পপি ত্রিপুরাকে গাড়ীর চাপায় হত্যার জড়িতদের শাস্তির দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক: বান্দরবান সরকারী কলেজের ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পপি ত্রিপুরাকে প্রাইভেটকার চাপিয়ে হত্যার দায়ে গ্রেফতারকৃত আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, বাংলাদেশ ত্রিপুরা খ্রীস্টিয়ান স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন।
জন ত্রিপুরার সভাপত্বিতে জুয়েল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডীন সাদেক হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ সাংবাদিক্তা বিভাগের শিক্ষক রৌবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া , বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারন সম্পাদক অলিক মৃ, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহারী ছাত্র পরিষদ ঢাকা মহানগরের সভাপতি নিপন ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা স্টুডেন্সট ফোরামের সভাপতি অন্তর ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা খ্রীস্টিয়ান স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি বিক্রম ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ম্রো স্টুডেন্সট কাউন্সিলের সহ সভাপতি তনয়া ম্রো, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের প্রতিনিধি গায়ত্রী ত্রিপুরা এবং ঢাকাস্থ ত্রিপুরাদের অভিভাবক ক্লেমেন্ট ত্রিপুরা প্রমুখ।
মানববন্ধনের শুরুতেই নিহত পপি ত্রিপুরার ভাই লিখিত দাবি পড়ে শুনান এবং ভগ্নিপতি মিলন ত্রিপুরা অভিযোগ করে বলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে আসামীপক্ষের সাথে মীমাংসায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন এবং জোরপূর্বক মামলা তুলে নেয়া, জোরপূর্বক মীমাংসায় নিয়ে আসার জন্য বান্দরবান এর সরকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে তাকে মোবাইলে এবং মামলা শুরু হওয়ার পর থেকে যারা বাদীপক্ষের সাথে তাদেরকে নানানভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে আসামী পক্ষ। তিনি আরও বলেন এভাবে যদি আইনের রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে তাহলে লিয়ানা ত্রিপুরা পপি হত্যাকারীর সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত পাওয়ার ব্যাপারে সন্দীহান ।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন লিয়ানা ত্রিপুরা হত্যার দায় ঘাতকের পরিবার ও রাষ্ট্রকে নিতে হবে। সেই সাথে দুর্ঘটনায় আহত হেলেনা ত্রিপুরার চিকিৎসার যাবতীয় খরচ ঘাতকের পরিবারকে বহন করতে হবে এবং ঘাতকের পরিবারকে চাপ দিতে হবে যাতে তারা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়। নতজানু হয়ে ত্রিপুরা পরিবারের কাছে আসতে বাধ্য হয়। লিয়ানা পপি ত্রিপুরা হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের রাজপথে থাকতে হবে। আমাদের দেশে অনেক বড় বড় ঘটনা কিছুদিন পর হারিয়ে যায়, লিয়ানা হত্যার প্রতিবাদ যেন থেমে না যায়। আমাদের সকলকে আন্দোলনে যুক্ত থাকতে হবে, আমাদের এ আন্দোলন মানবিক আন্দোলন, আমাদের এ আন্দোলন মানুষকে আরো মানবিক গড়ে তোলবার আন্দোলন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ডীন অধ্যাপক সাদেকা হালিম ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বলেন, পপি যে এলাকায় হত্যাকান্ডের শিকার সে এলাকাটা অত্যন্ত নিরাপদ চাদরে মুড়িয়ে থাকা এলাকা এবং সেখানে গাড়ী সবসময় ধীর গতিতে চলে । সেখানে কে গাড়ী চালাচ্ছিল, কে তাকে গাড়ী দিল? তার বাবা মা কি করছিল এসব অত্যন্ত তদন্ত করে আসল খুনী এবং তার বয়স সঠিক নির্ধারন সহ সিসি টিভি দেখে আসল হত্যাকারীকে খুজে বের করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার বিভাগের অধ্যাপক রৌবায়েত ফেরদৌস বলেন, পপি ত্রিপুরাকে যেভাবে গাড়ী চাপা হত্যা করা হয়েছে সেটি নিছক দুর্ঘটনা নই সেটি একতা হত্যাকাণ্ড । জীবনের কোন ক্ষতিপূরণ হয়না কিন্তু পপি ত্রিপুরা যেহেতু একটি সংগ্রামী মেয়ে সে তার উপার্জন দিয়ে তার ভাইকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করাত সেই হিসেবে তার ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোটি টাকা এবং তার পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা দিতে হবে এবং ঘাটকের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে বিচার করতেই হবে।
বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি আমরা মানতে পারি না। আর যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্যে লিয়ানা হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য বিচার চেয়ে তিনি সরকারের কাছে জড় দাবি তোলেন।
উল্লেখ্য গত ১৮ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বান্ধবীসহ রিক্সাযোগে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে গুলশান ২ এলাকায় পেছন থেকে বেপরোয়াভাবে একটি প্রাইভেটকার তাদের রিক্সাকে ধাক্কা দেয়, এসময় পপি ত্রিপুরা রাস্তায় পড়ে গেলে গাড়ীর চালক প্রাইভেট কারটি পপির উপর দিয়ে চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পপি ত্রিপুরাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, বাংলাদেশ ত্রিপুরা খ্রীস্টিয়ান স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যান সংসদ এর নেতৃবৃন্দ।