অন্যান্য

তাজিনডং এর পাদদেশে অবৈধ ইটভাটা: অভিযুক্ত অপরাধীর সাজা হওয়ার ২৪ ঘন্টা না পেরোতেই জামিন

সতেজ চাকমা: বান্দরবানের থানচি উপজেলার তাজিনডং পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবীতে বিগত ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ইং জেলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে স্থানীয় এলাকাবাসী। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সামাজিক ছাত্র সংগঠন ও সচেতন নাগরিক বৃন্দের আয়োজনে অনুষ্ঠিত উক্ত মানববন্ধনে বক্তাদের স্পষ্ট অভিযোগ ছিল যে, থানচি উপজেলার তাজিনডং পাহাড়ের পাদদেশে প্রাতাপাড়ায় আদিবাসীদের চাষ করা জমিকে দখল করে অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে উঠছে। এই ইটভাটাগুলোর প্রশাসনিক অনুমোদন না থাকলেও প্রশাসন সেখানে নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে।

উক্ত মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি সংরক্ষণ আন্দোলন কমিটির বান্দরবান জেলার আহ্বায়ক জুমলিয়ান আমলাই বম। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বান্দরবান জেলার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াঙান ম্রো, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সভাপতি নি অং মারমা, ম্রো স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি রুম বøাম ম্রো, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গা ওয়েলফেয়ার স্টুডেন্ট ফোরামের আহ্বায়ক জেমি তঞ্চঙ্গ্যা সহ স্থানীয় জনসাধারণের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সবার বক্তব্যে উঠে এসেছে প্রাতা পাড়ার যে অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে সেটি পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বনের কাঠ পুড়িয়ে সেখানে যে ইটভাটার কাজ চলছে তা পরিবেশের জন্য দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অন্যদিকে স্থানীয় প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় যে, স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে এই ইটভাটা বন্ধ করার জন্য। বান্দরবান জেলার প্রশাসকের কাছেও প্রাতাপাড়ার স্থানীয় বম জনগোষ্ঠীর লোকজন লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন।

বিগত ২৩ ডিসেম্বর বান্দরবানের পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইটভাটাটি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। অত:পর বান্দরবান চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পরিবেশ সংক্রান্ত স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাজিনডং এর পাদদেশে অভিযান পরিচালনা করেন। সেখানে কোনো রকম বৈধতা ছাড়া বনের কাঠ পুড়িয়ে ড্রাম চিমনির ইটভাটা পরিচালনা করতে দেখেন ভ্রাম্যমান এ আদালত। বিগত ৩০ ডিসেম্বর এই আদালত প্রাতাপাড়ায় ইটভাটা স্থাপনের উদ্যোক্তাদের একজন আব্দুল কুদ্দুসকে ১০ বছরের কারাদন্ড ও ১৭ লাখ টাকা জরিমানা’র রায় দেন। কিন্তু এর ২৪ ঘন্টা না পেরোতেই সাজাপ্রাপ্ত ঐ ব্যক্তি জামিন পান। কেবল জামিন নই, জামিনের পর বান্দরবানের স্থানীয় সাংসদ এবং সরকারের মন্ত্রী বীর বাহাদুর এর সাথে ফুলের মালা পরিহিত সাজাপ্রাপ্ত ঐ আসামির বিধ্বস্ত চেহারার একটি ছবি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। উক্ত ব্যক্তি বান্দরবান সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান। জানা যায়, সাজা প্রাপ্ত উক্ত আসামী স্থানীয় বিএনপি’র প্রভাবশালী একজন নেতাও। কিন্তু জনমনে এ প্রশ্নের সমীকরণ কিছুতেই মিলছে না- সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি’র এই নেতা জামিনের পর কীভাবে দেশের একজন আওয়ামী মন্ত্রীর বাসায় গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা পেতে পারেন?

জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ২০১৩ সালের ইটভাটা স্থাপন আইন ও ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের লঙ্গন করার অপরাধে উক্ত সাজা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু সাজা প্রাপ্ত ব্যক্তির কারাগারে প্রেরণের ২৪ ঘন্টা না পেরোতেই জামিনে বেরিয়ে আসা এবং একজন প্রভাবশালী ও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীকে পাশে রেখে অভিযুক্ত ব্যক্তির ফুলের মালা পরিহিত ছবিগুলোই পরিবেশ বিনষ্টকারী দুবৃত্তদের আরো উৎসাহিত করবে, যা আমাদের সমাজ,দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য এক ধরণের অশনিসংকেত।

Back to top button