জাতীয়

রাজস্থলী ঘটনায় জড়িত করার ষড়যন্ত্রের নিন্দা জানিয়েছে জেএসএস

নিজস্ব প্রতিবেদক: গতকাল রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার গাইন্দা ইউনিয়নের বালুমুড়া মারমা পাড়ায় সংঘটিত হত্যাকান্ডে বিভিন্ন অনলাইন এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় মিথ্যা ও মনগড়া সংবাদ প্রবিবেশনের প্রতিবাদে এবং সঠিক অবস্থান জানানোর জন্য প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। উক্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,parbattanews.com, chttoday.com, pahar24.com, chttimes24.com, banglanews24.com, বিবিসি, প্রথম আলো, যুগান্তর, মানবজমিন, jagonews24.com, New Age, Dhaka Tribune, New Nation, জনকণ্ঠ, বাংলা ট্রিবিউন, চট্টগ্রাম প্রতিদিনসহ বিভিন্ন টিভি ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রায় একই তথ্য দিয়ে প্রকাশিত ‘রাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে জনসংহতি সমিতির (কোন কোন সংবাদে সন্তু গ্রুপের) দু’গ্রুপের অন্তর্কোন্দলে / সংঘর্ষে / গোলাগুলিতে জেএসএস’র ৩ সশস্ত্র কর্মী / সন্ত্রাসী নিহত’ হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। উক্ত সংবাদে কোন বস্তুনিষ্ট তদন্ত ও বাছ-বিচার ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের বরাত দিয়ে একতরফাভাবে উক্ত ঘটনাটি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে জেএসএসের ৩ সশস্ত্র কর্মী বা কোন কোন সংবাদের ভাষ্যে সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে । জনসংহতি সমিতির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের সংবাদ সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট, বিকৃত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়।

উক্ত ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ঐ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয় যে, গতকাল (১৮ নভেম্বর) সকালে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও প্রশাসনের সহযোগীতা প্রাপ্ত ও মদদপুষ্ট আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)-এর একটি দলচ্যুত গ্রুপ অস্ত্র-শস্ত্রসহ মদ্যপ অবস্থা বান্দরবান জেলার সদর উপজেলার রাজভিলা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ৮নং নোয়াপাড়া গ্রামে প্রবেশ করে। প্রবেশ করেই তারা এলাকার যুবক ও পুরুষদের ধরপাকড় শুরু করে এবং তাদেরকে মারপিট করতে থাকে। অবশেষে বিকাল ৪:০০ ঘটিকায় সময় নোয়াপাড়ার কার্বারী (গ্রাম প্রধান) মোনারাম তঞ্চঙ্গ্যা (৫৫) ও তার ছেলে সুখমণি(শুক্রমনি) তঞ্চঙ্গ্যা (৩২) সহ চারজন গ্রামবাসীকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে একজনকে ছেড়ে দিলেও মোনারাম তঞ্চঙ্গ্যা ও সুখমণি তঞ্চঙ্গ্যাসহ বাকী তিনজনকে সন্ধ্যার দিকে গাইন্দা ইউনিয়ন ও রাজভিলা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বালুমুড়া স্থানে নিয়ে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বলে উক্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমার স্বাক্ষরিত উক্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয় যে, স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর যোগসাজশে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রশাসন কর্তৃক জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, খুন-খারাবি, সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজি অভিযোগ আনার অপচেষ্টাকে বৈধতা দানের হীনউদ্দেশ্যে দলচ্যুত এএলপি নামক বিদেশী সশস্ত্র গোষ্ঠী কর্তৃক নিরীহ তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীদেরকে নৃশংস হত্যার ঘটনাকে জনসংহতি সমিতির দু’ গ্রুপের মধ্যেকার সংঘর্ষ বলে একটি গোষ্ঠী গণমাধ্যমে সংবাদ প্রেরণ করে এবং তা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করে বিবিসি ও প্রথম আলোর মতো বহুল প্রচারিত সংবাদমাধ্যমসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের তথাকথিত অনলাইন সংবাদ পোর্টালে ফলাওভাবে প্রচার করা হয় বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া আরো জানানো হয় যে, ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে না গিয়ে এবং ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের উদ্ধার ও ময়না তদন্ত না করে রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার ও রাজস্থলী থানার ওসিসহ পুলিশ ও প্রশাসন এ ঘটনাকে জনসংহতি সমিতির ‘সশস্ত্র দু’গ্রুপের’ মধ্যে সংঘটিত ঘটনা বলে নিশ্চিত করে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছে এবং সংবাদ মাধ্যমগুলো তা সঠিক মনে করে সন্ধ্যার পর পরই (ঘটনার দুই/এক ঘন্টার মধ্যে) প্রচার করতে শুরু করে বলে নিন্দা জানানো হয়। হত্যার শিকার এসব গ্রামবাসী জনসংহতি সমিতির কোন সদস্য নন এবং তারা কোন প্রকার সশস্ত্র তৎপরতার সাথেও যুক্ত নন বলেও উক্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

আরো উল্লেখ্য করা হয় যে, এসব কায়েমী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এএলপিকে দিয়ে খুন-সন্ত্রাস চালিয়ে এসব এলাকার তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ করার দীর্ঘদিন ধরে অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে ।

এই বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃত্বসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ মদদ ও যোগসাজশে কখনো কখনো স্থানীয়ভাবে ‘মগ লিবারেশন পার্টি’ নামে পরিচয়দানকারী এএলপি নামক বিদেশী সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সংস্কারপন্থী খ্যাত তাঁবেদার সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন, সংঘাত, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। আর প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রশ্রয়ে এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো দ্বারা সংঘটিত ঘটনাকে দোহাই দিয়ে জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থকসহ নিরীহ গ্রামবাসীর উপর নির্বিচারে তল্লাসী, মিথ্যা মামলা দায়ের, অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন, গ্রেফতার, হত্যাসহ ফ্যাসীবাদী কায়দায় দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয় এই বিজ্ঞপ্তিতে।

এছাড়া জনসংহতি সমিতি এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এইসব ভিত্তিহীন সংবাদ প্রত্যাহার করে ঘটনার বস্তুনিষ্ট তথ্য নিয়ে যথাযথ সংবাদ প্রকাশের জন্য এসব সংবাদমাধ্যমকে আহ্বান করেছে।

Back to top button