে পাহাড়ি আদিবাসীরা আরো অসহায় হয়ে পড়ছে। মানবাধিকার লংঘনের কোনো প্রতিকার নেই, আদিবাসী ও প্রান্তিক মানুষের জন্য যেন ‘কোথাও কেউ নেই’। রাষ্ট্র ও সরকার আদিবাসীদের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। যেন কারো কোনো দায়িত্ব নেই। আদিবাসীদের সঙ্গে রাষ্ট্রের দায়িত্বহীন ও বৈরী আচরণ অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজিতে জাতিসংঘ আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের কথা বলছে। আর দেশে আদিবাসীদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে কবলিত। সরকার ভিএনআর বা ভলুন্টারী ন্যাশনাল রিভিউ জাতিসংঘে দাখিল করেছে জুলাই মাসে, অথচ আদিবাসীদের কারো সাথে এই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার প্রয়োজনও মনে করেনি। অথচ জাতিসংঘে গিয়ে বলেনি যে তারা আলোচনা করেনি।
তিন.
পৃথিবীর নানা দেশে আদিবাসী অধিকার ঘোষণাপত্রের বাস্তবায়ন
আদিবাসী ইস্যুতে পৃথিবীর অনেক দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। নরওয়েসহ স্ক্যানডিনেভিয়ান কয়েকটি দেশে আদিবাসী সামি পার্লামেন্ট আছে। নেপাল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, জাপান, তাইওয়ান, ভিয়েতনামসহ অনেক দেশ চেষ্টা করছে আদিবাসীদের অধিকার প্রদানের। অস্ট্রেলিয়া সরকার অতীতের ভুল আচরণের জন্য পার্লামেন্টে আদিবাসীদের কাছে ঐতিহাসিক ক্ষমা চেয়ে বলেছে, ‘এই ক্ষমা প্রার্থনা ও উপলব্ধির মধ্য দিয়ে আমরা একে অপরের যাতনা বুঝতে পারবো এবং সামনে অগ্রসর হতে পারবো।’ আমেরিকা, কানাডা ও নিউ জিল্যান্ড সরকারও তাদের অতীত ভুল আচরণের জন্য আদিবাসীদের নিকট ক্ষমা চেয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ এগিয়ে যাচ্ছে আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। আইএলও কনভেনশন ১৬৯ র‌্যাটিফাইয়ের বেলায়ও তারা শীর্ষে। বলিভিয়া জাতিসংঘ আদিবাসী অধিকার ঘোষণাপত্রকে রাষ্ট্রীয় আইনে পরিণত করেছে। শুধু তাই নয়, ২০০ বছরের ইতিহাসে চারুগুয়া প্রদেশে স্বশাসিত স্থানীয় সরকার (Autonomous Local Government) চালু করেছে। পেরুতে‘ Autonomous Territorial Government of the Wampis Nationa-GTANW’ গঠিত হয়েছে যেখানে আদিবাসী জনগণ লরেটো ভূমি ও আমাজন অঞ্চলের ১৩ লক্ষ হেক্টর ভূমির উপর পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। মায়ানমার ২০১৬ সালে তাদের পার্লামেন্টে Land Use Rights of Ethnic Nationalities পলিসি গ্রহণ করেছে যেখানে আদিবাসীদের ভূমি মালিকানার অধিকার অন্তর্ভুক্ত করেছে। পার্লামেন্টে দীর্ঘ বিতর্কের পর কেনিয়া সরকার ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ‘কম্যুনিটি ল্যান্ড এ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেছে। আমাদের দেশেও মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট নভেম্বর মাসের ১৬ তারিখ পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন এ্যাক্ট পুনর্বহাল করেছে। ২০১৬ সালে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট টাই ইং-ওয়েন দেশের আদিবাসীদের কাছে রাষ্ট্রের চার দশকের বৈষম্যমূলক আচরণ ও দুর্ব্যবাহারের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। নামিবিয়াও ক্ষমা প্রার্থনা করেছে আদিবাসী জনগণের কাছে। আপনারা জানেন যে, পাকিস্তানেও Provincially Administered Tribal Area (PATA) Ges Federally Administered Tribal Area (FATA) আছে, যা চিত্রল, দির, সোয়াট, খাইবার, কারাম, নর্থ ওয়ারিজিস্তান প্রভৃতি অঞ্চল নিয়ে গঠিত। স্বশাসনের সবচেয়ে ভালো নমুনা হলো নর্থ ইস্টসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল রাজ্যসমূহের আদিবাসী অঞ্চলগুলো।
চার.
সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা
এক কথায় বলা যায়, দেশে আদিবাসী জীবন এখন আদিবাসীদের নয়, লাইফ ইজ নট আওয়ার্স। এখানে আদিবাসী ভূমি দখলের মহোৎসব চলছে। আদিবাসীদের কাছে ভূমিই জীবন ও অস্তিত্বের প্রতীক। অথচ এখন প্রতি নিয়ত জমি হারাচ্ছে আদিবাসীরা। শুধু ভূমিলোভী চক্র নয়, কখনও কখনও বিভিন্ন প্রকল্পের নামে বিশেষত ন্যাশনাল পার্ক, ইকো-পার্ক, রিজার্ভ ফরেস্ট, সামাজিক বনায়ন, সামরিক বাহিনীর ক্যাম্প ও স্থাপনা সম্প্রসারণ ইত্যাদির কারণে আদিবাসীরা ভূমি হারাচ্ছে। নতুন যন্ত্রণা শুরু হয়েছে, ইকোনমিক জোন গড়ার পরিকল্পনা আদিবাসীদের ভূমিতে ও গরিব প্রান্তিক মানুষের ভূমিতে।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের অবস্থা
৬ ও ৭ নভেম্বর ২০১৬ গাইবান্ধা জেলার সাহেবগঞ্জ ও বাগদাফার্ম এলাকায় পুলিশ ও সুগার মিল কর্তৃপক্ষ মিলিতভাবে সাঁওতাল কৃষকদের উপর ভয়াবহ আক্রমণ চালায়। পুলিশের উপস্থিতিতে চিনিকল মালিকের পক্ষের একদল লোক আদিবাসীদের বাড়িঘরে লুটতরাজ চালায়, আগুন দিয়ে সাঁওতালদের বসতভিটা ছারখার করে দেয়। শুধু তাই নয়, প্রকাশ্যে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেবার পর যাতে বাড়িঘর, বসতভিটার কোনো চিহ্ন না থাকে, তার জন্য ট্রাক্টর দিয়ে দিন রাত সেখানে হাল চাষ করানো হয়। পুলিশের গুলিতে কম পক্ষে তিন জন আদিবাসী সাঁওতাল নিহত হন। নিহতরা হলেন শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মার্ডি ও রমেশ টুডু। বুলেট বিদ্ধ হয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় দ্বিজেন টুডু, চরন সরেন ও বিমল কিস্কু। বাড়িঘর হারিয়ে সাঁওতালরা গীর্জা ঘরের বারান্দা ও আঙিনায় আশ্রয় নিয়েছেন। এখানো অনেকে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছেন।
১,৮৪২.৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে এই সমস্যা। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গোবিন্দগঞ্জ পরিদর্শন করেন এবং মিডিয়াতে বলেন, এ ঘটনায় ভয়াবহ মানবাধিকার লংঘন হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতীয় পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত সাঁওতালদের ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। এখন মামলা চলছে। সাঁওতালরা এখনো জমি ফেরত পায়নি। এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে।
মৌলভীবাজারে ঝিমাই, আমুলি, মেঘাটিলা, নাহার, কাইলিন পুঞ্জি ও পাল্লাথল পুঞ্জি
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের নাহার ও কাইলিন পুঞ্জির ৭০০ খাসিয়া পরিবারকে ৩০ মে ২০১৬ উচ্ছেদ নোটিশ প্রদান করে জেলা প্রশাসন। ওই নোটিশে বলা হয়েছে, খাসিয়াদের ১২ জুনের মধ্যে বাড়িঘর, জায়গা জমি ছেড়ে চলে যেতে হবে, নইলে পুলিশ ফোর্স নিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হবে। পরে খাসিয়ারা সিলেটে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করে। বিভাগীয় কমিশনার ২ আগস্ট ২০১৬ এই উচ্ছেদ নোটিশ সাময়িকভাবে স্থগিত করে। কারণ এই জমি নিয়ে ২টি স্বত্ত্ব মামলা নিস্পত্তির হয়নি। খাসিয়া আদিবাসীরা স্মরণাতীত কাল থেকে বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন পাহাড় ও বনাঞ্চলে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে প্রথাগত ভূমিতেবসবাস করে আসছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় মুনাফা লোভী একটি গোষ্ঠী খাসিয়াদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ এবং গাছ কেটে বন উজাড় করার ষড়যন্ত্র¿ করে আসছে। খাসিয়াদের নামে নানা মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য পরিবেশন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এ সবের একটিই লক্ষ্য খাসিয়াদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা।
ঝিমাই খাসিয়া পুঞ্জি
এই পুঞ্জিতে ৭২টি খাসিয়া পরিবারের চারশতাধকিসদস্য যুগ যুগ ধরে প্রথাগত (customary) ও ঐতিহ্যগত (ancestral) ভূমিতে বংশ পরম্পরায় বাড়িঘর বসতিসহ পানজুম করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। খাসিয়াদের ভূমিতে রয়েছে পূর্ব পুরুষদের পবিত্র সমাধি ক্ষেত্র বা কবরস্থান, তিনটি ধর্মীয় গির্জা ঘর, খেলার মাঠ, যুবকদের খেলার ক্লাব, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, খাসিয়া মাতৃভাষা শিক্ষাকেন্দ্র, একটি প্রাথমিক স্কুল যেখানে ৭১ জন শিশু পড়াশোনা করে। ব্রিটিশ আমলের আগে থেকে খাসিয়ারা এই ভূমিতে বাস করে আসছে সাথে ইউনিয়ন পরিষদ ট্যাক্স সহ অনান্য সকল প্রকাররে নাগরকিক কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করে আসছে ।কিন্তু আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকার ও প্রথাগত সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে ভমিতে বসবাসরত খাসিয়াদের অজ্ঞাত সারে চা বাগান মিথ্যা তথ্যর ত্তিতিতে ভূমিমন্ত্রণালয় গত ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর ঝিমাই চা বাগানকে খাসিয়াদের ভূমিসহ লীজ দেয়। সেই থেকে উচ্ছেদ আতঙ্কে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে খাসিয়ারা। চা বাগান কর্তৃপক্ষ পুঞ্জিতে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে রাস্তার মধ্যে তালাবদ্ধ করে গেট নির্মান করা হয়েছে।
এদিকে গত ১০ এপ্রিল থেকে আমুলি ও মেঘাটিলার খাসিয়া ও গারোরাও নিরাপত্তাহীনতা ও হয়রানির শিকার হয়েছে। সেদিন নিউরাঙ্গী পুঞ্জির জুমে আক্রমণ করে একদল সন্ত্রাসী। এ নিয়ে মামলা চলছে। এলাকায় একদল লোক সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর অপচেষ্টা করেছে। এছাড়াও বড়লেখা উপজেলার পাল্লাথল খাসিয়া পুঞ্জিতে বসবাসরত ৫০টি পরিবার বাংলাদেশÑভারত যৌথ সীমান্ত চুক্তি সম্পাদনের ফলে নিজস্ব জমিজমা হারাতে বসেছে। বাংলাদেশÑভারত যৌথ সীমান্ত চুক্তি সম্পাদনের পরে দেখা যায় যে, খাসিয়া ও গারোদের দখলীয় ভূমির দুই তৃতীয়াংশ অপদখলীয় (adverse possession) ভূমি বিবেচনায় ভারতের অংশ হিসেবে জরিপে দেখানো হয়। জরিপকারীদের আদিবাসীরা আপত্তি জানালেও তারা বিষয়টি আমলে নেননি। এতে খাসিয়া পুঞ্জিতে বসবাসরত জনগণ মারাত্মক ক্ষতির সম্মূখীন হতে যাচ্ছে। পুঞ্জির বসতভিটা, কবরস্থান, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খেলার মাঠ ছাড়া জীবন জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস সকল পানÑবাগান ভারতের আওতায় (আসাম) চলে যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশ থেকে খাসিয়া পুঞ্জির ৩০০ শতাধিক একর ভূমি ভারতের আসামের অধীনে চলে যাচ্ছে। এখন ভারত ও বাংলাদেশ সরকার খাসিয়া ও গারোদের মানবাধিকার ও জীবন জীবিকা নির্বাহের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা না করলে তারা তাদের ঐতিহ্যগত ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাবে।
টাঙ্গাইলের মধুপুর বনে গারো ও আদিবাসীদের অবস্থা
স্মরণাতীত কাল থেকে টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলে ২৫ হাজারের অধিক গারো, কোচ, বর্মন ও অন্যান্য আদিবাসীরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। এই আদিবাসীরাই পরম মমতায় বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করেছিল। বনবিভাগ বিভিন্ন সময় বন ও পরিবেশ ধবংসকারী মুনাফামুখি প্রকল্প গ্রহণ করে এই প্রাকৃতিক বনকে ধ্বংস করেছে। উডলট ও রাবার বাগানের নামে প্রাকৃতিক শাল বন উজাড় করেছে। বনের ভেতরে বিভিন্ন স্থাপনা, ন্যাশনাল পার্ক, পিকনিক স্পট, বিমান বাহিনীর ফায়ারিং রেঞ্জ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করে এই প্রাকৃতিক বনের সর্বনাশ করেছে। অন্যদিকে আদিবাসীদের নানা মিথ্যা মামলায় হয়রানিসহ হত্যা করেছে। ২০০৪ সালে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আদিবাসীরা ইকো-পার্ক প্রকল্প ঠেকিয়ে দিয়েছিল। ইকো-পার্ক আন্দোলনে পিরেন ¯œাল জীবন দিয়েছিলেন। গত বছর ফেব্রুয়ারী মাসে ২০ ধারা জারী করে বন বিভাগ মধুপর বনে ৯,১৪৫ একর ভূমি রিজার্ভ ফরেস্ট হিসেবে ঘোষণা করেছে যেখানে রয়েছে আদিবাসীদের গ্রাম, বসতবাড়ি, স্কুলঘর ইত্যাদি। জনগণকে না জানিয়ে সরকার এই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আদিবাসীরা এই খবর জেনেছে মে মাসে। সেই থেকে মধুপুরের গারো-কোচ-বর্মন ও সাধারণ জনগণ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
লংগদু সাম্প্রদায়িক আক্রমণ
গত ২ জুন ২০১৭ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলা সদরের তিনটিলা এবং পার্শ্ববর্তী মানিকজোড়ছড়া ও বাত্যা পাড়ায় সেটেলাররা পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়। এ হামলায় তিনটিলায় ৯টি দোকানসহ কমপক্ষে ১২২টি ঘরবাড়ি; মানিকজোড়ছড়ায় ৬টি দোকানসহ ৮৬টি ঘরবাড়ি এবং বাত্যা পাড়ায় ৪টি দোকানসহ অন্তত ২৮টি ঘরবাড়ি- সর্বমোট ২৩৬টি বাড়ি ও দোকান সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয় এবং ৮৭টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।তিনটিলা এলাকায় গুণমালা চাকমা নামে ৭৫ বছরের এক অশীতিপর বৃদ্ধা পালিয়ে যেতে না পারার কারণে ঘরের মধ্যে আগুনে পুড়ে নিহত হন। হামলাকারীদের মারধরের শিকার হন অনেক জুম্ম গ্রামবাসী। সেটেলারা ঘরবাড়ি ও দোকানের মূল্যবান জিনিষপত্র ও মালামাল, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী লুট করে নিয়ে যায় এবং শুকরগুলো মেরে ফেলে দিয়ে যায়। পুড়ে যাওয়া তিনটিলা, মানিকজোড়ছড়া ও বাত্যা পাড়ার প্রায় তিন শতাধিক পরিবার কোন সহায় সম্পত্তি রক্ষা করতে পারেনি এবং এক কাপড়ে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে কোন রকমে জীবন রক্ষা করেছে। এছাড়াও প্রাথমিক থেকে কলেজ পড়–য়া ২৫৬ জন ছাত্র/ছাত্রীর পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষা সামগ্রী, পোষাক পরিচ্ছদ সম্পূর্নরুপে অগ্নিসংযোগে পুড়ে যায়।
ঘটনার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে ১৪ দলের একটি প্রতিনিধিদল ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থল সফর করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িরা তাদের দাবিনামা সম্বলিত স্মারকলিপি এসব মন্ত্রী ও কর্মকর্তাসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করেছেন।উল্লেখ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও সরকারের উচ্চপদস্ত কর্মকর্তারা অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত জুম্মদের স্থায়ী ঘরবাড়ি নির্মাণ ও পুনর্বাসন করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করলেও সরকার এখনো পুনর্বাসনের প্যাকেজ পরিকল্পনা ঘোষণা করে এগিয়ে আসেনি।
পাঁচ.
আদিবাসীদের কাছে ভূমিই জীবন, ভূমিই অস্তিত্ব। আমরা বলি, ল্যান্ড ইজ লাইফ। আদিবাসীদের ভূমি অধিকার সম্পর্কে কিছু বলবার আগে, সম্পদ, ভূমি, বন, প্রাণী জগত, ধরিত্রী ও অধিকার সম্পর্কে আদিবাসী মানুষের ওয়ার্ল্ডভিউ কেমন, সে বিষয়টি ভেবে দেখা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বজুড়ে ভূমির সঙ্গে আদিবাসীদের সম্পর্ক যে শুধু অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক নয়, ভূমির সঙ্গে আদিবাসীদের যে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক রয়েছে (spiritual relationship).বিশ্বজুড়ে ভূমি আদিবাসীদের কাছে পবিত্র। আদিবাসী সংস্কৃতিতে ভূমি হলো জননী। ধরিত্রীও জননী, মাদার আর্থ (mother earth)আদিবাসীরা প্রকৃতিকে অনুভব করতে পারে। তারা বনকে কোনোদিন বেচাকেনার বিষয় হিসেবে দেখে না, জীবনের অংশ হিসেবে দেখে। আর আধুনিক সভ্যতা বন, স¤পদ, প্রকৃতি সবকিছু বাণিজ্যিক দৃষ্টিতে দেখে। এখানেই আদিবাসীদের সঙ্গে বর্তমান উন্নয়ন ধারার সমস্যা। এক সময় আদিবাসী জীবনে সব কিছু ছিল অলিখিত। মুখে মুখে চলে আসা ওরাল সংস্কৃতি। আইনকানুন ছিল মুখে মুখে, প্রথাগত, ট্র্যাডিশনাল। তাদের লিটারেচারও ছিল ওরাল। আদিকালে জীবন ছিল যূথবদ্ধ। তখন বন ও ভূমির উপর ছিল মানুষের ঐতিহ্যগত স্বতঃসিদ্ধ অধিকার। প্রথাগত সব অধিকার। তখন জনসংখ্যা কম ছিল। অবারিত ছিল বন ও ভূমিতে মানুষের বিচরণ। আদিবাসী জীবনের সাথে মূলস্রোতের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনায় প্রখ্যাত লেখকমহাশ্বেতা দেবী তার টেরোড্যাকটিল, পূরণ সহায় ও পিরথা উপন্যাসে আদিবাসীদের কথা এভাবে লিখেছেন, “শোষণ” শব্দ তো হো ভাষায় নেই। যাদের জীবনে শুধুই শোষণ, শুধু বঞ্চনা, সেই আদিবাসীদের কোনো ভাষাতেই কি আছে “শোষণ” শব্দের সমার্থক শব্দ? এক সময়ে বন ছিল, পাহাড় ছিল, নদী ছিল, আমরা ছিলাম। আমাদের গ্রাম ছিল, ঘর ছিল, জমি ছিল, আমরা ছিলাম।
এ কথাগুলোর মধ্যে আদিবাসীদের দুঃখ-কষ্ট-আনন্দ-বেদনা-স্বপ্ন-উন্নয়ন ও এগিয়ে যাওয়া সব জড়িয়ে আছে। জাতিসংঘ স্বীকার করেছে বিশ্বব্যাপী ঐতিহাসিকভাবে আদিবাসী জনগণ নানামুখী শোষণ ও বৈষম্যের কারণে তাদের আত্ম-পরিচয়, ভাষা, সংস্কৃতি ও মৌলিক মানবাধিকার হারাতে বসেছে। তাই আদিবাসী অধিকার বুঝতে হলে ওদের মনস্তত্ত্বকে, ওয়ার্ল্ডভিউ ও জীবন ভাবনার বিশ্বজনীনতাকে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে, গায়ের জোরে, ক্ষমতা ও শক্তির দাপটে নয়। ওদের জীবনে বহিরাগতরা প্রবল রাষ্ট্রীয় শক্তি নিয়ে ঢুকে গেছে আর সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের মতো চলে গেছে সব জমি, বন, পাহাড়, প্রাকৃতিক সম্পদ। অতি সংবেদনশীল, বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছাড়া আদিবাসীদের উন্নয়ন ও রক্ষা করা সম্ভব নয়। রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি – সবখানে আদিবাসী মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও আন্তরিকতার প্রতিফলন দরকার। দরকার সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগ এই প্রান্তিক অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য। দেশে আদিবাসী অধিকার রক্ষার জন্য আইন ও নীতিমালা থাকা দরকার। সিডর ও সুনামির পর আমি কিছু লেখা পড়েছিলাম, বলা হয়েছে, মানুষ এখনো প্রকৃতিকে জয় করতে পারেনি। মানুষ প্রকৃতির কাছে অসহায়। অদ্ভূত কথা, প্রকৃতিকে জয় করার, পরাস্ত করার তো কিছু নেই। মানুষ ও প্রকৃতি একাকার। একজন আরেকজনকে পরাস্ত করার ভাবনা ভুল। বরং আমরা যুক্ত একে অন্যের সঙ্গে। মানুষ নদী, গাছ, পানি, প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত। All is connected.সব কিছুর balance রাখে প্রকৃতি। এ্যাভাটার ফিল্মে নায়িকা নায়ককে বলছে,
mother earth does not take side, it only keeps the balance of the earth. আমরা আদিবাসীরা নদীর কাছে কৃতজ্ঞ, প্রকৃতির কাছে কৃতজ্ঞ। বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্র ও সভ্যতার অনেক কিছু শেখার ছিল আদিবাসীদের জীবনযাপন পদ্ধতি থেকে, যারা এতকাল পাহাড় পর্বতÑবনÑনদী রক্ষা করেছে আজকের মানুষের জন্য।
ছয়.
১৯৬০ সালের এপ্রিল মাসে ভারতীয় সংবিধান মতে, শিডিউলড এরিয়াজ এন্ড শিডিউলড ট্রাইব্স কমিশন গঠিত হয়। ওই রিপোর্টের শিরোনাম ছিল, “দি ফান্ডামেন্টালস অন অ্যান অ্যাপ্রোচ টু দি ট্রাইব্স” যার মূল বক্তব্য ছিল “ট্রাইবাল টাচ” বা “আদিবাসীদের প্রতি পক্ষপাত”। এর মানে হলো, আদিবাসীদের চোখ দিয়ে, ওদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সব কিছু দেখার চেষ্টা করা। আমাদের দীর্ঘ অবহেলা, আমাদের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি – এর প্রায়শ্চিত্ত আমাদের সকলকে করতেই হবে। জগতে একটি মানবজাতি, এবং আদিবাসীরা সে জাতির অতীব অমূল্য এক অঙ্গ।”
আদিবাসী জীবন অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ। এই সমাজে নারী-পুরুষ উভয়ে শ্রমজীবী খেটে-খাওয়া মানুষ। তারা আজো তাদের প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে চায় এবং সফল পরিবর্তনের দিকে এগুতে চায়। আদিবাসী সংস্কৃতি যাতে ধ্বংস না হয়, তার পদক্ষেপ রাষ্ট্রকে নিতে হবে। আদিবাসী বান্ধব একটি জাতীয় পলিসি দরকার। আজ থেকে অর্ধশত বছর আগে ভারতে আদিবাসী কমিশন হয়েছিল ১৯৬০ সালে। তখন মুক্ত ভারতের বয়স মাত্র ১২/১৩ বছর। আর আমরা ৪৬ বছর পার করছি স্বাধীনতার। আমরা কত পিছিয়ে আছি।
ভেরিয়ার এলুইন তার আদিবাসী জগত বইয়ে লিখেছেন, ‘পাহাড় ও সমতলের ঐক্য জাতীয় স্বার্থেও যেমন প্রয়োজন, তেমন প্রয়োজন পাহাড় ও অরণ্যের মানুষদের স্বার্থে। আমরা পরস্পর পরস্পরকে সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় করতে পারি। আদিবাসীদের আমরা অনেক কিছু দিতে পারি, আবার ওদেরও অনেক কিছু আছে, যা আমাদের দেবার মতো।’
এখানে তিনটি দাবি তুলে ধরছিঃ
১. আদিবাসীদের প্রথা ও ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকারের আইনগত স্বীকৃতিসহ সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
২. পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে এবং
৩. আদিবাসীদের উচ্ছেদ, ভূমি দখল, বন দখল, গাছ কাটা ও হয়রানী-জোরদখলকারীদের দস্যুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে তারা বুঝতে পারে রাষ্ট্র তাদের পাশে রয়েছে।

শেষ করছি জেমস ক্যামেরণের অস্কার বিজয়ী ছায়াছবি এ্যাভটারের বিখ্যাত ডায়ালগ দিয়ে। ফিল্মের নায়ক জ্যাক সুলি স্কাই পিপলদের মেশিনগান আক্রমণে আহত। নায়িকা নিওতিরিও আহত। নায়িকা নিওতিরি নায়ক জ্যাক সুলিকে বলছে, আই সি ইউ।
নিওতিরি বলছে, আই সি ইউ। আমি তোমাকে দেখি। রাষ্ট্র ও সরকার কবে আদিবাসীদের বলবে, আই সি ইউ। আমি তোমাকে দেখি। আদিবাসীরাও বলবে, আমি তোমাকে দেখি।
……………………………….
……………………………….

সঞ্জীব দ্রং
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম

Back to top button