জাতীয়

বিজিবি’র বিলবোর্ডে অভিনেতা সিয়াম দম্পতিকে পাংখোয়া আদিবাসী বলে প্রচারঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভের ঝড়

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কাপ্তাই ব্যাটালিয়ন এর উদ্যোগে প্রচারকৃত একটি বিলবোর্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি চলছে ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনা। বিলবোর্ডের ছবি দেখে জানা যায় ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও উন্নয়ন’ শিরোনামে উক্ত বিলবোর্ডে অভিনেতা সিয়াম আহমেদ দম্পতির লুসাই ড্রেস পরিহিত ছবিকে পাংখোয়া আদিবাসী হিসেবে তুলে ধরা হয়। এ বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

গত ৩০ জুন সমার দেওয়ান নামের এক তরুণ আদিবাসী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত বিলবোর্ডের ছবি পোস্ট দিয়ে লিখেন, “উচ্ছেদ করতে করতে দেশ থেকে একটা জাতিকেই অলমোস্ট বিলুপ্ত করার পর সেটা যখন ফুটে ওঠে সরকারি বিলবোর্ডেই!! অভিনেতা সিয়াম আহমেদ পাংখোয়া!!আবার, মারমাদের ছবিতে দিয়েছে চাকমাদের ছবি! চাকমাদের যে ছবি দিয়েছে সেটা একদম বিনানুমতিতে বলে নিশ্চিত হলাম! বাকিদের ছবিও হয়তো এভাবেই কোনো অনুমতি ছাড়া ফেসবুক থেকেই নিয়েছে!”

উক্ত পোস্টটি প্রায় ১৬০০ জনের অধিক ফেসবুক ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন এবং নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেন। অধিকাংশ মতামত পড়ে দেখা যায় ফেসবুক ব্যবহারকারীরা অভিনেতা সিয়াম আহমেদ এবং বিজিবি’র কার্যক্রমকে  কটাক্ষের সুরে নিন্দা জানাচ্ছেন। অনেকেই বিজিবি’র এই কার্যক্রমকে ‘দায়িত্বহীনতার’ পরিচয়বাহী বলে অভিমত জানাচ্ছেন।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনার পর অভিনেতা সিয়াম আহমেদ একটি ফেসবুক স্টেটাস দিয়েছেন। গতকাল (১ জুলাই) তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে অভিনেতা সিয়াম লেখেন, “লুসাই জনগোষ্ঠীর সম্মানিত রাজার আমন্ত্রণে বছর তিনেক আগে সাজেকে ঘুরতে গিয়েছিলাম অবন্তীকে নিয়ে। তাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, পরিবেশ ঘুরে দেখেছিলাম। তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেছি, সবার আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছিলাম সেবার।”

লুসাই ড্রেস পরিহিত অভিনেতা সিয়াম আহমেদ দম্পতি।
তিনি আরো লিখেন, “নিউজফিডে বেশ কয়েক জায়গায় দেখলাম, আমার আর অবন্তীর এই ছবিটি একটি সাইনবোর্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে। আমরা এতে বিব্রত হয়েছি, কারণ এর মাধ্যমে পাংখোয়া জনগোষ্ঠীকে হেয় করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব, অবিলম্বে আমাদের ছবিটি সরিয়ে নেয়ার জন্য।”
উক্ত পোস্টে সিয়াম আরো লিখেন, “ঘুরতে গিয়েছিলাম পরিবারকে নিয়ে। সেই ছবিটি নিয়ে অনেক জায়গায় দেখলাম নানান রকমের ট্রল হচ্ছে। ভেবেছিলাম অন্য আরও অনেকবারের মতো এবারও এড়িয়ে যাব। কিন্তু ভাবলাম কিছু বলা উচিত।
ট্রল আমরা অবশ্যই করব, মিম আমরা অবশ্যই বানাব- পপ কালচারের অংশ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কীসে কাউকে অসম্মান করা হচ্ছে, একটি সম্প্রদায়কে ছোট করা হচ্ছে- সেই বোধ থাকাটাও জরুরী। যে তারুণ্যকে আমি প্রতিনিধিত্ব করি, সেই তারুণ্যের কাছে এই সেনসিবিলিটি তো প্রত্যাশা করতেই পারি।”
তবে সিয়াম আহমেদ এর উক্ত পোস্টের পর অনেকেই আবার এই অভিনেতাকে কটাক্ষ করছেন যে- পাংখোয়াদের কোনো রাজা নেই। কাজেই সিয়াম আহমেদ আসলে কার আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
মূলত রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় বহুল পরিচিত সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে ‘ঐতিহ্যবাহী লুসাই গ্রাম’ নামে একটি স্থানকে লুসাই আদিবাসীদের ঐতিহ্য ও কৃষ্টি তুলে ধরার প্রয়াস হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এই স্থানে ঢুকতে গেলে দর্শনার্থীদের ৩০ টাকার একটি টিকেট নিতে হয় এবং লুসাই ড্রেস পরিধান করতে হলে এই টিকেটের দাম পড়ে ১০০ টাকা। এই ড্রেস পড়ে সাজেকে যাওয়া অনেক পর্যটক ছবি তুলে আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট দেয়। এটিকে অনেক আদিবাসী সংগঠন ও ব্যক্তি লুসাই আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে নেতিবাচক উপস্থাপনের সামিল বলে এযাবৎ পর্যন্ত সমালোচনা করে এসেছেন। কারণ, সাজেক পর্যটন কেন্দ্র হওয়ার আগে লুসাই আদিবাসীরাই ছিল সেখানকার ভূমিপুত্র।

 

 

Back to top button