ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার রায়পুর গ্রামের গারো আদিবাসী সম্প্রদায়ের স্বত্ত্বদখলীয় কৃষিজমি বাঙালি ভূমিদস্যু কর্তৃক জোরপূর্বক দখল, স্থানীয় গারো আদিবাসীদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ ষড়যন্ত্র ও হুমকি এবং ভূমিদস্যুদের বিচারের দাবিতে আজ শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকাস্থ রায়পুরের জনগণ ও আদিবাসী ছাত্র–যুব সংগঠনসমূহ।
বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ সভাপতি টনি চিরানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের শিক্ষা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক উজ্জ্বল আজিম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য রিপন বানাই, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি আন্তনী রেমা, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের অর্থ সম্পাদক অনন্যা দ্রং, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপন ত্রিপুরা, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্যাট্রিক চিসিম, গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশন ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি নিপুল মং, গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন এর শিক্ষা ও সাহিত্য সম্পাদক জানকি চিসিম, বাগাছাস ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক তেনজিং ডিব্রা প্রমুখ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা হেপসন দালবত।
বাংলাদেশের আদিবাসীদের নানাবিধ সমস্যার কথা উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে আলোচনার দাবি জানান বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের শিক্ষা ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক উজ্জ্বল আজিম। তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, আদিবাসীদের মুল সমস্যা হলো ভূমিকেন্দ্রিক। আদিবাসীদের ভূমি সমস্যাকে সমাধানের জন্য আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন দাবি করে আসছে। আদিবাসীদের সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে যথাযথ কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা জীবনমানকে উন্নত করতে হলে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় আদিবাসীদের যুক্ত করতে হবে। স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের সকল স্তরে আদিবাসীদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে।
ধোবাউড়ায় সংগঠিত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও বিচার দাবি করে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য রিপন বানাই বলেন, সুদীর্ঘকাল ধরে এদেশের আদিবাসীরা নিপিড়িত হয়ে আসছে। ’২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা সবাই মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি। ঠিক এমন সময় এ ধরণের ঘটনা মেনে নেওয়া যায়না। দেশে বিগত সময়ের বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। আমরা সকল ধরনের বৈষম্য দূর করতে চাই। এজন্য নতুন বাংলাদেশ বিনির্মান প্রক্রিয়ায় আমরা আদিবাসীরা যুক্ত হতে চাই।
আদিবাসীদের সকল সমস্যাকে সমাধানের লক্ষ্যে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এর কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বলেন, পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে একত্রে নিজেদের স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে আসছে। ’২৪ এর ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের সকল বৈষম্য দুরীকরণে সরকার যে উদ্যোগ নিচ্ছে সেটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং এই প্রক্রিয়ার সাথে দেশের আদিবাসী জনগণ যুক্ত হতে চায়। ভূমি দখলকারী ভূমিদস্যু এবং বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীরা সরকারের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান নয়। শুধুমাত্র সরকারের সদিচ্ছার অভাবে এতদিন আদিবাসীদের উপর নিপিড়নের ঘটনা চলমান ছিল। আমরা আদিবাসীদের সকল সমস্যার সমাধান চাই।
আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে আদিবাসী নারী নেত্রী এবং বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের অর্থ সম্পাদক অনন্যা দ্রং বলেন, আপনারা জানেন যে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক আদিবাসীদের উপর দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের নিপিড়নের ঘটনা ঘটছে। সকল ঘটনার সময় আদিবাসী নারীদেরকে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়। আদিবাসী নারীদের ধর্ষন ও শ্লীলতাহানীর ঘটনা ক্রমাগতভাবে ঘটলেও দীর্ঘদিন ধরে এর কোন বিচার হয়নি। যার দরুণ বাংলাদেশের আদিবাসী তথা আদিবাসী নারীরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিয়ে বসবাস করছে। সবসময় আতংক নিয়ে আদিবাসী নারীদের চলাফেরা করতে হয়। আমরা বাংলাদেশের সকল নারীদের পাশাপাশি আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানাই।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে আন্দোলনকারী আদিবাসীরা। মিছিলটি শাহবাগ মোড় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়।