মতামত ও বিশ্লেষণ

২০১৯ আদিবাসীদের সময় ভালো কাটে নি: সোহেল হাজং

বিদায় ২০১৯। সেসাথে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ ২০২০কে স্বাগতম। আবার নতুন কোন আশা ও স্বপ্ন। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে নতুন বছরে পদার্পণ। যদিও একজন আদিবাসীর কাছে নতুন বছরে নতুন কোন প্রত্যাশা বা জীবনে নতুন কোন সংযোজনের চেয়ে বছরটি কতটা নিরাপদে কাটবে সেটি নিয়ে বেশি শঙ্কায় থাকতে হয়! কারণ এদেশের আদিবাসী ও প্রান্তিক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখনও ততটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

আমরা একটি বছর অতিক্রান্ত করলাম। নানাদিক থেকেইবিদায়ী বছরটি ছিল অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর পূর্বের রাজনৈতিক দলটিরই নতুনভাবে নতুন নতুন মন্ত্রীদের নিয়ে সরকার গঠন। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে ক্ষমতাসীন সরকারী দলের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা সবই ছিল। সবমিলিয়ে বিরাট এক আশা জাগানীয়া সূচনা ঘটেছিলবিগতবছরটি।

উল্লেখযোগ্য হলো, ২০১৯ বর্ষটি ছিল জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষাবর্ষ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি এদেশের ৫২’এর ভাষা আন্দোলনের ২১ ফেব্রুয়ারিহতে। এদেশে ৫৪টির অধিক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর এখনও ৩৭টির অধিক মাতৃভাষা টিকে আছে যাদের অবস্থা আজ অন্যন্ত নাজুক ও বিলীয়মান। সে বছরটিতে সরকার এ বিলীয়মান আদিবাসীদের মাতৃভাষা সংরক্ষণে কোনো উদ্যোগ নিতে পারত।ভিন্ন ভাষাভাষী কবি ও লেখকগণকে আরো উৎসাহ দেওয়ার মতো কর্মসূচি হাতে নেয়া যেত। কিন্তু ২০১৯ সালের একুশে বইমেলা বা অন্য কোন সময়ে আমরা রাষ্ট্র থেকে এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখিনি। আরও খারাপ সংবাদ হলো চট্টগ্রাম নগরের মতো জায়গায় ৪ এপ্রিলে শুধুমাত্র বাংলা ভাষা না জানার কারণে এক বাঙালি ডাক্তারের কাছে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে এক আদিবাসী অসুস্থ বাবাকে। এদেশের ভিন্ন ভাষা ও ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি অবজ্ঞার উদাহরণ এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে!

বছরের শুরুটা চমৎকার হলেও বিগত বছরগুলোর মতোই ২০১৯ সালে আদিবাসীদের প্রতি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনা অনেক ঘটেছে। জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ রাতে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় নালিখাই খাসি পুঞ্জিতে দুর্বৃত্তদের আগুনে আদিবাসীদের তিনটি বসতঘর সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং চারশতাধিক পান গাছ যেটা খাসিয়াদের একমাত্র জীবিকার উৎস তা কেটে ফেলা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিম খাসিয়ারা ছোটলিখা চা বাগান কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন কিন্তু কোন সুষ্ঠু বিচার হয়নি।

আমরা সিলেট ও মৌলভীবাজার অঞ্চলে প্রায়ই খাসিয়া আদিবাসীদের উচ্ছেদ, মিথ্যে মামলা ও পুঞ্জিতে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখার কথা শুনি। ভূমির ওপর তাদের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সর্বশেষ গত ১২ নভেম্বর ২০১৯ তারিখ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ঝিমাই পুঞ্জির নির্মাণাধীন একটি গির্জার কাজে ব্যবহারের জন্য টাইল্সসহ মালপত্র নিয়ে যাওয়ার পথে চা-বাগানের লোকজন বাধা দেয় খাসিয়াদের। এ সময় পুঞ্জিবাসিদের কয়েকজন প্রতিবাদ জানালে চা বাগান কর্তৃপক্ষ বাগানের গেটের পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে বাগানের শ্রমিকদের জড়ো করে পুঞ্জিবাসিদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিনজন খাসি আদিবাসী আহত হয়।

২০১৯ সালের প্রথম তিনমাসে আদিবাসীদের ওপর বড় হামলাটি হয় ৬ মার্চ তারিখে। দেশের সবচেয়ে কম সংখ্যক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী, ’কড়া’ যাদের নাম। সেই জাতিগোষ্ঠীর ওপর বর্বরোচিত হামলা হয় সেদিন। শিশু, বৃদ্ধ কেউ বাদ যায়নি মারাত্মক হামলার শিকার হতে। দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলায় ঝিনাইকুড়ি হালজা গ্রামে মাত্র এই ২০টি কড়া পরিবারের বসবাস। এই প্রান্তিকতর কড়া পরিবারের জায়গাজমির শেষ অংশটুকু কেড়ে নিয়ে এদেশ থেকে বিতাড়নই হামলার মূল পরিকল্পনা ছিল বলে জানা গেছে। হামলার ৯ মাস পরও সেই দুষ্কৃতকারী প্রভাবশালী বাঙালিদের এখনও বিচারের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। এখনও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে কড়া পরিবারগুলো। নিজের জমিতে চাষ করতেও তারা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা। তবে দেশের নাগরিক দল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক ও আদিবাসী নেতৃবৃন্দ গত নভেম্বরে সেই কড়া গ্রামে গিয়ে হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি জেনে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনকে আবারো জানিয়ে দেয় এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। রাষ্ট্র যেন এসব শুনেও শোনেনা।

২৪ মার্চ মাঝ রাতে নওগাঁর ধামইরহাটের আলমপুর ইউনিয়নের বস্তাপুর গ্রামে ঘুমন্ত আদিবাসী পরিবারের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। যে ঘটনায় বাড়িঘর, ঘরের সামগ্রী পুড়ে যায় ও ছয়জন আদিবাসী আহত হয়। আদিবাসীদের অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটেছে (ইত্তেফাক, ২৬ মার্চ ২০১৯)।

সারা বছর জুড়েই আদিবাসী, আদিবাসী নারী ও আদিবাসীদের ভূমির ওপর আক্রমণ লেগেই থাকে। বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার নামিষে পাড়া গ্রামে আদিবাসী রাখাইনদের জমিজমা দখলকে কেন্দ্র করে ৭ জন রাখাইন নারী পুরুষকে পিটিয়ে আহত করা হয় গত বছরের ২৩ আগস্টে (সময়ের কন্ঠস্বর, ২৪ আগস্ট ২০১৯)। স্থানীয় বাঙালিদের দ্বারা এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ ওঠে। আবার এদিকে খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার দূর্গম এলাকা ২২০নং ময়ুরখীল মৌজায় সাঁওতালদের শ্মশানসহ ২০একর ভূমি দখলের অভিযোগ ওঠে বছরের মাঝামাঝি সময়ে। লক্ষীছড়ি সদর ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. রেজাউল করিমসহ ভূমিখেকো একটি চক্রের বিরুদ্ধে এসব ভূমি দখলের অভিযোগ পাওয়া যায় (ইত্তেফাক, ২৭ মে ২০১৯)। রংপুরের পীরগঞ্জ সাব-রেজিস্টি অফিসে প্রতারণার মাধ্যমে তিন আদিবাসীর জমি লিখে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল জহুরুল ইসলাম মিঠু নামে এক সাবেক সেনাসদস্য (সমকাল ১৮ নভেম্বর ২০১৯)। আবার ৭ ডিসেম্বরে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় রাখাইন আদিবাসীদের প্রায় ২৫ একর জমির ধান জোর করে কেটে নেওয়ার অভিযোগওআছে। এদিকে বান্দরবান সদর উপজেলার তিনটি আদিবাসী গ্রাম ভূমি দস্যুর কবলে পড়ার অভিযোগ ওঠে। এই তিন গ্রামে প্রায় ১৭০ আদিবাসী পরিবার বসবাস করছিল এবং ২৫০ একরের মতো জমি রয়েছে। জসিম উদ্দিন নামে একটি রিসোর্টের মালিক প্রায় আড়াই বছর যাবত এ জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে সেখানে এখন ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে (ডেইলি স্টার ২৮ জুলাই ২০১৯)।

ম্রো জনগোষ্ঠীর অসহায়ত্বের খবর: বছরটি জুড়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক ম্রো জনগোষ্ঠীর নানারকম অসহায়ত্ব ও হুমকির খবর বেশি আলোচিত হয়েছে যাওয়া বছরে। বছরের শুরুতে ফেব্রুয়ারি মাসে বান্দরবানের লামা উপজেলার ৭টি ম্রো পাড়া উচ্ছেদ আতঙ্কের খবর শুনি। সাত গ্রামের ম্রো আদিবাসীরা প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত উচ্ছেদের হুমকি পেয়ে আসছিল। চট্টগ্রাম মেরিডিয়ার এগ্রো, মোস্তফা গ্রুপ ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের নামে এ এলাকার প্রায় ৫০০ একর জুম ভূমি বেদখলের অভিযোগ পাওয়া যায়। আবার বছরের শেষ সময়েও হৃদয় হাসান নামে এক ইউটিউবার এক আদিবাসী ম্রো তরুণীকে একের পর এক বিব্রতকর প্রশ্ন করে সামাজিক মিডিয়ায় সমালোচনার সম্মুখিন হয়েছে। কতটা জাতিগত অশ্রদ্ধা ও অসম্মানবোধ থাকলে একজন সহজ সরল আদিবাসী তরুণীকে এমনভাবে প্রশ্ন করে ভিডিও ধারণ করতে পারেতাই সেখানে ঘটেছে। সেই ইউটিউবারের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।এর আগেও আমরা দেখেছি, গত ২৩ মার্চ বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের মেরিন চর এলাকায় নব নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কালামকে সংবর্ধনা দেওয়ার সময় ম্রো তরুণীকে অশালীন ভাবে জনসমক্ষে জোর করে জাপটে ধরে সেই চেয়ারম্যান মো আবুল কালাম। সে সময় ম্রো তরুণীটি বেশ অস্বস্তিতে ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ খবরও ভাইরাল হয় এবং দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে।

সারাদেশে আদিবাসী নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে। আদিবাসী নারীর নিরাপত্তা ও দ্রুত অপরাধীদের শাস্তি প্রদানে কোন বিশেষ উদ্যোগ ছিল না। গত বছরে আদিবাসীদের প্রতি সবচেয়ে হঠকারী ও হাস্যকর ঘটনা ঘটে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্ম সাঁওতালপল্লি উচ্ছেদ, অগ্নিসংযোগ ও ৩ জন সাঁওতালকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই)-এর তদন্ত প্রতিবেদনে। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বরে এ বর্বরোচিত ঘটনা ঘটার প্রায় ২ বছর ৮ মাস পর আদালতে জমা দেয়া হয় এ অভিযোগপত্র। সারাবিশ্ব মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছে পুলিশ কিভাবে সরাসরি সাঁওতালপল্লিতে আগুন লাগিয়েছে কিন্তু এ অভিযোগপত্রে সেই পুলিশের সংশ্লিষ্টতা ও মূল আসামীদের সংযুক্ত করা হয়নি। যা একটি হাস্যকার প্রতিবেদন বা অভিযোগপত্রে পরিণত হয়েছে জনগণের কাছে। উচ্ছেদকৃত আদিবাসী নিরীহ পরিবারগুলো এখনো তাদের বাপদাদার ভিটেতে ফিরে যাবার অপেক্ষায় খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এদিকে মধুপুর বনের আদিবাসীরা এখনো উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন। ২০১৬ সালে বনবিভাগ মধুপর গড়ের ৯,১৪৫ একর ভূমিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করলে সেখানকার ১৪টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার আদিবাসী জনগণের মাঝে তাদের প্রথাগত ভূমি অধিকার থেকে বঞ্চণার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা না কমে বরং বেড়েছে। ২২ বছর পরও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। গত বছরওপার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পদটি এ সরকারের আমলে পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে।

দেশের গড় দারিদ্র্য হার কমলেও আদিবাসীদের দারিদ্র্য কমেনি। ধনী ও গরিবের মধ্যে আয়বৈষম্য বেড়েছে চরমভাবে। দেশের সবচেয়ে গরিব জেলাগুলোর মধ্যে আদিবাসী অধ্যুষিত জেলা যেমন রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সরকারি কর্মসূচিতে আদিবাসীদের অন্তর্ভূক্তি কম। তারা এখনোই পিছনেই পড়ে রয়েছে। তাদেরকে টেনে আনবার জোড়ালো পদক্ষেপ যথাযথ নয়।

বছরের শেষের দিকটা আদিবাসী অস্তিত্বের মুখে একটি আঘাতের চিহ্ন রেখেছে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর একটি পত্রে, যেখানে আদিবাসী নামে নিবন্ধনকৃত সংগঠনের নাম পরিবর্তনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, ক্ষমতাসীন সরকারী দলের নির্বাচনী ইশতেহারে, দেশের অসংখ্য আইন, নীতি ও দলিলে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহৃতহয়ে এসেছে। সরকারী দলের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা যে নামে আদিবাসীদের ডেকে আসছে দীর্ঘদিন ধরে, আজ এনজিও বিষয়ক ব্যুরো কিভাবে বলে এ নামটি মুছে ফেলতে! আদিবাসীদের আত্মপরিচয়ের অধিকার, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার কেড়ে নিলে সবচেয়ে বড় অবমাননা করা হবে এদেশের আদিবাসীদের প্রতি যা কখনো কাম্য নয়। ইতোমধ্যে ‘হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ’ এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এ নির্দেশানটি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে যা সুবিবেচনা করা উচিত। সংবিধানের কোথাও উল্লেখ নেই যে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না।

অনেকগুলো খারাপ খবরের মধ্যে ভালো খবর হলো ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০আইনের তফশীলের সংশোধনী আনা হয় ২০১৯ সালের মার্চ মাসে যেখানে মোট ৫০টি আদিবাসী জাতিসত্তার নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়। যেখানে পূর্বে মাত্র ২৭টি জাতির নাম উল্লেখ ছিল।

পরবর্তী অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণিত হচ্ছে আগামী বছর। এ পরিকল্পনায় যেন আদিবাসীরা বাদ না যায়। এবং আগের পরিকল্পনায় যে প্রতিশ্রুতি রাখাছিল তা যেন বাস্তবায়নে পুনবির্বেচনা করা হয়। তাছাড়া ক্ষমতাসীন সরকারী দলের নির্বাচনী ইশতেহারেআরো মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। সেখানে সমতলের আদিবাসীদের জন্য একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের কথা অঙ্গীকার করা হয়েছে সরকারের গত তিন মেয়াদধরে। আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা যেহেতু বড় সমস্যা তাই আর বিলস্ব না করে এ কাজটি এখনই শুরু করা দরকার। আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরো বেশি তৎপর হওয়া প্রয়োজন।

পরিশেষে, নানা কারণেই ২০২০ সালটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠবে আশা করি। এ বছরের ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। পরের বছরটি স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তী। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের মাহেন্দ্রক্ষণের নানা আয়োজন দেখতে পাব এখন থেকেই। এ উদযাপন হোক সকলের। প্রান্তিক ও আদিবাসী মানুষের মনে কোন দুঃখ না রেখে, তাদের ওপর কোন ধরণের সহিংসতার ঘটনা ছাড়াই, দেশের মহান স্বাধীনতার স্বাদ সকলেই গ্রহণ করুক। আদিবাসীরা তাদের আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার নিয়ে বেঁচে থাকুক তাদের নিজ ভূমিতে। দেশের উন্নয়নের পথে তাদেরকে আর পেছনে ফেলে নয় সে প্রত্যাশায় নতুন বছর সকলের জন্য শুভ বার্তা নিয়ে আসুক। কল্যাণময় হোক সকলের। সকলকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

সোহেল হাজং- সদস্য, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, কেন্দ্রিয় কমিটি।
১ জানুয়ারি ২০২০, চিয়াংমাই, থাইল্যান্ড।

Back to top button