কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলায় উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত দাবি
প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটি: বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত শোষণ, বঞ্চনা, নিপীড়ণ, নির্যাতন ও বৈষম্য নীতির কারণে আজ ২৩ বছরেও বাংলাদেশ রাষ্ট্র কল্পনা চাকমার হদিশ দিতে পাওে নি। এটা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা এবং দেশের নারী সমাজের প্রতি রাষ্ট্রের চরম অবহেলা ও বঞ্চনার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অভিযুক্ত ব্যক্তিদেও প্রতি রাষ্ট্রের নির্লজ্জ দায়মুক্তির জ্বলন্ত প্রমাণ এটি। এটাই প্রমাণ কওে যে, ভূমি বেদখল, জুম্মদেরকে জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণ, সর্বোপরি জুম্ম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার জন্য জঘন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে জুম্ম নারীর উপর জঘন্য সহিংসতা, অপহরণ, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা করার মতো নৃশংসতাকে।
আজ রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন এবং তদন্ত নিয়ে রাষ্ট্রের গড়িমসির জন্য ক্ষোভ ও নিন্দা জানান। পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সহ-সভাপতি শ্রীমতি সোনারাণী চাকমার সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনা সভায় বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি মিস রিনা চাকমা; পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী রামভাই পাংখোয়া; যুব সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর ত্রিপুরা নান্টু প্রমুখ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী শরৎ জ্যোতি চাকমা প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রের চরিত্র এবং তদন্ত কমিটিগুলোর স্বাধীনতা, আন্তরিকতা ও কার্যকারীতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এজন্য তিনি দেশে জনমুখী ও গণমুখী শাসনব্যবস্থা বা সরকারব্যবস্থার অনুপস্থিতিকে দায়ী করেন। তিনি বলেন- দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন বিদ্যমান থাকলে কল্পনা চাকমার এরকম পরিস্থিতির শিকার হতে হতো না এবং বিচারের জন্য এতো দীর্ঘসূত্রীতা ও গড়িমসির সৃষ্টি হতো না। ২৩ বছওে তদন্ত কমিটি বারবার রদবদল হয় কিন্তু তদন্তের কোন সুরাহা হয় না বরং তদন্ত কর্মকর্তাদেও দায়িত্বজ্ঞানহীন ও হতাশাজনক বক্তব্য ও উদ্যোগের কারণে তদন্ত কার্যক্রম যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই রয়ে গেছে। অবশ্যই এক্ষেত্রে রাষ্ট্রই সর্বাগ্রে দায়ী থাকবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, আমরা এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির ভেতর দিয়েই দিনাতিপাত করছি। আমাদের কন্ঠরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে বারবার। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। বিরুদ্ধমত এখানে উপেক্ষিত। সরকারি দল ব্যতিরিকে অন্যান্য দলকে সহ্য করা হচ্ছে না। একদলীয় শাসনব্যবস্থায় নাগরিক অধিকারগুলোও পদদলিত হচ্ছে। যার ফলে আদিবাসীদের পরিচিতি ও অস্তিত্ব সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় আমাদের সংগ্রামের কোন বিকল্প নেই। আন্দোলন করে অধিকার আদায় করে নিতে হবে।
তিনি অপহরণ ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত ও যথাযথ বিচার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
কল্পনা অপহরণ ঘটনার প্রতিবাদে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে ডাকা ২৭ জুন ১৯৯৬ অর্ধদিবস সড়ক অবরোধ চলাকালে আবার তৎকালীন বাঘাইছড়ি সেনা কর্তৃপক্ষের মদদে স্থানীয় ভিডিপি ও সেটেলারদের সাম্প্রদায়িক হামলায় বাবুপাড়া ও মুসলিম ব্লক এলাকায় গুলি করে রূপন চাকমাকে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে সুকেশ, মনোতোষ ও সমরবিজয় চাকমাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কল্পনা অপহরণ ঘটনার পর দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ ও নিন্দার মুখে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও বিগত ২৩ বছরে সরকার সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে নি।