জাতীয়

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেট বৈষম্য নিরসনে দাবি করেছে ঐক্য পরিষদ

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেটে পূর্বেকার মতো ধর্মীয় বৈষম্য অব্যাহত থাকায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করে বলা হয়, লোকগণনার পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে প্রকল্পবাদে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর জন্যে মাথাপিছু বরাদ্দ ১১ থেকে ১২ টাকা আর সংখ্যালঘুর মাথাপিছু বরাদ্দ মাত্র ৩ (তিন) টাকা।

আজ সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত। সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বৈষম্যের পাওয়ার প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।

লিখিত বক্তব্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তীর্থ ভ্রমণ, তাঁদের কেন্দ্রীয় উপাসনালয় পরিচালনা, পুরোহিত, সেবায়েত, যাজকদের কল্যাণে, দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে, মডেল মন্দির/প্যাগোডা/গীর্জা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সামাজিক উন্নয়ন, গবেষণা ইঃ-র জন্যে চলতি অর্থ বছরেও বাজেট কোন বরাদ্দ রাখা হয় নি। হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুরোহিত ও সেবায়েতদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যে ২০১৫-১৬ অর্থ বছর থেকে বিগত অর্থ বছর পর্যন্ত বরাদ্দ থাকলেও এবারের অর্থ বছরে অনুরূপ কোন বরাদ্দ নেয়। মন্দিরভিক্তিক শিশু ও গণশিক্ষা এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্যে প্যাগোডাভিক্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার বিশেষ কর্মসূচী হিসেবে গৃহীত প্রকল্পের জন্যে বাজেট বরাদ্দ অব্যাহত থাকলেও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্যে বাজেটে কোন বরাদ্দ এখনো নেয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, হিন্দু ধর্মবালম্বীদের জন্যে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা নামে বিদ্যমান প্রকল্পের ৪০% মুসলিম কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাঁদেরই কল্যাণে তা ব্যয়িত হয়। এর মধ্যে রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি।

সংবাদ সম্মেলনে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেট উত্থাপনের প্রাক্কালে ঐক্য পরিষদ কর্তৃক ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেটের বিভিন্ন খাতে বিরাজমান বৈষম্যে অবসানে ২ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের দাবী উত্থাপন-পরবর্তীতে বাজেট অধিবেশন চলাকালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মঠ মন্দির সংস্কার ও উন্নয়নের জন্যে ২০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা দিলেও এর অনুমোদিত বাজেটে তার কোন উল্লেখ ছিল না। ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ অর্থ বছরেও বাজেটে ঘোষিত বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরীতে কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় নি। অতি সম্প্রতি উক্ত ২০০ কোটি টাকার মধ্যে ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মোট ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ের জন্যে কয়েকটি জেলার হিন্দু মন্দিরকে ইতোমধ্যে কেবল চিহ্নিত করা হলেও আজ পর্যন্ত কোন টাকা ছাড় হয় নি। এ থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতি রাষ্ট্রীয় অবজ্ঞা, অবহেলা আজো সুস্পষ্ট। বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্যে কোন থোক বরাদ্দের ঘোষণা আজও আসে নি।

সংবাদ সম্মেলনে বিগত চার দশকের অব্যাহত ধর্মীয় বৈষম্য নিরসনকল্পে আগামী ২০১৯-২০ অর্থ বছরে অন্যুন ২ হাজার কোটি টাকা, তীর্থ ভ্রমনের জন্যে অন্যুন ১০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দের পাশাপাশি বিদ্যমান কল্যাণ ট্রাস্টসমূহকে বাতিল করে ফাউন্ডেশন-এ রূপান্তর, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ঘোষিত ২০০ কোটি টাকার অনতিবিলম্বে ছাড়, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সঠিক রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ নিরুপণকল্পে এ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থান নিরুপনের জন্য সর্বাঙ্গীন শুমারীর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ, প্রতিটি জেলায় ও উপজেলা পর্যায়ে মডেল মন্দির, প্যাগোডা, গীর্জা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনসহ মোট ৬-দফা দাবীনামা উত্থাপিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, নির্মল রোজারিও, ভদন্ত সুনন্দপ্রিয় মহাথেরো, দীপেন চ্যাটার্জী, মিলন দত্ত, বাসুদেব ধর, মঞ্জু ধর প্রমুখ।

Back to top button