করোনা মোকাবিলায় পাহাড়ে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই
![](https://ipnewsbd.net/wp-content/uploads/2020/03/tt-1-1.jpg)
বর্তমানে সারাবিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাস নামক এক প্রাণঘাতি ভাইরাসের মোকাবেলা করছে। ছয়টি মহাদেশের ১৯৯টি দেশে করোনাভাইবাসের রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ ২০২০ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৪৮, মারা গেছেন ৫ জন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (২৭ মার্চ) এখনো করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে তিন পার্বত্য জেলায় বিশেষ ফেরত ১৫৯ জনকে হোম কোয়ারান্টিনে রাখা হচ্ছে। তার মধ্যে রাঙ্গামাটিতে ৬২ জন, খাগড়াছড়িতে ৮৯ জন ও বান্দরবানে ৮ জনকে কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর তিন পার্বত্য জেলায় ৫২২ জন ব্যক্তি বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন বলে বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে তিন পার্বত্য জেলায় সচেতনতামূলক পদক্ষেপ ও প্রচারণা, হাটবাজার ও যানবাহন বন্ধ, সারাদেশের সাথে লকডাউন, কোয়ারান্টিন ও আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন ইত্যাদি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা ব্যবস্থা তিন পার্বত্য জেলায় এখনো কোন যথাযথ প্রস্তুতি নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে তিনি পার্বত্য জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হলে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা:
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় এ পর্যন্ত জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রবাসী ও বিদেশ ফেরত ৬২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেছে। জানা যায় যে, ১ মার্চ থেকে রাঙ্গামাটি ঠিকানা ব্যবহার করে ২৪৩ জন দেশে ফেরত এসেছেন। যাদের এখনো হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা যায়নি, তাদেরকে খুঁজছে পুলিশ।
হোম কোয়ারেন্টিন না মানায় গত ২১ মার্চ রাঙ্গামাটি শহরের কলেজ গেইট আমানতবাগ এলাকায় সৌদি আরব প্রবাসীকে ১০ হাজার টাকা; শহরের তবলছড়ি এলাকায় মালয়েশিয়া প্রবাসীকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত।
করোনা ভাইরাসের কারণে রাঙ্গামাটির সকল পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ২৫ মার্চ হতে পরবর্তী নির্ধেম না দেওয়া পর্যন্ত রাঙ্গামাটি জেলা সকল সাপ্তাহিক হাটবাজার স্থগিত করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা:
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধকল্পে বিদেশ ফেরত ৮৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তবে বিদেশ ফেরত আরো ১৬৬ জনকে এখনো পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ খুঁজে পায়নি। ইমিগ্রেশন থেকে পাওয়া তথ্য মতে, খাগড়াছড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে বিদেশ থেকে ২৫৫ জন ফিরেছেন।
করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ভারত-ফেরত এক নারীকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়। ঐ নারীর দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া না গেলে তাকে পরে ছেড়ে দেয়া হয়।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক ও সিভিল সার্জনকে সদস-সচিব করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ফেসবুকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত একজনের মৃত্যুর গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২১ মার্চ মানিকছড়ি থেকে জহির হোসেন এবং দীঘিনালা থেকে সুজন দাশ ও মিন্টু চৌধুরী নামে তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
করোনা ভাইরাসের মতো উপসর্গ নিয়ে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আইসোলোশনে থাকা ৩০ বছরের এক আদিবাসী যুবকের মৃত্যু হয়েছে গত ২৫ মার্চ। তার বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি নুনছড়ি গ্রামে। জানা যায় যে, ওই যুবক দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। আগেও তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ওই যুবকের মৃত্যুর পর হাসপাতালে তার সংস্পর্শে আসা দুজন চিকিৎসকসহ পাঁচজনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা:
বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে ২৪ জন প্রবাসীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে ৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা রয়েছে। এছাড়া থানচি উপজেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে বিদেশ ফেরত ২ আদিবাসী ব্যক্তিকে ১৯ মার্চ থেকে কোয়ারেন্টিনে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তারা দুইজনে গত মাসের মিয়ানমারে তীর্থ ভ্রমনে গিয়েছিলেন। গত ১৪ মার্চ তারা বাংলাদেশে অবতরণ করেন।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৪ মার্চ বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি, আলিকদম ও লামা উপজেলা তিনটিকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় এই লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বান্দরবান জেলায় পর্যটক আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। হোটেল-মোটেল বন্ধ করার জন্য মালিক কর্তৃপক্ষসহ পর্যটন শিল্প-সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব:
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ পার্বত্য জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত বিষয় হলেও সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে কোনরূপ সমন্বয় ছাড়া তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকগণ করোনাভাইরাস সংক্রমণে একতরফাভাবে হাটবাজার বন্ধ, যানযাবহন বন্ধ, লকডাউন, পর্যটনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি, সচেতনতামূলক কার্যক্রম ইত্যাদি করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে করোনাভাইরাস মোকাবেলা সংক্রান্ত সরকারি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে পাশ কাটিয়ে একতরফাভাবে জেলা প্রশাসন ও পার্বত্য জেলা পরিষদ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চলমান করোনাভাইরাসের উপদ্রব মোকাবেলার জন্য, জনস্বার্থে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশক্রমে, অনির্দিষ্টকালের জন্য, এবং কমপক্ষে, আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত রাঙ্গামাটি শহরস্থ চাকমা রাজ কার্যালয় বন্ধ থাকবে বলে গত ২৫ মার্চ চাকমা রাজা ও চাকমা সার্কেল প্রধান দেবাশীষ রায়ের স্বাক্ষরিত এক সার্কুলেশন জারি করা হয়।
৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা এবং সর্বোপরি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে অনেক জুম্ম যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে চাকরিরত ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত তারা অনেকেই তিন পার্বত্য জেলায় নিজ নিজ গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সমতল অঞ্চলে আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের অবস্থা:
দেশের সমতল জেলাগুলোতে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্তের খবর এখনো জানা যায়নি। সমতল জেলাগুলোতে বসবাসরত আদিবাসীরা তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা সহায়তা ও নির্ভরশীল তথ্যের ক্ষেত্রে পেছনে পড়ে রয়েছে। বিশেষ করে তারা দুর্গম অঞ্চলে বসবাস করে। ফলে চিকিৎসা সেবা ও সহায়তাসহ ত্রাণ সামগ্রী সহজে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। আদিবাসীরা শিক্ষা ও সচেতনতার দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া। তাই সমতলের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ২২ মার্চ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন যে, দেশের যেসব হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে, সেসব হাসপাতালে করোনায় মৃত ইসলাম ভিন্ন অন্য ধর্মাবলম্বীদের লাশ স্ব স্ব ধর্মীয় বিধানমতে ¯œান ও কাপড় পড়িয়ে প্লাস্টিক প্যাকেট সিল করার ও ভাইরাসমুক্ত করার কোন ব্যবস্থা আজো নেই বা এদের জন্যে পৃথক কোন প্রক্রিয়া আজো গ্রহণ করা হয়নি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেওয়ারিশ লাশ দাহ করার বা সমাধি দেয়ার কোন স্থান আজো চিহ্নিত করা হয়নি মর্মে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ উদ্বেগ প্রকাশ করে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের পদক্ষেপ:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস সম্পর্কে সঠিকভাবে নির্দেশনা অনুসরণের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সরকার দেশকে এই প্রাণঘাতি ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ২৫ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচেতনতামূলক নানা পরামর্শ প্রদান করেন। করোনাভাইরাস শনাক্ত, মানুষ ও চিকিৎসকদের সুরক্ষা ও চিকিৎসা প্রস্তুতিরও বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। এ ছাড়া তাঁর ভাষণে বাজার ব্যবস্থাপনা, নিম্ন আয়ের মানুষের সুরক্ষা এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে সচল রাখার দিকনির্দেশনাও রয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিদেশ থেকে ফিরেছেন, এমন প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিনসহ যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মাত্র ১৪ দিন আলাদা থাকুন। প্রত্যেকের পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী, এলাকাবাসী এবং সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এসব নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন বলে তিনি জানান। কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সহজ হবে জানিয়ে ঘন ঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলার আহ্বান জানান। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো জানান যে, স্বাস্থ্যকর্মীদেরই সুরক্ষায় পর্যাপ্ত সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে এবং যথেষ্ট পরিমাণ সরঞ্জাম মজুত আছে। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীরও পর্যাপ্ত মজুত আছে। এ ব্যাপারে বিভ্রান্তনা হতে আহ্বান জানান। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায়সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ২৪ মার্চ পর্যন্ত কোভিড পরীক্ষার জন্য ১৩ হাজার কীট মজুত ছিল। আরও ৩০ হাজার কীট শিগগিরই দেশে পৌঁছাবে। ঢাকায় আটটি পরীক্ষাযন্ত্র আছে। আরও সাত বিভাগে করোনাভাইরাস পরীক্ষাগার স্থাপনের কাজ চলছে। তিনি বলেন, কেউ গুজব ছড়াবেন না। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমনের কারণে বাংলাদেশে ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ ২৬ মার্চের ছুটি থেকে শুরু হয়ে সাপ্তাহিক ও সাধারণ ছুটি মিলিয়ে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। তবে কাচাঁবাজার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও হাসপাতালসহ জরুরি সেবা বিভাগগুলো এই ছুটির আওতায় থাকবে না। সেই সঙ্গে গত ২৪ মার্চ থেকে সারাদেশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তারা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করবেন।
বাংলাদেশে সকল দোকান, বিপণিবিতান ২৫মার্চ থেকে বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর আগে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সকল স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে দেয়া হয়। উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করে দেয়া হয়। পহেলা এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের আরো পদক্ষেপ হচ্ছে, ঘোষিত ছুটি সময়ের মধ্যে যদি কোন অফিস-আদালতের কার্যক্রম করার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে তাদের সেটি অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে যারা প্রয়োজন মনে করবে, শুধুমাত্র তারাই অফিস খোলা রাখবে।
সরকার আরো ঘোষণা করেছে যে, গণপরিবহন চলাচল সীমিত থাকবে। জনসাধারণকে যতটা সম্ভব গণপরিবহন পরিহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যারা জরুরি প্রয়োজনে গণপরিবহন ব্যবহার করবেন, তাদের অবশ্যই করোনাভাইরাস মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেই গণপরিবহন ব্যবহার করতে হবে। গাড়িচালক ও সহকারীদের অবশ্যই গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। গত ২৫ মার্চ থেকে বাংলাদেশে দেশব্যাপী নৌপথে লঞ্চ, ছোট নৌকাসহ সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে লকডাউনকে উপক্ষো করেই ২৪ মার্চ ছুটি ঘোষণার পর রাজধানী ঢাকা ছেড়েছেন অনেকেই।
অপরদিকে মসজিদের পরিবর্তে ঘরে বসে নামাজ আদায়ের সরকারের বিধি-নিষেধের অমান্য করে গত ২৭ মার্চ অনেকে মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যান। ঢাকাসহ শহর এলাকায় নামাজিদের সংখ্যা অর্ধেকে কমে আসলেও গ্রামাঞ্চলে মুসজিদে নামাজ পড়ার সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি:
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের একটিপ্রজাতির সংক্রামণ দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ভাইরাসটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘২০১৯-এনসিওভি’ (কোভিড-১৯) নামকরণ করে। ২০২০ সালের ২৭ মার্চ পর্যন্ত প্রাাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ১৯৯টিরও বেশি দেশ ও অধীনস্থ অঞ্চলে ৫,৯৭,২৬২-এরও বেশি ব্যক্তি করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন বলে সংবাদ প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। এদের মধ্যে ২৭,৩৬৫ জন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে এবং ১,৩৩,৩৬৩-এর বেশি রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে। উদ্বেগের বিষয় যে, বিশ্বে প্রতি মিনিটে ২ জনের মৃত্যু হচ্ছে। ইতালিতে ৪১ জন স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেছে। চীনে ৭০ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী নানা সমস্যায় ভূগছে।
২৭ মার্চ পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। সেখানে ৯,১৩৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আর আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা হলো ৮৬,৪৯৮ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্পেন। সেখানে ৪,৩৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৭ মার্চ পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১,০৪,২০৫ জন। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে চীনে ৮১,৩৯৪ জন এবং ইতালীতে ৮৬,৪৯৮ জন। নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো হুঁশিয়ার করে বলেছেন তার রাজ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বুলেট ট্রেনের চেয়েও বেশি গতিতে ছড়িয়েপড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান উল্লেখ করেন, প্রথম ১ লক্ষ আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সময় লেগেছে ৬৭ দিন, অপরদিকে অতি সম্প্রতি মাত্র ৪ দিনেই আক্রান্ত হয়েছে ১ লক্ষ ব্যক্তি।
গত ১৪ মার্চ হু চীনের পর ইউরোপকে করোনাভাইরাসের নতুন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করে। ইউরোপের পরে সম্প্রতি ২৪ মার্চ হু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে করোনাভাইরাসের আরেক কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। হু বলেছে, ইতালি ও স্পেনের পর এবার করোনাভাইরাসের কেন্দ্র হয়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্র। সারা বিশ্বে আক্রান্ত ও মৃতের পরিসংখ্যান বিচার করে এমন সম্ভাবনার কথাই জানাচ্ছে হু। এক গবেষণায় জানানো হয়েছে যে, করোনাভাইরাস আক্রান্তে আগামী চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ৮০ হাজার লোক মারা যেতে পারে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ২ মাস লকডাউনের পর চীনের হুবেই প্রদেশ খুলে দেয়া হয়েছে। খুলে দেয়ার পর জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে এখনো বিদেশীদের ভ্রমণে বাধা-নিষেধ রয়েছে।
প্রতিবেশি ভারতে নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকার মধ্যে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দ্বিতীয়বার ২৪ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশজুড়ে ৩ সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশটিতে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫শ’ ছাড়িয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এ লকডাউন জারি থাকবে। এ সময়ে দেশের নাগরিকরা যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
ভাষণে মোদি বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আপনাদের পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে এমন ঘোষণা দিচ্ছি। এটি না করলে দেশ আরও ২১ বছর পিছিয়ে যাবে। ২১ দিনের লকডাউন দীর্ঘ সময়, কিন্তু আপনাদের জীবন আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার বিশ্বাস প্রত্যেক ভারতবাসী সরকারের নির্দেশ মেনে চলবেন। আশা করি শীঘ্রই আমরা এ সঙ্কট কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে পারব।” এর আগে প্রথম ভাষণে ২২ মার্চকে ‘জনতা কারফিউ’ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। জনতা কারফিউয়ের পরও করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক এবং উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে ভারতের অধিকাংশ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত এলাকাতেই লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল।
সূত্র: হিল ভয়েস ডট নেট