অসাম্প্রদায়িক শক্তির ঐক্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনই ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার চাবিকাঠি
ধর্মনিরপেক্ষতা হলো রাষ্ট্রীয় সংকট। রাষ্ট্রকে এই সংকট থেকে বাঁচাতে হলে রাজনৈতিক সংগ্রাম ও জনগণের ঐক্যের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন প্রয়োজন। সাংস্কৃতিক চর্চা ছাড়া ধর্মনিরপেক্ষতার সংকট থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। তাই শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ সর্বত্র সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়িয়ে মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটিয়েই ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখতে হবে- বললেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী।
আজ রাজধানীতে “বাংলাদেশের স্বাধীনতা : ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ার সংকট ও সম্ভাবনা” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।
সভাপতির বক্তব্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। সেই আকাক্সক্ষায় বাহাত্তরের সংবিধানে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এই চার মূল নীতি সংযোজিত হয়। কিন্তু ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে ধর্মের নামে বৈষম্য, ধর্মের নামে গণতন্ত্র হরণ, ভোটাধিকার হরণ ও বিদেশী সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়া হয়। বহু সংগ্রামের মাধ্যমে সেই অপশক্তিকে রুখে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সংবিধানে এখনও অসংগতি রয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি পরাস্ত হলেও নির্মূল হয়নি। তারা আবার নতুন রূপে ফিরে আসতে চাইছে। এই অপশক্তির সাথে আপোষ করার কারণে বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে। এই বিভাজনে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ভবিষ্যতে যে শক্তি প্রদর্শন করবে তা আরও ভয়াবহ রূপ নিবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানের মূল নীতির আলোকে রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তুলতে হলে আমাদের সামনে অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মানের কোনো বিকল্প নেই। সেটা কোনো একক উদ্যোগের ব্যাপার নয়, বরং তা একটি ব্যাপক ও সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টার ফলে আনা যেতে পারে। তাই আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষায় ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়তে চাই তাদেরকে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম, জাসদের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদৎ হোসেন, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় পার্টি (জেপি)-র সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, গণআজাদী লীগ নেতা আতাউল্লাহ খান, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, সিপিবি প্রেসিডিয়াম সদস্য অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতা কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি মওলানা জিয়াউল হাসান, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান সোসাইটির সভাপতি নির্মল রোজারিও, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর এর ট্রাষ্টি মফিদুল হক, ন্যাপ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য এনামুল হক, বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি (এম-এল) এর এম এম বদরুল আলম প্রমুখ।